একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা, রাজনীতি, নির্বাচন আর অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছিল, শেখ হাসিনার শাসনামলে তা ক্লাইম্যাক্সে রূপ নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে জনগণের সঙ্গে শাসকের সম্পর্ক ছিল জালেম ও মজলুমের। ২০২২-২৪ সময়কালে শেখ হাসিনা তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলে অপরাধের দায়মুক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সমাজ-সন্দর্শন কেন্দ্রের আয়োজনে ‘বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। এ সভায় আলোচক হিসেবে ছিলেন লেখক ও গবেষক মুস্তাফা মজিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. রাহমান চৌধুরী।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে আওয়ামী লীগ সেভাবে ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ছাত্রলীগের একাংশ জাসদের জন্ম দিল, যারা ছিল বঙ্গবন্ধুর সমালোচক। বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু থাকতে পারেননি, যার ফলে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে সপরিবারে নিহত হন তিনি। এরপর বঙ্গবন্ধু তার ভাবমূর্তি হারাতে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে বঙ্গবন্ধুর হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করলেও অতিরিক্ত বাগাড়ম্বর করে বাবার নাম ডুবিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা খাত ধ্বংস করে সব মূল্যবোধ বিনষ্ট করা হয়েছে বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সমালোচনায় অধ্যাপক আবুল কাসেম বলেন, এদের শাসনামলে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, এমনকি আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত লোকেরাও। শেখ হাসিনা মুসোলিনী ও হিটলারের নাৎসিজমের কিছু কম করেননি। সারা দেশে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন তিনি।
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের সম্ভাবনাও দেখছেন না তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে নেতা হবে এমন কেউ কি আছে? সবাই ব্যক্তি স্বার্থে ভোগবাদী সংস্কৃতিতে ডুবে ছিল। এদের লক্ষ্য ছিল বড় পদে আসীন হয়ে বিত্তশালী হবে, বাড়িঘর করবে পৃথিবীজুড়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদও বেশি দিন হওয়া সমীচীন হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ দেশের স্বার্থে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগের প্রশ্নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রসঙ্গ এসে যায়।
সরকার বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে যেসব শ্বেতপত্র প্রকাশ করছে তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার অনুরোধ জানান অধ্যাপক আবুল কাসেম।
জয়ন্ত সাহা/মাহফুজ/এমএ/