পর্বতারোহী এম এ মুহিতের অভিপ্রায় ছিল তিনি নেপালের অন্নপূর্ণা পর্বতমালার একটি চুলু ওয়েস্ট শিখরে আরোহণ করবেন। অক্টোবরের শেষদিকে নেপাল অভিযানে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বিপত্তি বাধল চুলু ওয়েস্টের পথে ‘চামে’ নামের গ্রামে যাওয়ার পরে।
২ হাজার ৬৭০ মিটার উচ্চতার এই গ্রামে যাওয়ার পর জানলেন, চুলু ওয়েস্ট ক্যাম্প ওয়ানের পর নতুন করে বেশ কয়েকটি বিশাল হিমবাহে বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। ১৪-১৫টি দল ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। মুহিত সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি অন্নপূর্ণা পর্বতমালার দুর্গম শিখর ‘থরং’ অভিযানে যাবেন। তার সঙ্গী হলেন মিংমা চিরি শেরপা, আং দর্জি শেরপা।
মাত্র তিনজনের দল এর আগে কখনো থরং পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে যায়নি। ৪ হাজার ৯০০ মিটার উচ্চতার বেস ক্যাম্পে যখন পৌঁছালেন তারা, তখন ভিনদেশি অভিযাত্রীদের শোনালেন তাদের অভিপ্রায়ের কথা। সবার চক্ষু চড়কগাছ! আশপাশে তুলনামূলক সহজ পথের পর্বত জয় না করে, কেন যাবেন তারা থরং শিখরে। অনেকেই এই দুঃসাহসী অভিযাত্রা বাতিলের পরামর্শ দেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা মুহিত ও তার দুই শেরপা বন্ধু।
অবশেষে যাত্রা হলো শুরু। ৪ নভেম্বর ১৭ হাজার ৭৭০ ফুট উচ্চতায় হাই-ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা। ৪ নভেম্বর রাতে হাই-ক্যাম্প থেকে চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করেন। পরে ৫ নভেম্বর নেপাল সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে তারা ‘থরং’ শীর্ষে আরোহণ করেন। ৬ হাজার ১৪৩ মিটার উচ্চতায় হিমালয়ের ওই দুর্গম শিখরে মুহিত উড়ালেন লাল-সবুজ পতাকা।
অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের ৬ হাজার ১৪৩ মিটার উচ্চতার ‘থরং’ পর্বতশিখর জয় করে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী এম এ মুহিত।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও পতাকা-প্রত্যর্পণ অনুষ্ঠানে এম এ মুহিত তার দুর্গম অভিযানের এই গল্প শোনান সবাইকে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন) মো. এমদাদুল ইসলাম এবং চ্যানেল ২৪-এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন।
ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, ‘মুহিত শুধু ট্র্যাকার বা পর্বতারোহীদের উৎসাহ দিচ্ছেন এমন নয়। তিনি একই সঙ্গে নেপাল ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এক দারুণ যোগসূত্র রচনা করেছেন। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ, মুহিতের প্রতিটি অভিযান সেই কথা বলে।’
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ যখন ক্রমেই প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, মুহিত তখন মানুষকে বলছে প্রকৃতির কাছে যাও। দুর্গম পর্বতশিখরে সে বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছে। অভিনন্দন তাকে।’
‘থরং’ পর্বতশিখর অভিযানটি পরিচালনা করেছে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং যৌথভাবে স্পনসর করেছে ইস্পাহানি টি লিমিটেড ও চ্যানেল ২৪।