অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান এবং ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
‘ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়’ শিরোনামে ইংরেজিতে লেখা এ পোস্টে তিনি বলেন, ‘ভারতের উচিত পোস্ট পঁচাত্তরের প্লেবুক পাল্টে বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা। এটা পঁচাত্তর-পরবর্তী পরিস্থিতি নয়। ভারতের উচিত দ্ব্যর্থহীনভাবে বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান এবং ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া। এটি দিয়েই শুরু করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানকে পাশ কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশের ভিত রচনা করা হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব ছিল একটি গণতান্ত্রিক, প্রজন্মভিত্তিক ও দায়িত্বশীল সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম চলবে দীর্ঘ সময় ধরে। বাংলাদেশি জনগণ আগের মতো নেই, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ ও মর্যাদাবান। তারা মরার আগ পর্যন্ত তাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলার এই অংশে ভারতপ্রেমী বা ভারতীয় মিত্ররা ভাবছে যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে এবং জুলাই বিপ্লব এবং ফ্যাসিবাদীদের নৃশংসতাকে এড়িয়ে গেলে তাদের কিছুই হবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। মানুষ সব দেখছে! আর ভারত যেন এই ঐক্যবদ্ধ, মর্যাদাবান ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে তার শত্রু না করে।’
ভারতীয় সংস্থা জুলাই বিপ্লবকে কিছু জঙ্গি, হিন্দুবিরোধী এবং ইসলামপন্থিদের ক্ষমতা দখল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাদের অপপ্রচার ও উসকানি ব্যর্থ হচ্ছে।’
উপদেষ্টা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘একাত্তরের পর রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম, কিন্তু এবার নয়!’ মাহফুজ আলম ‘আল্লাহ ভরসা!’ বলে তার ফেসবুক পোস্টের ইতি টানেন।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চান মাহফুজ
দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবং অতীতের স্বৈরাচারী শাসনের কারণে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়া অর্থনীতি সচল রাখতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে মাহফুজ আলম বলেন, ‘পাচার করা টাকা আমাদের দেশ থেকে আপনার দেশে চলে গেছে। আমাদের অর্থনীতি সচল রাখতে আমরা সেই অর্থ ফেরত চাই।’
মাহফুজ হাইকমিশনারকে নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিতে সরকারের প্রচেষ্টার বর্ণনা দেন।
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য নতুন ভ্রমণ সতর্কতার বিষয়টি উত্থাপন করেন, যা মঙ্গলবার ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করে। হাইকমিশনার সারাহ কুক উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করতে বৈদেশিক, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিসের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ব্রিটিশ নাগরিকদের আগমন বা বসবাস-সংক্রান্ত সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর ওপর হালনাগাদ তথ্য ও পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে সর্বদা প্রতিটি দেশের জন্য ভ্রমণ পরামর্শ পর্যালোচনা করে থাকে।’
এ ছাড়া হাইকমিশনার কুক অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে যুক্তরাজ্যের সহায়তা তুলে ধরেন।