সাভারের আশুলিয়ায় একদিন শান্ত থাকার পর আবারও বিক্ষোভের মুখে ৭৯টি তৈরি পোশাক কারখানায় ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একটি কারখানার গতকাল রবিবার রাতে শ্রমিক, স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রমিকসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।
তবে ডিইপিজেডসহ অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শিল্প পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, জামগড়া, জিরাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসেন। পরে অসন্তোষের মুখে কিছু কারখানা ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে শিমুলতলা এলাকায় ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডে শ্রমিক, স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউফোরিয়া গার্মেন্টসের একাধিক শ্রমিক বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে টিফিন বিল ও রাত্রিকালীন অতিরিক্ত ডিউটির টাকা বৃদ্ধি, ছুটি বাড়ানোসহ নানা দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। গত পরশু মিটিংয়ের সময় আমাদের এক সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে মারধর করে আহত করে কারখানার স্টাফরা। এ ছাড়া প্রতি মাসের ৭ তারিখ আমাদের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা করছে না মালিকপক্ষ।’
তারা বলেন, ‘এসবের দাবিতে রবিবার সকাল থেকেই কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করছিলেন শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধ করলে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ দাবি না মানায় শ্রমিকরা ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কারখানার ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। এতে আমাদের অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হন। লাঠির আঘাতে ইউসুফ নামে এক শ্রমিক মারা গেছে বলে শুনেছি। তবে সে কোন হাসপাতালে আছে সেটা বলতে পারছি না।’
র্যাব-৪ সিপিসি ২ সাভার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে তাদের (শ্রমিক) বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিকেলের দিকে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। তখন গার্মেন্টস থেকে তাদের ডিসপাস করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। পরবর্তী সময়ে তারা উত্তেজিত হয়। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সমর্থ হই।’
তিনি বলেন, ‘আজকে গার্মেন্টসে যারা দুষ্কৃতকারী ছিল তারা র্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমরা আগুনটা নেভাতে সমর্থ হই। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন, তবে এটা মেজর না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তে আমাদের ছায়াতদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছি, কারা এর পেছনে মদদদাতা এবং গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেব। এই গার্মেন্টস সেক্টরকে সচল রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।’
ইমতিয়াজ ইসলাম/অমিয়/