নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্পূর্ণ অটোমেশন করা হবে। এতে কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং আরও সহজ হবে। বন্দরে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। হয়রানি ও দূর্নীতি কমে যাবে।
মঙ্গলবার ( ৮ অক্টোবর) বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ সব কথা বলে তিনি।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে বন্দরের ইয়ার্ডে ২০ বছরের পুরনো কনটেইনার পড়ে আছে। ১৫ বছর আগের গাড়ি পড়ে আছে। কাস্টমস কী করছে আমি জানি না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কনটেইনারের নিলাম করা দরকার। আটকে থাকা কনটেইনারগুলো ডেলিভারি দিয়ে ইয়ার্ড খালি করা দরকার। পুরনো কনটেইনার জায়গা দখল করে আছে এটি বড় সমস্যা। আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো। যেন কাস্টমস হাউস দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা করে।
এ বন্দরের সমস্যা দূর করতে হলে শুধু পোর্ট নয় আরও অনেকগুলো সংস্থাকে এক সঙ্গে উদ্যেগ নিতে হবে উল্লেখ করে নৌ উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও সচল করতে হলে অটোমেশন করতে হবে। আমাদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের বিনিয়োগের লোক আছে। তারাই কাজ করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বে- টার্মিনাল প্রকল্প আমি পরিদর্শন করেছি। এ মূহুর্তে বে-টার্মিনাল সম্পর্কে কিছু বলবো না। আপাতত এখানে কোন সমস্যা নেই । এখানে বিনিয়োগ হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বসে আসে বেটার্মিনালে বিনিয়োগের জন্য। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বিনিয়োগ করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, ২২ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক বেআইনি কাজ হয়েছে। সেগুলো বন্ধ করা হবে। উন্নয়ন প্রকল্পসহ সবকিছু ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে হবে। এখন আর ভাগবাটোয়ারা করে খাওয়ার সুযোগ নেই।
বেটার্মিনাল নিয়ে নৌ উপদেষ্টা বলেন, বেটার্মিনাল হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে। দেশের আরও বিদেশি বিনিয়োগকারী আসুন। আমরা বিদেশিদের উৎসাহিত করবো। সিংগাপুর, সৌদি আরব, নেদারল্যান্ড, দুবাই আমাদের বন্দরে বিনিয়োগ করছে। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। বেটার্মিনালে জেনারেল কার্গো চট্টগ্রাম বন্দরের আন্ডারে থাকবে। আগামি সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক আছে। দেশের জন্য যেটা ভাল সেটা আমরা করবো। ডাইরেক্ট বিনিয়োগের জন্য অনেক দেশ বসে আছে। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। আমার দেশের ক্ষতি হবে এমন কিছুই করা হবে না।
দূর্নীতি বন্ধ করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বড় দূর্নীতি বন্ধ করলে ছোট দূর্নীতিও বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে (বন্দরে) অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেকজনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ বন্দরকে জঞ্জালমুক্ত করতে হবে, বন্দরকে আরও দ্রুত তম করতে হবে। দূর্নীতিমুক্ত করতে হবে, টেন্ডারে অনিয়ম হয়েছে এখন থেকে ওপেন টেন্ডার হবে। বহুবছর ধরে বিনা রেজিস্টেশনে গাড়ি চলছে। বিআরটিএকে বলবো সেই গাড়িগুলো বন্ধ করতে। সব কিছু নিয়মের মধ্যে চলে আসতে হবে। সব কিছু নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে চলতে হবে। যেখানে দূর্নীতি হবে সেখানে আপনারা লিখবেন, বলবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রাম বন্দর দেখতে আসলাম, শিখতে আসলাম, বুঝতে আসলাম। আস্তে আস্তে বন্দরের সব সমস্যা সমাধান হবে। আমি তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে ঘুরে দেখেছি। সমস্যাগুলো দূর করতে সময় লাগবে। ইক্যুইপমেন্ট যা আসছে সব গুলোর সঠিক ব্যবহার হবে। দেশের স্থলবন্দরগুলোতেও অনেক অনিয়ম চলছে। সব দূর করা হবে। সমাধান হতে সময় লাগবে। দুই মাসের তো সম্ভব না। ২২ মাস সময় দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বিদেশি অপারেশনাল সংস্থা বেশ কিছু ইক্যুইপমেন্ট এনেছেন। তারা কাজ শুরু করেছে। আমাদেরও কিছু ইক্যুইপমেন্ট আছে। আমরা মাত্র ১৩শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু আগামি ২২ বছরে আমাদের আয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।
আবদুস সাত্তার/এমএ/