দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে চায় নবগঠিত এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আর সেই লক্ষ্যে নির্বাচনকে ঘিরে দেশবাসীর জন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ও সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কীভাবে আস্থা ফিরিয়ে আনবেন, নির্বাচন কখন হওয়া উচিত এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কী? উত্তরে ইসি মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এটা তো একটা সামষ্টিক বিষয়। এটা এক লাইনে বলা সম্ভব না। সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এটাই আমাদের বৈঠক। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা কিছু তথ্য আদান-প্রদান করবো এবং আশা করি যে উনারা সময় বের করে একাধিকবার আমাদের সঙ্গে বসার সুযোগ করে দেবেন। আর নির্বাচনের সময় নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কীভাবে হওয়া উচিত, নির্বাচন ভালো করার জন্য কী কী করা দরকার সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে’।
আলোচনার বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে আইনিসহ কতগুলো বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরি করছে তার কমিশন। তিনি জানান, আইনে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও বিগত ইসি তা ক্ষমতার ব্যবহার করেনি। কাজেই অতীতের নির্বাচনি যত অপরাধ হয়েছে তা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সংস্কার কমিশন প্রধান।’
ড. বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের খাতিরে তারা রাতকে দিন ও দিনকে রাত করা ছাড়া সবই করতে পারে। এ বিষয়ে আইনে যতটা বলা আছে, আদালতের নির্দেশে সেটা আরও সুস্পষ্ট করা আছে। আইনের যেটা অস্পষ্টতা রয়েছে সেটা তারা পূরণ করতে পারে। তাদের অগাধ ক্ষমতা দেওয়া আছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে আগের কমিশন যুক্তি দিত যে, ফলাফল হওয়ার পরে কমিশনের আর অপরাধের শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। আসলে তা নয়- তারা ইচ্ছে করলেই করতে পারতেন। গেজেট হাওয়ার আগে তদন্ত সাপেক্ষে (আদালতের সুস্পষ্ট রায় আছে) তারা নির্বাচন বাতিল করতে পারতেন। এবং নির্বাচন শুধু বাতিল নয়, তদন্ত সাপেক্ষে পুনঃনির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্ষমতা তারা ব্যবহার করেন নাই’।
বিগত তিন কমিশন না কি সকল কমিশনকে বিচারের আওতায় আনবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম বলেন, ‘যারাই অপরাধ করেছে সবাইকে আসতে হবে। এগুলো তো সুস্পষ্টভাবে আলোচনা হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ৭৩ থেকে ৯০ ধারার মধ্যে নির্বাচনের অপরাধের বিষয়গুলো বর্ণনা আছে। এগুলো যাতে যথাযথ প্রয়োগ হয়, এগুলো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে’।
সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কমিশন ও তাদের দায় দায়িত্ব ক্ষমতা স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার হওয়ার উচিত, আদালতের কী ভূমিকা থাকবে, হলফনামা, না ভোট, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালট, প্রবাসী ব্যালট, ভোটার তালিকা নির্বাচন, এনআইডিসহ নির্বাচনের সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। এবং আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সুচারুভাবে সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে পারে ও সফল হয়, সংস্কার প্রস্তাব দেব যেগুলো তারা কিছু বাস্তবায়ন করবে আবার কিছু সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবায়ন করবে’।
এলিস/এমএ/