গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা চলো লং মার্চ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মো. আমানতের জানাজা আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় চাষারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আমানতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় অংশগ্রহণ করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, সমন্বয়ক সারজিল আলমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। জানাজায় শত শত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানাজায় অংশগ্রহণ শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া সাংবাদিকদের বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আন্দোলনে ঢাকায় যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের মো. আমানত যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। হাসপাতালের মর্গে তার লাশ পড়েছিল। তার স্বজনরা আজ তাকে শনাক্ত করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন। আমানতের মত ছাত্র-জনতার বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচার মুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাদের এই ঋণ আমরা কোনদিন ভুলবো না।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। আজ দেশে উস্কানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু জনগণ তা রুখে দিয়েছে। এই পরাজিত শক্তি যদি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে দেশের জনগণ তা রুখে দিবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের নির্দেশে যাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গায় মানুষের কথা ও ছাত্রদের কথাগুলো তুলে ধরবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অন্যতম আরেক সমন্বয় সারজিস আলম জানান, শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেয়ার জয় আমেরিকায় বসে বাংলাদেশের নির্বাচন করার জন্য ভারতকে চাপ দিতে বলেছেন। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এদেশের নির্বাচন কবে কখন হবে সেটি এদেশের মানুষই ঠিক করবে।
শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমন্বয়ক সারজিল আলম বলেন, এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার। একই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে তাদের কর্মস্থলে ফিরে আসার পথ করে দিতে হবে এবং ফিরে আসলে স্বাগত জানাতে হবে। আমি অনুরোধ করবো রবিবার থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মো. আমানত সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা। সে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাশ করার পর নারায়ণগঞ্জ কলেজে পড়াশোনা করেন। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে আমানত নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্রদলের এজিএস নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আন্দোলনে শুরুতেই অগ্রণী ভূমিকা রেখে ফেসবুকসহ রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
বিল্লাল হোসাইন/এমএ/