ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

স্বাস্থ্য খাতের স্থবিরতা নিরসনে ৭ দফা দাবি ড্যাবের

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
স্বাস্থ্য খাতের স্থবিরতা নিরসনে ৭ দফা দাবি ড্যাবের
স্বাস্থ্যখাতের স্থবিরতা নিরসনে ৭ দফা দাবি জানিয়ে প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। ছবি: খবরের কাগজ

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বেশ কিছুদিন ধরে চলা স্থবিরতা নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিনের অপসারণসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ন্যায্য দাবিগুলো মানা না হলে চিকিৎসক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামীতে আন্দোলন বিস্তৃত করা হবে বলেও হুঁশিয়ার দেন সংগঠনটির নেতারা।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্থবিরতা ও ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতাকারী পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন এবং চিকিৎসক, কর্মকর্তাদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানির প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম। 

সংবাদ সম্মেলনে ডা. রোবেদ আমিনের পেশাগত অসংগতি ও দুর্নীতি তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্য আবদুস সালাম বলেন, ‘চিকিৎসকরা এ দেশের সচেতন নাগরিক। এ দেশের ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের আত্মত্যাগ, ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগ যেমন আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিয়েছিল তেমনি এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চিকিৎসক সমাজ ও মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এতে ডা. সজীব সরকারসহ আটজন চিকিৎসক শহিদ হন।’

তিনি বলেন, ‘ড্যাবের চিকিৎসকসহ ভিন্নমত পোষণকারী সব চিকিৎসক কর্মকর্তা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের জুলুম, নির্যাতন, পদোন্নতি বঞ্চনা, বদলি হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় গত ১৬ বছর অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অনেকের চাকরিচ্যুত হয়েছেন, নির্যাতনের কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তার পরও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ড্যাবের চিকিৎসকরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ড্যাব এই আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিয়ে এবং পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সারা দেশে আহত হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা, জরুরি অপারেশন ও পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে, যা এখনো চলমান রয়েছে।’

৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে ড্যাব শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানায় এবং স্বাস্থ্য খাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। 

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসকরা এখনো ঢাকা মেডিকেল, বিএসএমএমইউসহ সব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে স্বপদে বহাল রয়েছে। আমরা চিকিৎসকরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাতকে পুনর্গঠন এবং দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের অপসারণ এবং তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকরা আশা করেছিলাম, সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী ও বঞ্চিত চিকিৎসকদের যোগ্যতা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, হাসপাতালের পরিচালক এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করে একটি আস্থাশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন। কিন্তু এক মাস পার হলেও তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। বরং শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণকারী, দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের পদায়ন করার মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।’

আবদুস সালাম আরও বলেন, ‘৩ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করে ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক।’

স্বাস্থ্য খাতে স্থবিরতা ও সংকট নিরসনে ৭ দাবি হলো- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদের অযোগ্য দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদের দোসর ডা. রোবেদ আমীনসহ অন্য সুবিধাপ্রাপ্ত ও ফ্যাসিবাদের দোসর যাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও অন্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে হবে। 

আহত ছাত্র জনতাকে যারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে (বিএসএমএমইউ থেকে শুরু করে সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাতিল, শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সব চিকিৎসক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

অতি দ্রুত বৈষম্যের শিকার পদোন্নতিযোগ্য সব চিকিৎসক ও কর্মচারীকে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে এবং বঞ্চিত, দক্ষ, যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাস্থ্য প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে। 

বিগত দীর্ঘ ১৬ বছর সময়ে স্বাস্থ্য খাতে যত দুর্নীতি হয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউটগুলো, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের পদায়ন করতে হবে। 

প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে সেই আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ভবিষ্যতেও কোনোভাবেই হয়রানিমূলক বদলি করা যাবে না। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ও চিকিৎসাসেবার গুণগতমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি দ্রুত বাতিল করে চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনঃগঠনের জোর দাবি জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, ‘যারা রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। মাথাব্যথা হলে তো মাথা কেটে ফেলা যায় না। রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে আমরা। তবে আমরা কলুষিত রাজনীতি কখনোই চাই না। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। সেজন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা চাই না। যদি কেউ স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান নেন আমরা তার বিরুদ্ধে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবেন এবং স্বাস্থ্য খাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিশ্চিত করবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. এম এ সেলিম, সহসভাপতি ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. আবদুল কেনান, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. আদনান হাসান মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. সাইফুদ্দিন ঝিন্টু, দপ্তর সম্পাদক ডা. এরফান আহমেদ সোহেল, ডা. নিউটন, ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ডা. জাভেদ হোসেন, এম এ কামাল, ডা. রন্জু, ফারুক, ডা. মাসুদ রানা, ডা. এস এম মাসুম বিল্লাহ, ডা. ফরিদ উদ্দিন, ডা. ওহীদুজ্জামান ইমন, ডা. সৌরভ, ডা. শামসুল, ডা. আতিক, ডা. এ এস এম রাকিবুল ইসলাম আকাশ প্রমুখ।

শফিকুল ইসলাম/সাদিয়া নাহার/অমিয়/

সিলেটে কবর থেকে তোলা হচ্ছে আন্দোলনে নিহত ৯ জনের লাশ

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১১ পিএম
সিলেটে কবর থেকে তোলা হচ্ছে আন্দোলনে নিহত ৯ জনের লাশ

সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ৯ জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৬টি ও বিয়ানীবাজারের ৩টি লাশ রয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ হলে যেকোনো সময় ওই লাশগুলো তোলা হবে। এরই মধ্যে ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে লাশ তোলার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খবর ইউএনবির।

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-২-এর বিচারক আবিদা সুলতানা মলি ৬ জনের লাশ তোলার আদেশ দেন।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগের দিন গোলাপগঞ্জে ছাত্র-আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৪), দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ জয় (২০), শিলঘাট গ্রামের কায়ছার আহমদের ছেলে সানি আহমদ (২২), বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০), দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩) ও ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছউদ্দিন (৩৫)।

এসব ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় পৃথকভাবে ৬টি মামলা হয়। পরে আরও একটি মামলা করা হয় আদালতে। সবকটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ কয়েকশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, সরকার পতনের কারণে ওই সময় লাশগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়নি। যে কারণে ময়নাতদন্তের জন্য মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ তোলার আদেশ দিয়েছেন।

এদিকে বিয়ানীবাজারে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিয়ানীবাজার থানা চত্বরে বিজয় উল্লাসের সময় উৎসুক জনতা বিয়ানীবাজার থানায় অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। ওই সময় বিয়ানীবাজার পৌর শহরে ঘটনাস্থলেই ৩ জন মারা যান, আহত হন আরও অন্তত ১০ জন।

এ ঘটনায় নিহত তারেক আহমদ, রায়হান আহমদ ও ময়নুল ইসলামকে ৬ আগস্ট দিনের বিভিন্ন সময়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেন স্বজনরা। এসব ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় ৩টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। নিহত ৩ জনের লাশ দ্রুত উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, আদালত থেকে নিহতদের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তাদের লাশ উত্তোলন করা হবে।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী জানান, আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা হাতে আসেনি। পুরো আদেশ পাওয়ার পরই লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, ছেলে তারেক আহমদ নিহতের ঘটনায় ২০ আগস্ট বাদী হয়ে প্রথম মামলা করেন তার মা ইনারুন নেসা। যদিও ২২ আগস্ট এ মামলা প্রত্যাহারে সিলেটের আদালতে আবেদন করেন তিনি। যেখানে উল্লেখ করেন আসামি কাউকেই তিনি চেনেন না। অপরদিকে একই সময়ে নিহত আরও দুইজন রায়হান আহমদ এবং ময়নুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা বাদী হয়ে পৃথক দুটি হত্যা মামলা করেন।

 

বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আভাস

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৬ পিএম
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আভাস

বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ দিকে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শেরপুরে ভুগাই নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে ভুগাই-কংস নদীসংলগ্ন শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও জিঞ্জিরাম নদীসংলগ্ন জামালপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ ছাড়ছে না রাজধানীবাসীর। বিভিন্ন স্থানে জলজট আর সড়কে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে তাদের।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীতে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদদের হিসাবে এটি মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের নিম্ন এলাকায় শুক্রবারও ছিল জলাবদ্ধতা। ফলে পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ হয়। একই সঙ্গে বৃষ্টির কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থায়ও বিঘ্ন ঘটে। ফলে বিভিন্ন মোড়গুলোতে তৈরি হয় যানজটের। 

শুক্রবার ঢাকার বাইরে আবহাওয়ার ৪২টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনে রেকর্ড করা হয় বৃষ্টিপাত। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় টাঙ্গাইলে ২১১ মিলিমিটার। ময়মনসিংহে রেকর্ড করা হয় ১৪৯ মিলিমিটার। যা অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। 

৪ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শুক্রবার জানায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ভুগাই-কংস, সোমেশ্বরী ও জিঞ্জিরাম নদীগুলোর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভুগাই নদী শেরপুর জেলার নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়, ভুগাই-কংস, সোমেশ্বরী ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শেরপুরের ভুগাই নদীর ভাটিতে নেত্রকোনার কংস নদী এবং জামালপুরের জিঞ্জিরাম নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে ভুগাই-কংস নদীসংলগ্ন শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা এবং জিঞ্জিরাম নদীসংলগ্ন জামালপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পরবর্তী দুই দিনে নদীগুলোর পানি সমতল কমে যেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে।

বৃষ্টিপাতের তথ্য নিয়ে জানানো হয়, নাকুয়াগাঁও (শেরপুর) স্টেশনে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গাপুরে ১৩৫ মিলিমিটার, জামালপুরে ৯৭ মিলিমিটার, জারিয়াজাঞ্জাইল (নেত্রকোনা) ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বাড়তে পারে বাঘের সংখ্যা, সুন্দরবনে বাঘশুমারির ফল ঘোষণা ৮ অক্টোবর

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
বাড়তে পারে বাঘের সংখ্যা, সুন্দরবনে বাঘশুমারির ফল ঘোষণা ৮ অক্টোবর
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে। ১ হাজার ২০০-এর বেশি ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা শেষ হয়েছে। আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন বেস্টের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন অপেক্ষায় আছি কবে ফলাফলটা পাব। আশা করি, এবার বাঘ বাড়বে। বাঘ সুন্দরবনসহ প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। সচেতনতার কারণেই বাড়ছে বাঘের সংখ্যা। তবে প্রতি তিন বছর অন্তর কোটি টাকা ব্যয়ে বাঘ গণনা না করে এই টাকা দিয়ে উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে কাজ করলে আরও উপকৃত হবে।’ 

পরিবেশ রক্ষাবিষয়ক সংগঠন বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘খুলনা ফরেস্ট অফিস ২০১৫ ও ২০১৮ সালের পর তৃতীয়বারের মতো সুন্দরবনের বাঘ গণনা শুরু করেছিল ২০২২ সালে। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরে বাঘ গণনা ও সংরক্ষণবিষয়ক দুটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। আমরা জেনেছি সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী আইনজীবী মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, প্রতি তিন বছর অন্তর বাঘ গণনার জন্য কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এখানে বড় ধরনের অর্থ অপচয় হচ্ছে। বাঘ গণনার নামে লুটপাট হচ্ছে দেশের কোটি টাকা। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন বাঁচাতে ১০ বছর পর পর একবার গণনা করলে সুন্দরবনের ওপর চাপ কমবে।

সুন্দরবন পশ্চিম বনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, এর আগে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাঘ জরিপ হলেও এ বছর দেশীয় প্রযুক্তি ও দেশের অর্থায়নে খুলনার চারটি রেঞ্জেই ক্যামেরার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঘকে রক্ষার জন্য বাঘের কেল্লা নির্মাণ করা হচ্ছে সুন্দরবনে। ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের শুমারিতে ছিল ১১৪টি। সূত্র: ইউএনবি

 

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, আক্রান্ত ৩১৭ জন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, আক্রান্ত ৩১৭ জন

ডেঙ্গুতে শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৭ জন রোগী। তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রেরিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। 

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ ডা. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের হাসপাতালে ৩১৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২৭৩ জন সরকারি হাসাপাতালে এবং ৪৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে সব মিলিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭৩ জন। গত ১ অক্টোবর থেকে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪৩৮ জন, মৃত্যুর সংখ্যা ১৭৭ জন। ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৮৮ জন। 

অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি ১৬৪ জন। গত ১ অক্টোবর থেকে আক্রান্ত সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪৭ জন। মৃত্যু ১২৩ জন। ছাড়পত্রপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৮ জন। বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৫৬ জন।

শহিদ মিনারে সংখ্যালঘুদের গণসমাবেশ ৮ দফা দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
৮ দফা দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
ছবি: খবরের কাগজ

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গণসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট। দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও মন্দিরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ এবং পূর্বঘোষিত আট দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শুক্রবার এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) গণসমাবেশ বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। 

সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ ক্রান্তি দে বলেন, ‘আমাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে তা বন্ধের দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা নয়। আমরা কেবল অধিকারের জন্য এসেছি। আমরা এ দেশে নিরাপদে বাঁচতে চাই। সেই সঙ্গে অবিলম্বে আমাদের আট দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত প্রামাণিক বলেন, ‘যতদিন আমাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় না আনা হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা ভয় নিয়ে থাকব।’

অ্যাডভোকেট সুশান্ত অধিকারী বলেন, ‘সরকার পতনের পর থেকেই যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, লুটপাট শুরু হয়েছে তাতে বোঝা যায় এ দেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ! অনতিবিলম্বে বৈষম্য নিরসন করে আট দফার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ দেখতে চাই।’

অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, ‘পূর্বঘোষিত আট দফা দাবি না মানলে এবং দুর্গাপূজায় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

সমাবেশ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আট দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো: সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন; ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন; সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত ও বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা; দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ; সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ, প্রতিটি হোস্টেলের প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ ও সংস্কৃত পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবের প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান।

আরিফ জাওয়াদ/এমএ/