বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিন মাস ধরে চলা টানাপোড়েনের অবসান ঘটতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকের বিষয়ে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ১০ ডিসেম্বর বৈঠকের দিন নির্ধারিত থাকলেও তার এক দিন আগে ৯ ডিসেম্বর হতে পারে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন। যদিও উভয় দেশের সরকারি পর্যায় থেকে কেউই এখনো এই সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি। কারণ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের এই উত্তেজনার মুহূর্তে কখন কী ঘটে, সে বিষয়টি শেষ অবধি বুঝে তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে চায় দুই দেশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ এবং সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিও উত্তপ্ত অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ের আলোচনা শুরু করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। এই বৈঠকের মাধ্যমে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে উত্তরণের একটি পথ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক চলছে না। এরপর সংখ্যালঘু ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে আরও অস্থিরতা তৈরি হয়। এর জেরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের মিশনে হামলা চালায় ভারতের উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন। এ নিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও এই ঘটনার পর পরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং জড়িতদের আইনি প্রক্রিয়ায় নেওয়ার লক্ষ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। তলবের পর থেকেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েনের জট খোলার আভাস দেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে গত কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে যে তিক্ততার জন্ম নিয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা হবে। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি তোলা হতে পারে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে অভিযোগের কোনটি গুজব আর কোনটি সঠিক। বৈঠকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টিও তুলবে ঢাকা। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চুক্তিগুলোর পর্যালোচনা, বাণিজ্য, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তি ইস্যু, সীমান্ত চোলাচালান ও হত্যা বন্ধসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। বৈঠকের গতিবিধি বুঝে বা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শেষ মুহূর্তে কোনো ইঙ্গিত দিলে এ বিষয়ে আলোচনা তোলা হতে পারে। কারণ কোনো বিতর্কিত ইস্যু নয়, বরং সম্পর্কের জট খোলাই থাকবে এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য।