ফরিদপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারী ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় তার খালাতো ভাই পরিচয়ে মামলা করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সাবেক নেতা।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মৎস্যমন্ত্রী আবদুর রহমান ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ ১২০ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ জনকে। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট বাড্ডা থানা এলাকায় গুলিতে নিহত হন সিরাজুল। তার বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলায়। এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন ফরিদপুরের সালথার খলিশাডুবি গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান লাবলু। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তিনি নিজেকে নিহত সিরাজুলের খালাতো ভাই দাবি করেন। তবে সিরাজুলের বাবা তাকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন।
সিরাজুল ফরিদপুর সদরের তায়জদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে। সিরাজুল ঢাকায় নিহত হলেও মামলায় ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলার ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সিরাজুলের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় বাড্ডা থানায় কোনো মামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এখন শুনছি, হাসিবুল হাসান লাবলু নামের এক ব্যক্তি সিরাজুলের খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। হাসিবুলকে আমি চিনি না।’
ফরিদপুরের আসামিদের মধ্যে ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর, ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি কাজী আবদুস সোবাহান, জেলা হিন্দু-বৌ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব সত্যজিৎ মুখার্জি, আওয়ামী লীগ নেতা মোকাররম মিয়া বাবু, ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা, শহর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রাম দত্ত, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সুকেশ সাহা, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শীতাংশু মিত্র (কিংকর), একই পরিবারের চার ভাই ব্যবসায়ী দিপু ঘোষ, চঞ্চল ঘোষ, সজল ঘোষ, কাজল ঘোষ ও নিলয় সরকারসহ ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এরই মধ্যে তাদের কারও কারও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন বাদী।
মামলার আসামি কাজল ঘোষ খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে আমাদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে তারা আমাদের চার ভাইকে হত্যা মামলায় আসামি করেছে। আমরা সরকারের কাছে এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব সত্যজিৎ মুখার্জি বলেন, তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার নথি পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি গত ৫ আগস্ট ফরিদপুরে ছিলাম। কিন্তু বাদী আমাকে আসামি করেছেন। আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার সব কাগজপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
মামলার বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু বলেন, তিনি নিহত সিরাজুলের খালাতো ভাই। সিরাজুলের বাবার অনুমতি নিয়েই মামলা করেছেন। তবে মামলায় ঢাকার বাইরের লোকদের আসামি করা ঠিক হয়নি।