ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

৪৮ নাগরিকের বিবৃতি জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি ধৃষ্টতাপূর্ণ

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম
জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি ধৃষ্টতাপূর্ণ
নাগরিক বিবৃতি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৪৮ নাগরিক। 

তারা বলেছেন, সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী গত ৩ সেপ্টেম্বর সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। আমরা তার এ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখাতে পরিকল্পিত প্রচার শুরু করেছে। মাত্র কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সবকিছু ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুমান করা যায়, অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সময়ে তার দলের ভূমিকার কথাই বুঝিয়েছেন। তিনি যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই বোঝাতে চেয়েছেন, তা আরও পরিষ্কার হলো জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী গত ৩ সেপ্টেম্বর সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে। আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয়, যেখানে যা খুশি তাই বলা। যে উদ্দেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, এর বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।

এতে বলা হয়, সবার মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে তরুণ, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-সেনা-পুলিশ সদস্যসহ সর্বস্তরের বিভিন্ন ধর্ম-জাতি-বর্ণ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ জীবনপণ লড়াইয়ে ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে স্বাধীন করেছিলেন। এর জন্য বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর জামায়াতসহ বিভিন্ন দলীয় ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষ নারী-পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের অগণিত ব্যক্তি ও পরিবারকে। সেই ইতিহাস এই দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষ মনে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও মনে রাখবে। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার কথা বলার অধিকার কিংবা দুঃসাহস কারোরই থাকার কথা নয়। আর জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েই বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনপণ লড়াইয়ের শপথ নিয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকে শহিদ হয়েছেন, অনেকে শারীরিক পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যে যুদ্ধ করেছেন, জাতীয় সংগীত ছিল তাদের প্রেরণার সার্বক্ষণিক উৎস। তাই জাতীয় সংগীতটি কার্যত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই লাখো শহিদের রক্তে নতুনভাবে আমাদের প্রাণের সংগীত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা। একে কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা গুমের শিকার হয়ে রাষ্ট্রীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গোপন আটক কেন্দ্র ‘আয়নাঘর’-এ দীর্ঘ আট বছর বন্দি ছিলেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের দাবিতে আমরা বরাবরই সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। আমরা চাই সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তাসহ যারা ‘আয়নাঘর’-এ আটক ছিলেন, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা সবাই ন্যায়বিচার যেন পান। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ন্যায়বিচারের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করবে। কিন্তু তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক। তাই যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেষ্টা করছেন কিংবা অসত্য তথ্য প্রচার করছেন, তাদের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরও বৃহৎ কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হব।

এতে বলা হয়, শত শত শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোরী-কিশোর ও জনতার প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতন্ত্রের যে বিজয় অর্জিত হলো, তাকে সংকীর্ণ দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো সাম্প্রদায়িক অথবা অন্য গোষ্ঠী যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সদা সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি উপাচার্য পারভীন হাসান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, সিনিয়র আইনজীবী তবারক হোসেন, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, লেখক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. সাদাফ নুর, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ড. নূর মোহম্মদ তালুকদার, নতুন দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাযহারুল ইসলাম বাবলা, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি এ এস এম কামালউদ্দিন, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিদুর রহমান লাল্টু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, এমএসএফের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহদাত আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজমুল হুদা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এম খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আজিজুল্লাহ ইমন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রিন্স আল মাসুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শায়লা শারমীন, মানবাধিকার কর্মী তাপসী রাবেয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজমীর হোসেন, মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা, মানবাধিকার কর্মী ও সংগীতশিল্পী বাপ্পী মাশেকুর রহমান, আদিবাসী অধিকার কর্মী হানা শামস আহমেদ, সাঙ্গাত’র কোর গ্রুপ মুক্তাশ্রী চাকমা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

 

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ড. ইউনূস বলেছেন, পুরোনো বন্ধুকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগ এবং পূর্ববর্তী সরকারের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও বলেন ড. ইউনূস।

এরপর তারা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একই গাড়িতে উঠে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ভেন্যুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।  

এর আগে দুপুর ২টার দিকে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সূত্র : ইউএনবি

সালমান/

 

অপরাধ-দুর্নীতি : নিজাম হাজারীর নিজস্ব ‘স্টাইল’

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
অপরাধ-দুর্নীতি : নিজাম হাজারীর নিজস্ব ‘স্টাইল’
ফেনীর হেলিপোর্টসংযুক্ত নিজাম হাজারীর আলিশান বাড়ি। ইনসেটে নিজাম হাজারী। ছবি: খবরের কাগজ

অপরাধ-দুর্নীতিসহ জমি-বালুমহাল দখল, টেন্ডার-বাণিজ্য, সম্পত্তি দখল, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজিতে নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠা করেছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নিজাম হাজারী অল্প সময়ে হয়ে যান ফেনীর একক নিয়ন্ত্রণকর্তা। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর তার এসব অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ফেনীর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তার ছিল বিশ্বস্ত ১০ সহযোগী।

‘উড়ে’ এসে ‘জুড়ে’ বসেন নিজাম হাজারী

নিজাম উদ্দিন হাজারী। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ফেনী পৌরসভার মেয়র হন। এরপর ২০১২ সালে জেলার রাজনীতির অঘোষিত অভিভাবক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের হাত ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ থেকে তিনি বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে বসে তিনি নির্দেশ দিতে শুরু করেন বালুমহাল দখল, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জমি দখলের।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজাম হাজারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভোট ডাকাতি করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নিজাম হাজারীর থাকেননি। এর মধ্যে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন জেলার একমাত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে।

রাজনীতিতে তিনি জয়নাল হাজারীর হাত ধরে এলেও উত্থান চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের মাধ্যমে। ২০০১ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে জয়নাল হাজারী সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ফেনী আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসেন নিজাম হাজারী। তৈরি করেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। ফেনীতে ঢুকতে দেননি জয়নাল হাজারীকে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এই সাম্রাজ্য ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান নিজাম হাজারী।

জুলুম, নির্যাতনে নিজস্ব ‘স্টাইল’

২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্যে ফেনী শহরের একাডেমি রোডে ফুলগাজীর একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করে নিজ দলীয় ক্যাডাররা। সেই হত্যার অভিযোগ ওঠে নিজাম হাজারীসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু একরাম হত্যা নয়, ধর্মপুরের যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, বালিগাঁওয়ের জয়নাল মেম্বার, দাগনভূঞা স্বেচ্ছাসবক লীগ নেতা ফখরুল, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ নেতা ইফতি, ফেনী পৌর এলাকায় শাহ জালাল নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাসহ নিজদলীয় ১৪ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। শুধু হত্যা নয়, রাজনৈতিক মাঠে যারা নিজাম হাজারীকে সমর্থন করতেন না তাদের মামলা-হামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন এবং এলাকা থেকে বিতাড়িত করতেন।

ছনুয়ার ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা কাশেম বলেন, ‘আমি নিজাম হাজারীর অনুসারী না হওয়ার কারণে আমাকে অস্ত্রসহ পুলিশে দেন নিজাম হাজারীর অনুসারীরা। বেশ কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আমি বিদেশ চলে যাই।’

সোনাগাজীর মুতিগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা আজিম উদ্দিন নীল বলেন, ‘নিজাম হাজারীর নির্দেশে আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার ও ৮নং আমিরাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব নবী ফরহাদ। তারা আমাকে রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে এবং আমার পরিবারকেও হুমকি দেয়। পরে আমি নিঃস্ব হয়ে প্রবাসে চলে আসি।’

শুধু কাশেম ও আজিম নয়, জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নাবিদ আল নাহিদ, দাগনভূঞার সংগ্রাম, বক্স মাহমুদ ইউনিয়নের সম্রাট, ধর্মপুরের আক্রামুজ্জামান বাপ্পী, নাহিদ, সুমন, রনি, মির মিরু, তুমিন মিয়াজীসহ প্রায় ১ হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বিদেশ চলে যান।

রহস্যঘেরা সেই বাগানবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ অন্যের জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। এখানে ছিল হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট, লেক, পুল, থিয়েটার, আলাদা গেস্ট রুম, পার্কিং, কিচেন, ঝরনা ও বড় সুইমিংপুল। প্রচার আছে আঙিনায় সুসজ্জিত বাগানের গাছ ও ঘাস মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে। তার বাসার আসবাব আনা হয়েছে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া থেকে। এই বাগানবাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য হিসাব করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা।

এই বাগানবাড়ির জায়গা স্থানীয়দের কাছ থেকে জোর করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বাগানবাড়ির অধিকাংশ জায়গায় মানুষের কাছ থেকে জোর করে নিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নামমাত্র মূল্য পেয়েছেন। আবার কাউকে দলিল করার পর টাকা দিবে বললেও দেওয়া হয়নি। তবে যাদের জায়গা দখল করেছে তাদের কেউ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তার নিজ বাড়ির সব স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে সেখানে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন। নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে সেই জায়গা জোর করে দলিল করে নিয়ে তাকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা তার বাগানবাড়ি ভেঙে ফেলেন এবং আগুন লাগিয়ে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার বাড়ি হবে রাজপ্রাসাদ। এটি চিন্তা করলে তার কর্মীরাও প্রাসাদের কথা চিন্তা করবে। সেটি রাজনীতির জন্য খারাপ উদাহরণ।

রয়েছে শখের খামারবাড়ি

নিজাম হাজারীর বিলাসবহুল বাগানবাড়ির উত্তর পাশে ৭৮ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন খামারবাড়ি। চারপাশে গরু, ছাগল, মহিষ ও মুরগির খামার মধ্যখানে পুকুর। খামারবাড়িতে প্রবেশের দক্ষিণ পাশে একটি ঘরে লিখা রয়েছে ‘তালতলা বাগানবাড়ি’।

মসজিদ-বিদ্যালয়ের নামে ভূমি জবরদখল

ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরুল আমিন। চাকরিকালীন নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের টাকায় সংসারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এলাকায় ২৫ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। তবে ক্ষমতা ও আধিপত্যের তোড়ে সেই স্বপ্নও টেকেনি বেশি দিন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেই স্বপ্নের জমিও কেড়ে নেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এমন অভিযোগ শুধু নুরুল আমিনের নয় বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর, ডোমরা ও মরুয়ারচর ২ হাজার ৫০০ শতাংশ জমিতে লাল পতাকা টানিয়ে শত শত মানুষের স্বপ্ন দখল করে নেন তিনি।

ফেনীতে সম্পদের পাহাড়

বিলাসবহুল বাগানবাড়ি ও খামারবাড়ি ছাড়াও নিজাম হাজারীর অনেক জায়গাজমি ও বাড়ি রয়েছে মাস্টারপাড়ায়। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ৬টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি, ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি ও ২০০ বিঘা জায়গা রয়েছে তার। এর মধ্যে মাস্টারপাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনের ১০০ মিটার পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন ৭ তলাবিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। ঘাটলায় ভোট-কাচারি নামে ৭ তলা একটি বাড়ি রয়েছে তার। বাগানবাড়ির আগে ২টি, পরে ১টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া খামার বাড়িতে ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে।

বাগানবাড়ির সমানে রাস্তার পশ্চিম পাশে ৮০ বিঘা জমি, ঘাটলার সামনে ৩০ বিঘা জায়গা, কবরস্থানে ২০ বিঘাসহ আশপাশের মিলে প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব বাড়ি ও জায়গার বিষয়ে সত্যতা জানিয়েছেন বাড়ির দারোয়ান ও স্থানীয়রা। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামে তার নামে-বেনাম মার্কেট ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।

বিশ্বস্ত ছিলেন ১০ সহযোগী

২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিজাম উদ্দিন হাজারী। এরপর থেকে বিভিন্ন উপজেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী। তার আশপাশে আওয়ামী লীগের ১০ জন জনপ্রতিনিধিকে দেখা যেত সব সময়। স্থানীয় মানুষ তাদের ১০ খলিফা হিসেবে চিনতেন।

তারা হলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে স্বপন মিয়াজী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান ওরফে খোকন হাজারী, জেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্লাহ ওরফে শরীফ হাজারী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল ওরফে আদর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শম্ভু বৈষ্ণব, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার ওরফে সোহেল চৌধুরী, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার ওরফে লাল হারুন, জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন।

একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন এসব খলিফা।

এসব বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী ঠিকাদারিকাজে সম্পৃক্ত নেই। ঠিকাদারি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজাম হাজারী। ঠিকাদারি, বালুমহাল ও মাটির প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল বেশি। কারণ এগুলোতে ক্যাশ টাকা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, শুধু ঠিকাদারিতে পার্সেন্টেস নয়, জেলার সব কটি বালুমহাল, ইটভাটায় মাটি বিক্রি চলত তার নিয়ন্ত্রণে।

ফারুক হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, সড়কের ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজের জন্য নিজাম হাজারীকে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

‘চাঁদা’ আদায় ছিল নিয়মিত

সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যেমন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কাজের বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে ৭%, ১০% ও ১৫% পর্যন্ত অগ্রিম টাকা আদায় করতেন নিজাম হাজারী। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন গত কয়েক দিন শান্তিতে ঘুমাচ্ছি। পার্সেন্টেস দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। পার্সেন্টেস দেওয়া বন্ধ হলে সুনামের সঙ্গে কাজের মান ঠিক রাখতে পারব।

এ ছাড়া ফেনী শহরের সিএনজি অটোরিকশা থেকে পরিবহন নেতা হানিফ ও মানিকের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। মহীপালের বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন পরিবহন নেতা মোহাম্মদ আলী।

শহরের রাজাজি দীঘিরপাড়ে প্রায় ৩০০ দোকান অবৈধভাবে নির্মাণ করে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন তারই চাচাতো ভাই পৌর যুবলীগ নেতা রুবেল হাজারী। 

মহীপালে গণহত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’

গত ৪ আগস্ট মহীপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজাম হাজারীর নির্দেশে নির্বিচারে গুলি করে তার ক্যাডার বাহিনী। সেই গুলিতে ৭ জন নিহত হন। সেই হামলার নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজের দেখা যায় শুসেনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন বাবলু পেশাদার কিলারের মতো গুলি ছুড়ছে। এ ছাড়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, কাজীরবাগ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেঞ্চু করিম, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জানে আলম, জেলা যুবলীগ নেতা ইকবাল বাহার ফয়সালকে গুলি করতে দেখা যায়। 

ফেনী সদর উপজেলা পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাব (২১) পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজাম হাজারী সেদিন নির্দেশ না দিলে আমার ছেলে মারা যেত না। আমার ছেলের মৃত্যুর দায়ভার সম্পূর্ণ নিজাম হাজারীকে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা হয়েছে। তাকে ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ৪ আগস্টের ঘটনায় কারা জড়িত তাদের তালিকা প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

স্ত্রীর নামেও ছিল অস্ত্রের লাইসেন্স

নিজাম উদ্দিন হাজারী ২০১৪ সালে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য, নিজের নামে একটি করে পিস্তল ও রাইফেলের লাইসেন্স নেন। এর মধ্যে রাইফেলের লাইসেন্স নেন ২০১৬ সালে। পিস্তলের লাইসেন্স নেন ২০১৮ সালে। তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের নামেও ২০২০ সালে একটি রাইফেলের লাইসেন্স নেওয়া হয়। যদিও তিনি গৃহিণী।

নির্বাচনে ‘ফেনী স্টাইল’

গত ১৪ বছরে ফেনীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গত উপনির্বাচনে জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির মাত্র একজন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৫টি পৌরসভা একচেটিয়া আওয়ামী লীগের দখলে। এসব শুধু নিজাম হাজারীর একক নেতৃত্বের কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল। তিনি বলেন, পুরো জেলায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছিলেন নিজাম হাজারী। 

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনকে ঈদ মনে করেন নিজাম হাজারী। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে নিজাম হাজারী ও তার সহযোগীদের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার
ইমতিয়াজ সেলিম

নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপি জানায়, সেলিমের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া পল্লবী ও খিলগাঁও থানার আরও দুটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি তিনি।

তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন বলেও জানিয়েছে ডিএমপি। তাকে বিজ্ঞ আদালতে হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।

লাবনী/পপি/

ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
ঢাকায় পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় তাকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। 

এ সময় তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রথম শীর্ষ নেতা হিসেবে ঢাকা সফরে এসেছেন।

সাদিয়া নাহার/

নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করে গেজেট প্রকাশ

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করে গেজেট প্রকাশ

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে ৮ সদস্যের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।  মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে সই করেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই কমিশনের প্রধান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে কাজ করবেন কমিশনের সদস্যরা। 

কমিশনের সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা, ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিশেষজ্ঞ জেসমিন টুলী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ওপিনিয়ন মেকার ড. জাহেদ-উর রহমান, শাসন প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন,  ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে কমিশন গঠন করা হয়েছে। 

কমিশন ৩ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।

শাহনাজ পারভীন/সাদিয়া নাহার/