টানা বৃষ্টিতে অসংখ্য মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গতকাল রবিবার দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে রাজধানীতেও জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল দেশের বিভিন্ন বিভাগেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবারও (১৬ সেপ্টেম্বর) ভারী বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থা চলতে পারে আরও চার দিন।
এদিকে পাহাড়ি ঢল, ভূমিধস ও নৌকাডুবিতে কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গতকাল সকাল থেকেই অনেকটা বিরামহীন ছিল বৃষ্টি। ফলে কর্মস্থলগামীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। যানবাহন কম থাকায় তাদের অনেকক্ষণ বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার বৃষ্টিতে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় যানজট ছিল সঙ্গী। ঢাকা কলেজ আর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণেও মিরপুর রোডে ছিল যানজট। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন রিকশাচালকরা। যাত্রী কম তাই রোজগারও কম। তা ছাড়া বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন রিকশাচালকরা। বৃষ্টির কারণে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের বিভিন্ন দোকান, গলি ও মেট্রো স্টেশনের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
রাজধানীর মহাখালীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আরিফুল ইসলাম। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছি ফার্মগেটের বাসের জন্য। কিন্তু বাস আসছে না। ছাতা না আনায় ঝিরঝির বৃষ্টিতে অনেকটা ভিজে গেছি। রিকশাচালকরা বেশি ভাড়া চান।’
চার বিভাগে ভারী বর্ষণ হতে পারে
দেশের চার বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে বলা হয়, স্থল গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় পটুয়াখালীতে, ১৬১ মিলিমিটার। খুলনা ও ঢাকা বিভাগের আবহাওয়ার বিভিন্ন স্টেশনে শতাধিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার নিয়মিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা (১-৩) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেতে পারে। আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারে মোট ১১ মৃত্যু
দেশে ও উজানে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসায় আগামী তিন দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীর পানি কমে আসতে পারে। গতকাল বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় ও জোয়ার-ভাটাপ্রবণ নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর স্থল নিম্নচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে মুহুরী, হালদা ও গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসায় আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
অন্যদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অতিবর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ধস, পাহাড়ি ঢল, জলাবদ্ধতার কারণে কক্সবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার ৩৮টি ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল আংশিক প্লাবিত হয়। ফলে আনুমানিক ১ লাখ ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অতিবর্ষণের কারণে পাহাড়ধসে তিনজন ও পানিতে ডুবে একজন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয় এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলারডুবিতে তিনজনের লাশ পাওয়া যায়। তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। পাহাড়ধস, পাহাড়ি ঢল, পানিতে ডুবে এবং ট্রলারডুবিতে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন নিখোঁজ রয়েছেন।