শিশুদের খেলনা ও পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা তৈরি হয়েছে রিসাইকেল করা প্লাস্টিক থেকে। এক্সআরএফ পরীক্ষার ফলাফলে ১৬০টি নমুনার প্রতিটিতেই পারদ, সিসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিকসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া গেছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) ও ব্যান টক্সিকস, ফিলিপাইনের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় এসডোর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের ব্যবহৃত সাধারণ প্লাস্টিকের পানির কাপে ১ হাজার ৩৮০ পিপিএম সিসা, ২৪৭ পিপিএম আর্সেনিক ও ১ হাজার ৩৯০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। শিশুদের ব্যবহৃত স্টেশনারি ব্যাগে পাওয়া গেছে ৫৮০ পিপিএম সিসা, ১ হাজার ২৮০ পিপিএম ব্যারিয়াম, ৮৮ পিপিএম পারদ। একটি স্কুলের ব্যাগই শিশুর জন্য বিপজ্জনক। এ ছাড়া পুতুল সেটে ১৬০ পিপিএম সিসা ও ১ হাজার ৫০০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে; ফলে শিশুর প্রিয় খেলনা, পুতুলই এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ, বলছে এ গবেষণা প্রতিবেদন।
শিশুদের পানি খাওয়ার প্লাস্টিক মগে পাওয়া গেছে ২২০ পিপিএম সিসা, ৩১৫ পিপিএম ক্যাডমিয়াম এবং ১ হাজার ৬৮০ পিপিএম ক্রোমিয়াম, যা প্রতিদিন পানি পানের সময় শিশুরা এই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। একটি সুপরিচিত খেলনা দোকান থেকে কেনা পুতুল সেটে প্রায় ৫০০ পিপিএম সিসা পাওয়া গেছে; যা প্রমাণ করে যে, বড় দোকানগুলোও এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থমুক্ত নয়। শিশুদের শেখার জন্য প্লাস্টিকের তৈরি বর্ণমালা সেটের একটি অক্ষরে ৬৬০ পিপিএম সিসা পাওয়া গেছে।
এসডোর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘শিশুদের পণ্যে এ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি একটি জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই অদৃশ্য হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।’
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন খেলনায় রিসাইকেলকৃত প্লাস্টিক ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শিশুদের খেলনায় রিসাইকেল করা প্লাস্টিকের ব্যবহার ভীষণ বিপজ্জনক, কারণ এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে যা শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। এমন উপাদান খেলনায় কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। আমরা চাই, খেলনায় রিসাইকেলকৃত প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হোক এবং সব শিশুর পণ্য ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত থাকুক। আমাদের শিশুদের সুরক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা শিশুদের স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, ‘এত অল্প বয়সে ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি এমন একটি সংকট যা অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপের দাবি রাখে।’
ব্যান টক্সিকস-এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জশাফ সামির লোরেঞ্জো এবং টক্সিক ক্যাম্পেইনার থোনি ডিজন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘ব্যান টক্সিকস, এসডোর সঙ্গে শিশুদের পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সমস্যার মোকাবিলায় কাজ করছে। কারণ নিরাপদ পরিবেশে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের যৌথ গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলগুলো একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে, আমাদের শিশুরা প্রতিদিন বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসছে যা তাদের বিকাশ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশে স্থানীয় বাজারে পাওয়া খেলনা ফিলিপাইনের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশেও খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে, যা এই সমস্যার আন্তসীমান্ত প্রকৃতি এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যথাযথ পণ্যের মানদণ্ড নিশ্চিত করা এবং এসব নীতি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত যাতে আমাদের শিশুরা নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপভোগ করতে পারে।’
এই বিপজ্জনক পণ্যগুলো অবিলম্বে দোকান থেকে যেন সরিয়ে ফেলা হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ রোধে নিরাপত্তা মানদণ্ড যেন আরও কঠোর করা হয়, সে আহ্বান জানিয়েছেন এসডো এবং ব্যান টক্সিকস কর্তৃপক্ষ।