ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

সিইসি-ইসি নিয়োগে বিদ্যমান আইন ত্রুটিপূর্ণ, সংস্কারের তাগিদ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
সিইসি-ইসি নিয়োগে বিদ্যমান আইন ত্রুটিপূর্ণ, সংস্কারের তাগিদ
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ শীর্ষক এক পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনরা

বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিদ্যমান আইনে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনেরা। নির্বাচন কমিশনারদের দায়মুক্তির বিধানযুক্ত ২০২২ সালে প্রণীত আইনটি দ্রুত সংস্কার করে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নির্মোহ সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি ও নতুন ইসি গঠনের তাগিদ দিয়েছেন তারা। নিরপেক্ষ কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকার ছাড়া এ দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ শীর্ষক এক পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক সংস্থা ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে নীতি প্রস্তাব তুলে ধরে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির মুখ্য পরিচালক ডা. মো আবদুল আলিম।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই শুরু হয়। সেই লক্ষ্যে ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারের প্রভাবমুক্ত রাখতে তিনি সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। 

সুপারিশগুলো হলো-

১. প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ পুনর্লিখন বা একটি নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনটি স্থগিত করা; অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে সরকারি এবং নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় পেশাদারদের নিয়ে। 

২. ইসি নিয়োগের যোগ্যতার মানদণ্ডে পেশাদারত্ব, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, নৈতিক সততা, পূর্ববর্তী চাকরিতে বুদ্ধিবৃত্তিক সততা, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা-দক্ষতা, চারিত্রিক স্বাধীনতা ও শক্তি, সব নির্বাচনি অংশীজনের কাছে সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা এবং একটি বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রাখার সংকল্প থাকা।

৩. ইসি নিয়োগ আইনে একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং ব্যাপকভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যার মধ্যে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সব স্তরে নাম প্রকাশ এবং নাগরিকদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ, কর্মকাণ্ড, যোগাযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, আন্তরিক ও সহজ-সরল হতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব তথ্য সব পর্যায়ে জানাতে হবে।

৪. আইনে একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং ব্যাপকভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যার মধ্যে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সব স্তরে নাম প্রকাশ এবং নাগরিকদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ, কর্মকাণ্ড, যোগাযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, আন্তরিক এবং সহজ-সরল হতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব তথ্য সব পর্যায়ে অবহিত করতে হবে।

৫. নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এমন একটি পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও একধরনের সহমত নিশ্চিত করে।

আলোচনায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি বিদ্যমান আইনেও নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কিন্তু আমরা দেখেছি কমিশনের দায়িত্বে যারা থাকেন তারা সেই ক্ষমতা সঠিক ও সৎভাবে প্রয়োগ করেন না। এ কারণে কেবল ভালো কমিশন গঠন করেই ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। তার জন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ও সরকারের সদিচ্ছা। আর সেটার জন্য অবশ্যই নিরপেক্ষ বা অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন। কারণ বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’ 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দায়মুক্তির বিধান যুক্ত করে ২০২২ সালে প্রণীত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যে আইন, তাতে যাকে খুশি তাকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এর ফলে আগের নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করেছে, যা সংবিধানের লঙ্ঘন। রাজনৈতিক ঐকমত্য ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে তার কমিটি প্রস্তাব করবে বলেও জানান এই বিশ্লেষক।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আগামীর নির্বাচন কমিশনে তিনি নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দেখতে চান। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি হতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব স্তরের প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে। বিতর্কিত ২০২২ সালের ইসি গঠনের আইন বাদ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে পাওয়া নাম নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলের কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। কারণ যদি সরকার, দল ও রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক না হয়, শুধু নিরপেক্ষ কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। পরিবর্তন জরুরি।’

সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের পক্ষে মত দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটি করার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটি সংস্কার করা। কারণ বিদ্যমান আইনে নির্দিষ্ট দলের প্রভাব/পক্ষপাত সুযোগ রয়েছে। এমনভাবে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতেও কোনো সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।’

আলোচনায় সাত শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন গণ-অধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট নুরুল হক নূর। একই সঙ্গে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও আনুপাতিক হারে নির্বাচনব্যবস্থার কথা বলেন। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘বিচার বিভাগকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্ত করা উচিত হবে না। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।’ 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, ‘কোনো কমিশনার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে তাকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ 

এ ছাড়া আলোচনায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বক্তব্য রাখেন।

ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এই পলিসি ডায়ালগে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, গণ-অধিকার পরিবষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসহ ১০ দলের নেতারা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল. ওল্ডস। সঞ্চালনা করেন প্রফেসর ড. রওনক জাহান।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ড. ইউনূস বলেছেন, পুরোনো বন্ধুকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগ এবং পূর্ববর্তী সরকারের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও বলেন ড. ইউনূস।

এরপর তারা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একই গাড়িতে উঠে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ভেন্যুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।  

এর আগে দুপুর ২টার দিকে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সূত্র : ইউএনবি

সালমান/

 

অপরাধ-দুর্নীতি : নিজাম হাজারীর নিজস্ব ‘স্টাইল’

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
অপরাধ-দুর্নীতি : নিজাম হাজারীর নিজস্ব ‘স্টাইল’
ফেনীর হেলিপোর্টসংযুক্ত নিজাম হাজারীর আলিশান বাড়ি। ইনসেটে নিজাম হাজারী। ছবি: খবরের কাগজ

অপরাধ-দুর্নীতিসহ জমি-বালুমহাল দখল, টেন্ডার-বাণিজ্য, সম্পত্তি দখল, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজিতে নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠা করেছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নিজাম হাজারী অল্প সময়ে হয়ে যান ফেনীর একক নিয়ন্ত্রণকর্তা। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর তার এসব অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ফেনীর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তার ছিল বিশ্বস্ত ১০ সহযোগী।

‘উড়ে’ এসে ‘জুড়ে’ বসেন নিজাম হাজারী

নিজাম উদ্দিন হাজারী। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ফেনী পৌরসভার মেয়র হন। এরপর ২০১২ সালে জেলার রাজনীতির অঘোষিত অভিভাবক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের হাত ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ থেকে তিনি বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে বসে তিনি নির্দেশ দিতে শুরু করেন বালুমহাল দখল, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জমি দখলের।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজাম হাজারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভোট ডাকাতি করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নিজাম হাজারীর থাকেননি। এর মধ্যে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন জেলার একমাত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে।

রাজনীতিতে তিনি জয়নাল হাজারীর হাত ধরে এলেও উত্থান চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের মাধ্যমে। ২০০১ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে জয়নাল হাজারী সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ফেনী আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসেন নিজাম হাজারী। তৈরি করেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। ফেনীতে ঢুকতে দেননি জয়নাল হাজারীকে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এই সাম্রাজ্য ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান নিজাম হাজারী।

জুলুম, নির্যাতনে নিজস্ব ‘স্টাইল’

২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্যে ফেনী শহরের একাডেমি রোডে ফুলগাজীর একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করে নিজ দলীয় ক্যাডাররা। সেই হত্যার অভিযোগ ওঠে নিজাম হাজারীসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু একরাম হত্যা নয়, ধর্মপুরের যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, বালিগাঁওয়ের জয়নাল মেম্বার, দাগনভূঞা স্বেচ্ছাসবক লীগ নেতা ফখরুল, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ নেতা ইফতি, ফেনী পৌর এলাকায় শাহ জালাল নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাসহ নিজদলীয় ১৪ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। শুধু হত্যা নয়, রাজনৈতিক মাঠে যারা নিজাম হাজারীকে সমর্থন করতেন না তাদের মামলা-হামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন এবং এলাকা থেকে বিতাড়িত করতেন।

ছনুয়ার ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা কাশেম বলেন, ‘আমি নিজাম হাজারীর অনুসারী না হওয়ার কারণে আমাকে অস্ত্রসহ পুলিশে দেন নিজাম হাজারীর অনুসারীরা। বেশ কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আমি বিদেশ চলে যাই।’

সোনাগাজীর মুতিগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা আজিম উদ্দিন নীল বলেন, ‘নিজাম হাজারীর নির্দেশে আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার ও ৮নং আমিরাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব নবী ফরহাদ। তারা আমাকে রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে এবং আমার পরিবারকেও হুমকি দেয়। পরে আমি নিঃস্ব হয়ে প্রবাসে চলে আসি।’

শুধু কাশেম ও আজিম নয়, জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নাবিদ আল নাহিদ, দাগনভূঞার সংগ্রাম, বক্স মাহমুদ ইউনিয়নের সম্রাট, ধর্মপুরের আক্রামুজ্জামান বাপ্পী, নাহিদ, সুমন, রনি, মির মিরু, তুমিন মিয়াজীসহ প্রায় ১ হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বিদেশ চলে যান।

রহস্যঘেরা সেই বাগানবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ অন্যের জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। এখানে ছিল হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট, লেক, পুল, থিয়েটার, আলাদা গেস্ট রুম, পার্কিং, কিচেন, ঝরনা ও বড় সুইমিংপুল। প্রচার আছে আঙিনায় সুসজ্জিত বাগানের গাছ ও ঘাস মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে। তার বাসার আসবাব আনা হয়েছে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া থেকে। এই বাগানবাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য হিসাব করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা।

এই বাগানবাড়ির জায়গা স্থানীয়দের কাছ থেকে জোর করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বাগানবাড়ির অধিকাংশ জায়গায় মানুষের কাছ থেকে জোর করে নিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নামমাত্র মূল্য পেয়েছেন। আবার কাউকে দলিল করার পর টাকা দিবে বললেও দেওয়া হয়নি। তবে যাদের জায়গা দখল করেছে তাদের কেউ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তার নিজ বাড়ির সব স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে সেখানে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন। নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে সেই জায়গা জোর করে দলিল করে নিয়ে তাকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা তার বাগানবাড়ি ভেঙে ফেলেন এবং আগুন লাগিয়ে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার বাড়ি হবে রাজপ্রাসাদ। এটি চিন্তা করলে তার কর্মীরাও প্রাসাদের কথা চিন্তা করবে। সেটি রাজনীতির জন্য খারাপ উদাহরণ।

রয়েছে শখের খামারবাড়ি

নিজাম হাজারীর বিলাসবহুল বাগানবাড়ির উত্তর পাশে ৭৮ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন খামারবাড়ি। চারপাশে গরু, ছাগল, মহিষ ও মুরগির খামার মধ্যখানে পুকুর। খামারবাড়িতে প্রবেশের দক্ষিণ পাশে একটি ঘরে লিখা রয়েছে ‘তালতলা বাগানবাড়ি’।

মসজিদ-বিদ্যালয়ের নামে ভূমি জবরদখল

ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরুল আমিন। চাকরিকালীন নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের টাকায় সংসারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এলাকায় ২৫ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। তবে ক্ষমতা ও আধিপত্যের তোড়ে সেই স্বপ্নও টেকেনি বেশি দিন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেই স্বপ্নের জমিও কেড়ে নেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এমন অভিযোগ শুধু নুরুল আমিনের নয় বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর, ডোমরা ও মরুয়ারচর ২ হাজার ৫০০ শতাংশ জমিতে লাল পতাকা টানিয়ে শত শত মানুষের স্বপ্ন দখল করে নেন তিনি।

ফেনীতে সম্পদের পাহাড়

বিলাসবহুল বাগানবাড়ি ও খামারবাড়ি ছাড়াও নিজাম হাজারীর অনেক জায়গাজমি ও বাড়ি রয়েছে মাস্টারপাড়ায়। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ৬টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি, ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি ও ২০০ বিঘা জায়গা রয়েছে তার। এর মধ্যে মাস্টারপাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনের ১০০ মিটার পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন ৭ তলাবিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। ঘাটলায় ভোট-কাচারি নামে ৭ তলা একটি বাড়ি রয়েছে তার। বাগানবাড়ির আগে ২টি, পরে ১টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া খামার বাড়িতে ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে।

বাগানবাড়ির সমানে রাস্তার পশ্চিম পাশে ৮০ বিঘা জমি, ঘাটলার সামনে ৩০ বিঘা জায়গা, কবরস্থানে ২০ বিঘাসহ আশপাশের মিলে প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব বাড়ি ও জায়গার বিষয়ে সত্যতা জানিয়েছেন বাড়ির দারোয়ান ও স্থানীয়রা। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামে তার নামে-বেনাম মার্কেট ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।

বিশ্বস্ত ছিলেন ১০ সহযোগী

২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিজাম উদ্দিন হাজারী। এরপর থেকে বিভিন্ন উপজেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী। তার আশপাশে আওয়ামী লীগের ১০ জন জনপ্রতিনিধিকে দেখা যেত সব সময়। স্থানীয় মানুষ তাদের ১০ খলিফা হিসেবে চিনতেন।

তারা হলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে স্বপন মিয়াজী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান ওরফে খোকন হাজারী, জেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্লাহ ওরফে শরীফ হাজারী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল ওরফে আদর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শম্ভু বৈষ্ণব, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার ওরফে সোহেল চৌধুরী, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার ওরফে লাল হারুন, জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন।

একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন এসব খলিফা।

এসব বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী ঠিকাদারিকাজে সম্পৃক্ত নেই। ঠিকাদারি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজাম হাজারী। ঠিকাদারি, বালুমহাল ও মাটির প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল বেশি। কারণ এগুলোতে ক্যাশ টাকা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, শুধু ঠিকাদারিতে পার্সেন্টেস নয়, জেলার সব কটি বালুমহাল, ইটভাটায় মাটি বিক্রি চলত তার নিয়ন্ত্রণে।

ফারুক হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, সড়কের ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজের জন্য নিজাম হাজারীকে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

‘চাঁদা’ আদায় ছিল নিয়মিত

সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যেমন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কাজের বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে ৭%, ১০% ও ১৫% পর্যন্ত অগ্রিম টাকা আদায় করতেন নিজাম হাজারী। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন গত কয়েক দিন শান্তিতে ঘুমাচ্ছি। পার্সেন্টেস দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। পার্সেন্টেস দেওয়া বন্ধ হলে সুনামের সঙ্গে কাজের মান ঠিক রাখতে পারব।

এ ছাড়া ফেনী শহরের সিএনজি অটোরিকশা থেকে পরিবহন নেতা হানিফ ও মানিকের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। মহীপালের বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন পরিবহন নেতা মোহাম্মদ আলী।

শহরের রাজাজি দীঘিরপাড়ে প্রায় ৩০০ দোকান অবৈধভাবে নির্মাণ করে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন তারই চাচাতো ভাই পৌর যুবলীগ নেতা রুবেল হাজারী। 

মহীপালে গণহত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’

গত ৪ আগস্ট মহীপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজাম হাজারীর নির্দেশে নির্বিচারে গুলি করে তার ক্যাডার বাহিনী। সেই গুলিতে ৭ জন নিহত হন। সেই হামলার নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজের দেখা যায় শুসেনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন বাবলু পেশাদার কিলারের মতো গুলি ছুড়ছে। এ ছাড়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, কাজীরবাগ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেঞ্চু করিম, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জানে আলম, জেলা যুবলীগ নেতা ইকবাল বাহার ফয়সালকে গুলি করতে দেখা যায়। 

ফেনী সদর উপজেলা পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাব (২১) পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজাম হাজারী সেদিন নির্দেশ না দিলে আমার ছেলে মারা যেত না। আমার ছেলের মৃত্যুর দায়ভার সম্পূর্ণ নিজাম হাজারীকে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা হয়েছে। তাকে ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ৪ আগস্টের ঘটনায় কারা জড়িত তাদের তালিকা প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

স্ত্রীর নামেও ছিল অস্ত্রের লাইসেন্স

নিজাম উদ্দিন হাজারী ২০১৪ সালে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য, নিজের নামে একটি করে পিস্তল ও রাইফেলের লাইসেন্স নেন। এর মধ্যে রাইফেলের লাইসেন্স নেন ২০১৬ সালে। পিস্তলের লাইসেন্স নেন ২০১৮ সালে। তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের নামেও ২০২০ সালে একটি রাইফেলের লাইসেন্স নেওয়া হয়। যদিও তিনি গৃহিণী।

নির্বাচনে ‘ফেনী স্টাইল’

গত ১৪ বছরে ফেনীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গত উপনির্বাচনে জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির মাত্র একজন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৫টি পৌরসভা একচেটিয়া আওয়ামী লীগের দখলে। এসব শুধু নিজাম হাজারীর একক নেতৃত্বের কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল। তিনি বলেন, পুরো জেলায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছিলেন নিজাম হাজারী। 

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনকে ঈদ মনে করেন নিজাম হাজারী। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে নিজাম হাজারী ও তার সহযোগীদের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক সেলিম গ্রেপ্তার
ইমতিয়াজ সেলিম

নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপি জানায়, সেলিমের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া পল্লবী ও খিলগাঁও থানার আরও দুটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি তিনি।

তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন বলেও জানিয়েছে ডিএমপি। তাকে বিজ্ঞ আদালতে হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।

লাবনী/পপি/

ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
ঢাকায় পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় তাকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। 

এ সময় তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রথম শীর্ষ নেতা হিসেবে ঢাকা সফরে এসেছেন।

সাদিয়া নাহার/

নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করে গেজেট প্রকাশ

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করে গেজেট প্রকাশ

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে ৮ সদস্যের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।  মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে সই করেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই কমিশনের প্রধান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে কাজ করবেন কমিশনের সদস্যরা। 

কমিশনের সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা, ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিশেষজ্ঞ জেসমিন টুলী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ওপিনিয়ন মেকার ড. জাহেদ-উর রহমান, শাসন প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন,  ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে কমিশন গঠন করা হয়েছে। 

কমিশন ৩ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।

শাহনাজ পারভীন/সাদিয়া নাহার/