আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে রাজধানীতে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। নগরীর মূল সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা চলছে দেদারসে। রাজধানীর সব ফ্লাইওভারের অটোরিকশার অবাধ যাতায়াত। এমনকী বিমানবন্দরের টার্মিনালেও রিকশা ও অটোরিকশা ঢুকে পড়তে দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে যানজট নিয়ন্ত্রণ করে সড়কপথে গণমানুষের ভোগান্তি কমাতে ১১ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের আহ্বায়ক কেফায়েত উল্লাহ শাকিল ও যুগ্ম আহ্বায়ক অন্তু মুজাহিদ স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই সুপারিশ জানানো হয়।
নগরজীবনে ভোগান্তি কমাতে দ্রুততম সময়ে অবিলম্বে ১১ দফা সুপারিত বাস্তবায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন।
সুপারিশমালায় রয়েছে-
রাজধানীর প্রধান সড়কে রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশেষ করে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও কম গতির এসব বাহন প্রধান সড়ক অতিক্রম করবে না। তারা রাজধানীর অলিগলিতে চলাচল করবে। এক্ষেত্রে রিকশা বা অটোরিকশার চালকরা নিজেদের মধ্যে যাত্রী ভাড়ার টাকা শেয়ারিং করতে পারেন। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিবেন।
রাজধানীর প্রত্যেক রুটে বাসস্টপেজ মার্কিং করে দিতে হবে। স্টপেজের বাইরে কোনোভাবেই যাত্রী ওঠানো-নামানো না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ইউটার্ন নেওয়ার সময় সড়কের মোড়ে মোড়ে কোনো যাত্রীবাহী বাস থামবে না এবং যাত্রীও ওঠানো-নামানো যাবে না। সড়কে চলার সময় বাসে বাসে ধাক্কাধাক্কি বা ওভারটেক করা যাবে না৷
বাস মালিকরা পরিবহনের চালকদের ওপর আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারবেন না। তাদের বেতন নির্ধারণ করে দিতে হবে। কোনো ধরনের ভোগান্তি ও আর্থিক অনিময় ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে ওয়েবিলের নামে যাত্রী ভোগান্তি বন্ধ করতে হবে।
বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলাপ করে ফিটনেসবিহীন সব বাস ডাম্পিংয়ে পাঠাতে হবে এবং যেসব পুরনো লক্কর-ঝক্কর বাস সেগুলো রাজধানীর বাইরে পাঠিয়ে দিতে হবে। ঢাকার জন্য সব রুটে নতুন ও আধুনিক বাস নামাতে হবে। তবে তা হতে হবে এসি ও নন-এসি। সেক্ষেত্রে পরপর দুটি সাধারণ বাসের পর একটি এসি বাস সড়কে চলতে পারে। এসি বাস থাকলে অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারেও নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ কমবে।
অফিস সময়ে বড় বড় শপিংমল ও বিপণিবিতান বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিকেল ৪টা থেকে রাত ২টা বা ৩টা পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য শপিংমল, বিপনীবিতান খোলা রাখা যেতে পারে। এতে অফিসগামী যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়া কিছুটা স্বস্তিতে ও নির্ধারিত সময়ে তাদের কর্মস্থলে যেতে পারবেন।
মূল সড়কগুলোর ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারী চলাচলের উপযোগী করে দিতে হবে; যাতে করে ২-৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন। সড়কের পাশের দোকান, হাসপাতাল বা শপিংমলের কোনো মালামাল, পরিবহন ফুটপাতে রাখা যাবে না।
একই সঙ্গে রাজধানীর সব হকারকে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের জন্য সড়কের বিকল্প হিসেবে সরকারি-বেসরকারি অফিস ছুটির পর ওইসব এলাকায় বিকেল ৪টা বা ৫টার পর থেকে উন্মুক্ত বাজার বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
রাজধানীর সব ফুটওভারব্রিজ অপসারণ করতে হবে। কেননা, এটা সব মানুষের ব্যবহারের উপযোগী নয়। বিশেষ করে, নারী, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বৃদ্ধা, অসুস্থ ব্যাক্তিদের চলাচলের উপযোগী নয়। সেক্ষেত্রে পথচারী চলাচলে সড়কে জেব্রাক্রসিং মার্কিং নিশ্চিত করতে হবে।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকা সব ট্রাফিকবক্স অপসারণ করতে হবে। কারণ, এসব ট্রাফিক বক্সের কারণে মানুষকে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসতে হয়, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ট্রাফিক সদস্যদের জন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে ৬ ঘণ্টায় নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে ২টা ও দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন হিসেবে পার্টটাইম ট্রাফিক পুলিশে যুক্ত করা যেতে পারে।
রাজধানীর সব মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল থেকে হাইড্রলিক হর্ণ অপসারণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস নামানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
জয়ন্ত সাহা/অমিয়/