অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। তারা মনে করছে, এই সরকারের কাছে জাদুর চেরাগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবে। কিন্তু এই সরকার কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন কোষাগারে টাকা না থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেনা ছিল প্রচুর।
শনিবার (২ নভেম্বর) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এবং চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। তাই জনগণের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষের উপকার হতে পারে এমন প্রকল্প নেবে সরকার।
বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।
ফাওজুল কবির খান বলেন, জনগণের টাকা জনগণের স্বার্থে ব্যবহারের কথা মাথায় রাখতে হবে। সরকার একটি আমানত। ব্যক্তিস্বার্থ, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়তার স্বার্থের বাইরে গিয়ে এই আমানতকে সরকার রক্ষা করবে। ভবিষ্যতে প্রকল্প গ্রহণ করার আগে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। জনবান্ধব প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। যতটা সম্ভব দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় কোনোটাই বাড়ানো হবে না। কেনাকাটা হবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। টেন্ডারের ক্ষেত্রে প্রকৃত প্রতিযোগিতা কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। যতটা সম্ভব দুর্নীতি কমিয়ে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারের পার্থক্য আছে। সরকারে যেতে হলে ভোটের মাধ্যমে যেতে হয়। সেখানে টাকা লাগে, পেশিশক্তি লাগে, নানা বিষয় থাকে। তাই তারা কায়েমি স্বার্থের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কিন্তু এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এই সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারের মৌলিক পার্থক্য এখানেই। কায়েমি স্বার্থের কাছে দায়বদ্ধ নয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের দায়বদ্ধতা জুলাই বিপ্লবের শহিদ ও আহতদের প্রতি। সব সংস্কার ও কাজের কথা মাথায় রেখে চলছে বর্তমান সরকার।
সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, সংস্কার প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমটা নীতি সংস্কার। বিদ্যুতের, গ্যাসের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের আপত্তি ছিল। আগের সরকার বিইআরসি আইন পরিবর্তন করে নির্বাহী আদেশে মূল্য বৃদ্ধি করত।
সেমিনারে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শর্মিন্দ নীলর্মি, প্রধান আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মেহেদী এইচ ইমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকারসহ ৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি আলোচনায় অংশ নেয়।