ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

লুট হওয়া ৫৩ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২৫

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম
লুট হওয়া ৫৩ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২৫
পুলিশ সদর দপ্তর

সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশসহ যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে এই অস্ত্র উদ্ধার করেছে। 

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো হলো রিভলবার ২টি, পিস্তল ১৮টি, রাইফেল ২টি, শটগান ১১টি, পাইপগান ১টি, শুটারগান ৬টি, এলজি ৩টি, বন্দুক ৩টি, একে ৪৭ ১টি, গ্যাসগান ১টি, চায়নিজ রাইফেল ১টি, এয়ারগান ১টি ও এসবিবিএল ৩টিসহ মোট ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এ সময় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলবে। যাদের কাছে চোরাই অস্ত্র পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ পাবেন ১৮ হাজার কর্মী

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম
মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ পাবেন ১৮ হাজার কর্মী
ছবি: পিআইডি

সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও টিকিট জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

শুক্রবার (৪ অক্টেবর) বিকেলে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। খবর ইউএনবি ও বাসসের।

এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য দেশের সব মানুষের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। একই সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও আন্তর্জাতিক সমাধানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর আগে এদিন বেলা ২টায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রথম ধাপে ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বিষয়ে অবিলম্বে মনোযোগ দেবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আমাদের শ্রমিক দরকার, তাদের আধুনিক দাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না; তারা বাংলাদেশ বা অন্য দেশের যেখানেই আসুক না কেন। আমি এখানকার মতো আগেও প্রকাশ্যে এ কথা বলেছি।’ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বাংলাদেশকে সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি বা বিদেশি- কারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেন।

আসিয়ান সংলাপে অংশীদার হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চান ড. ইউনূস

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালে আসিয়ানের আসন্ন সভাপতি পদে মালয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য মালয়েশিয়ার সক্রিয় ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছি।’

দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমের সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এই সফর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থনের স্বীকৃতি। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা উভয়েই দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোকে জোরদার করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আলোচনায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিপ্লব নজিরবিহীন গণ-আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাধীনতা ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়বিচারপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ মালয়েশিয়ার অবিচল সমর্থন ও সহযোগিতার প্রশংসা করি।’ অভিন্ন মূল্যবোধ, আস্থা ও জনগণের কল্যাণের স্বীকৃতির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস জানান, তারা সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি সমাধানের জন্য তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি আসিয়ান ফোরামে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে নিয়মিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।’ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় চতুর্থ যৌথ কমিশনের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোর দেন। তিনি জানান, তারা কৃষি, জ্বালানি, যোগাযোগ, সুনীল অর্থনীতি, বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করতে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ও সংকল্প ব্যক্ত করেছি।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে আনুমানিক আট লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বসবাস ও কাজ করেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ অভিবাসী হয়েছেন। 

‘পুরোনো বন্ধু’ ইব্রাহিমকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস জানান, তিনি তার পুরোনো বন্ধুকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে পেরে ‘অত্যন্ত আনন্দিত’, কারণ তারা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একে অপরকে চেনেন। ড. ইউনূস ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগ এবং পূর্ববর্তী সরকারের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও বলেন। তারা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকস্থলে যাওয়ার জন্য একই গাড়িতে ওঠেন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরটি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর এবং টেকসই বন্ধুত্বের অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’-এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার কোম্পানি ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

আরও জনশক্তি রপ্তানিতে সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাতে আরও জনশক্তি যেতে পারে, সে ব্যাপারে মালয়েশিয়ার সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই সহযোগিতা চান।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অর্থনীতি সংস্কার’ কর্মসূচিতেও মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতারও অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপতি। 

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষাৎকালে তারা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক, কারিগরি সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, শ্রমবাজারসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় করেন। 

বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের চারজন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সচিব, বাংলাদেশের নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার প্রমুখ তার সঙ্গে ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠক শেষে একটি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

লাল গালিচা সংবর্ধনা

দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে অতি সংক্ষিপ্ত সরকারি সফরে আনোয়ার ইব্রাহিম গতকাল শুক্রবার দুপুর ঢাকায় পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বেলা ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাকে গান স্যালুট ও গার্ড অব অনার দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি কয়েক ঘণ্টা কাটান। অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে হাই টি-এর আয়োজন করেন। মালয়েশিয়া বাংলাদেশে অষ্টম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি কোম্পানিসহ মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এখন শিক্ষাসহ আরও বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক।

সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ

বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে গতকাল সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ড. ইউনূস বলেছেন, পুরোনো বন্ধুকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগ এবং পূর্ববর্তী সরকারের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও বলেন ড. ইউনূস।

এরপর তারা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একই গাড়িতে উঠে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ভেন্যুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।  

এর আগে দুপুর ২টার দিকে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সূত্র : ইউএনবি

সালমান/

 

অপরাধ-দুর্নীতি : নিজাম হাজারীর নিজস্ব ‘স্টাইল’

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
অপরাধ-দুর্নীতি : নিজাম হাজারীর নিজস্ব ‘স্টাইল’
ফেনীর হেলিপোর্টসংযুক্ত নিজাম হাজারীর আলিশান বাড়ি। ইনসেটে নিজাম হাজারী। ছবি: খবরের কাগজ

অপরাধ-দুর্নীতিসহ জমি-বালুমহাল দখল, টেন্ডার-বাণিজ্য, সম্পত্তি দখল, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজিতে নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠা করেছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নিজাম হাজারী অল্প সময়ে হয়ে যান ফেনীর একক নিয়ন্ত্রণকর্তা। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর তার এসব অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ফেনীর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তার ছিল বিশ্বস্ত ১০ সহযোগী।

‘উড়ে’ এসে ‘জুড়ে’ বসেন নিজাম হাজারী

নিজাম উদ্দিন হাজারী। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ফেনী পৌরসভার মেয়র হন। এরপর ২০১২ সালে জেলার রাজনীতির অঘোষিত অভিভাবক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের হাত ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ থেকে তিনি বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে বসে তিনি নির্দেশ দিতে শুরু করেন বালুমহাল দখল, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জমি দখলের।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজাম হাজারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভোট ডাকাতি করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নিজাম হাজারীর থাকেননি। এর মধ্যে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন জেলার একমাত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে।

রাজনীতিতে তিনি জয়নাল হাজারীর হাত ধরে এলেও উত্থান চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের মাধ্যমে। ২০০১ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে জয়নাল হাজারী সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ফেনী আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসেন নিজাম হাজারী। তৈরি করেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। ফেনীতে ঢুকতে দেননি জয়নাল হাজারীকে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এই সাম্রাজ্য ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান নিজাম হাজারী।

জুলুম, নির্যাতনে নিজস্ব ‘স্টাইল’

২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্যে ফেনী শহরের একাডেমি রোডে ফুলগাজীর একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করে নিজ দলীয় ক্যাডাররা। সেই হত্যার অভিযোগ ওঠে নিজাম হাজারীসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু একরাম হত্যা নয়, ধর্মপুরের যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, বালিগাঁওয়ের জয়নাল মেম্বার, দাগনভূঞা স্বেচ্ছাসবক লীগ নেতা ফখরুল, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ নেতা ইফতি, ফেনী পৌর এলাকায় শাহ জালাল নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাসহ নিজদলীয় ১৪ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। শুধু হত্যা নয়, রাজনৈতিক মাঠে যারা নিজাম হাজারীকে সমর্থন করতেন না তাদের মামলা-হামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন এবং এলাকা থেকে বিতাড়িত করতেন।

ছনুয়ার ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা কাশেম বলেন, ‘আমি নিজাম হাজারীর অনুসারী না হওয়ার কারণে আমাকে অস্ত্রসহ পুলিশে দেন নিজাম হাজারীর অনুসারীরা। বেশ কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আমি বিদেশ চলে যাই।’

সোনাগাজীর মুতিগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা আজিম উদ্দিন নীল বলেন, ‘নিজাম হাজারীর নির্দেশে আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার ও ৮নং আমিরাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব নবী ফরহাদ। তারা আমাকে রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে এবং আমার পরিবারকেও হুমকি দেয়। পরে আমি নিঃস্ব হয়ে প্রবাসে চলে আসি।’

শুধু কাশেম ও আজিম নয়, জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নাবিদ আল নাহিদ, দাগনভূঞার সংগ্রাম, বক্স মাহমুদ ইউনিয়নের সম্রাট, ধর্মপুরের আক্রামুজ্জামান বাপ্পী, নাহিদ, সুমন, রনি, মির মিরু, তুমিন মিয়াজীসহ প্রায় ১ হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বিদেশ চলে যান।

রহস্যঘেরা সেই বাগানবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ অন্যের জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। এখানে ছিল হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট, লেক, পুল, থিয়েটার, আলাদা গেস্ট রুম, পার্কিং, কিচেন, ঝরনা ও বড় সুইমিংপুল। প্রচার আছে আঙিনায় সুসজ্জিত বাগানের গাছ ও ঘাস মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে। তার বাসার আসবাব আনা হয়েছে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া থেকে। এই বাগানবাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য হিসাব করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা।

এই বাগানবাড়ির জায়গা স্থানীয়দের কাছ থেকে জোর করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বাগানবাড়ির অধিকাংশ জায়গায় মানুষের কাছ থেকে জোর করে নিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নামমাত্র মূল্য পেয়েছেন। আবার কাউকে দলিল করার পর টাকা দিবে বললেও দেওয়া হয়নি। তবে যাদের জায়গা দখল করেছে তাদের কেউ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তার নিজ বাড়ির সব স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে সেখানে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন। নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে সেই জায়গা জোর করে দলিল করে নিয়ে তাকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা তার বাগানবাড়ি ভেঙে ফেলেন এবং আগুন লাগিয়ে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার বাড়ি হবে রাজপ্রাসাদ। এটি চিন্তা করলে তার কর্মীরাও প্রাসাদের কথা চিন্তা করবে। সেটি রাজনীতির জন্য খারাপ উদাহরণ।

রয়েছে শখের খামারবাড়ি

নিজাম হাজারীর বিলাসবহুল বাগানবাড়ির উত্তর পাশে ৭৮ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন খামারবাড়ি। চারপাশে গরু, ছাগল, মহিষ ও মুরগির খামার মধ্যখানে পুকুর। খামারবাড়িতে প্রবেশের দক্ষিণ পাশে একটি ঘরে লিখা রয়েছে ‘তালতলা বাগানবাড়ি’।

মসজিদ-বিদ্যালয়ের নামে ভূমি জবরদখল

ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরুল আমিন। চাকরিকালীন নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের টাকায় সংসারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এলাকায় ২৫ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। তবে ক্ষমতা ও আধিপত্যের তোড়ে সেই স্বপ্নও টেকেনি বেশি দিন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেই স্বপ্নের জমিও কেড়ে নেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এমন অভিযোগ শুধু নুরুল আমিনের নয় বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর, ডোমরা ও মরুয়ারচর ২ হাজার ৫০০ শতাংশ জমিতে লাল পতাকা টানিয়ে শত শত মানুষের স্বপ্ন দখল করে নেন তিনি।

ফেনীতে সম্পদের পাহাড়

বিলাসবহুল বাগানবাড়ি ও খামারবাড়ি ছাড়াও নিজাম হাজারীর অনেক জায়গাজমি ও বাড়ি রয়েছে মাস্টারপাড়ায়। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ৬টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি, ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি ও ২০০ বিঘা জায়গা রয়েছে তার। এর মধ্যে মাস্টারপাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনের ১০০ মিটার পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন ৭ তলাবিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। ঘাটলায় ভোট-কাচারি নামে ৭ তলা একটি বাড়ি রয়েছে তার। বাগানবাড়ির আগে ২টি, পরে ১টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া খামার বাড়িতে ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে।

বাগানবাড়ির সমানে রাস্তার পশ্চিম পাশে ৮০ বিঘা জমি, ঘাটলার সামনে ৩০ বিঘা জায়গা, কবরস্থানে ২০ বিঘাসহ আশপাশের মিলে প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব বাড়ি ও জায়গার বিষয়ে সত্যতা জানিয়েছেন বাড়ির দারোয়ান ও স্থানীয়রা। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামে তার নামে-বেনাম মার্কেট ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।

বিশ্বস্ত ছিলেন ১০ সহযোগী

২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিজাম উদ্দিন হাজারী। এরপর থেকে বিভিন্ন উপজেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী। তার আশপাশে আওয়ামী লীগের ১০ জন জনপ্রতিনিধিকে দেখা যেত সব সময়। স্থানীয় মানুষ তাদের ১০ খলিফা হিসেবে চিনতেন।

তারা হলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে স্বপন মিয়াজী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান ওরফে খোকন হাজারী, জেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্লাহ ওরফে শরীফ হাজারী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল ওরফে আদর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শম্ভু বৈষ্ণব, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার ওরফে সোহেল চৌধুরী, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার ওরফে লাল হারুন, জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন।

একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন এসব খলিফা।

এসব বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী ঠিকাদারিকাজে সম্পৃক্ত নেই। ঠিকাদারি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজাম হাজারী। ঠিকাদারি, বালুমহাল ও মাটির প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল বেশি। কারণ এগুলোতে ক্যাশ টাকা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, শুধু ঠিকাদারিতে পার্সেন্টেস নয়, জেলার সব কটি বালুমহাল, ইটভাটায় মাটি বিক্রি চলত তার নিয়ন্ত্রণে।

ফারুক হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, সড়কের ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজের জন্য নিজাম হাজারীকে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

‘চাঁদা’ আদায় ছিল নিয়মিত

সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যেমন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কাজের বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে ৭%, ১০% ও ১৫% পর্যন্ত অগ্রিম টাকা আদায় করতেন নিজাম হাজারী। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন গত কয়েক দিন শান্তিতে ঘুমাচ্ছি। পার্সেন্টেস দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। পার্সেন্টেস দেওয়া বন্ধ হলে সুনামের সঙ্গে কাজের মান ঠিক রাখতে পারব।

এ ছাড়া ফেনী শহরের সিএনজি অটোরিকশা থেকে পরিবহন নেতা হানিফ ও মানিকের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। মহীপালের বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন পরিবহন নেতা মোহাম্মদ আলী।

শহরের রাজাজি দীঘিরপাড়ে প্রায় ৩০০ দোকান অবৈধভাবে নির্মাণ করে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন তারই চাচাতো ভাই পৌর যুবলীগ নেতা রুবেল হাজারী। 

মহীপালে গণহত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’

গত ৪ আগস্ট মহীপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজাম হাজারীর নির্দেশে নির্বিচারে গুলি করে তার ক্যাডার বাহিনী। সেই গুলিতে ৭ জন নিহত হন। সেই হামলার নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজের দেখা যায় শুসেনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন বাবলু পেশাদার কিলারের মতো গুলি ছুড়ছে। এ ছাড়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, কাজীরবাগ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেঞ্চু করিম, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জানে আলম, জেলা যুবলীগ নেতা ইকবাল বাহার ফয়সালকে গুলি করতে দেখা যায়। 

ফেনী সদর উপজেলা পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাব (২১) পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজাম হাজারী সেদিন নির্দেশ না দিলে আমার ছেলে মারা যেত না। আমার ছেলের মৃত্যুর দায়ভার সম্পূর্ণ নিজাম হাজারীকে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা হয়েছে। তাকে ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ৪ আগস্টের ঘটনায় কারা জড়িত তাদের তালিকা প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

স্ত্রীর নামেও ছিল অস্ত্রের লাইসেন্স

নিজাম উদ্দিন হাজারী ২০১৪ সালে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য, নিজের নামে একটি করে পিস্তল ও রাইফেলের লাইসেন্স নেন। এর মধ্যে রাইফেলের লাইসেন্স নেন ২০১৬ সালে। পিস্তলের লাইসেন্স নেন ২০১৮ সালে। তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের নামেও ২০২০ সালে একটি রাইফেলের লাইসেন্স নেওয়া হয়। যদিও তিনি গৃহিণী।

নির্বাচনে ‘ফেনী স্টাইল’

গত ১৪ বছরে ফেনীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গত উপনির্বাচনে জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির মাত্র একজন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৫টি পৌরসভা একচেটিয়া আওয়ামী লীগের দখলে। এসব শুধু নিজাম হাজারীর একক নেতৃত্বের কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল। তিনি বলেন, পুরো জেলায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছিলেন নিজাম হাজারী। 

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনকে ঈদ মনে করেন নিজাম হাজারী। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে নিজাম হাজারী ও তার সহযোগীদের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার
ইমতিয়াজ সেলিম

নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপি জানায়, সেলিমের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া পল্লবী ও খিলগাঁও থানার আরও দুটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি তিনি।

তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন বলেও জানিয়েছে ডিএমপি। তাকে বিজ্ঞ আদালতে হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।

লাবনী/পপি/

ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
ঢাকায় পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় তাকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। 

এ সময় তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রথম শীর্ষ নেতা হিসেবে ঢাকা সফরে এসেছেন।

সাদিয়া নাহার/