দেশে গত বছর ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করা এসব শিক্ষার্থীর শতকরা ৬৫ শতাংশই ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী। আর পুরুষ শিক্ষার্থীদের তুলনায় নারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ নারী, ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে আঁচল ফাউন্ডেশন। ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ গলায় ফাঁস দিয়ে, ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বিষপানে এবং ৪ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যভাবে আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যার শীর্ষ কারণগুলোর মধ্যে অভিমানে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ, রোমান্টিক সম্পর্কের কারণে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, একাডেমিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং মানসিক অস্থিরতায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে আত্মহত্যা একটি ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হয়ে উঠেছে। সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ এবং ঘৃণার চোখে দেখা হলেও প্রতিবছরই আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ অপসংস্কৃতির প্রভাব খুব বেশি। প্রতিবছরের মতো এ বছরও আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের সদস্যরা দেশের জাতীয় ও স্থানীয় ১০৫টিরও বেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত আত্মহত্যার সংবাদের তথ্য খুঁজে পান।
সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার শেখ রফিকউজ্জামান বলেন, ‘২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৩২ জন এবং ২০২৩ সালে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ৫১৩ জন এবং ২০২৪ সালে ৩১০ জন। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যা-সম্পর্কিত খবর গণমাধ্যমে কম এসেছে বলেই আমাদের গবেষকরা মনে করছেন। নারী শিক্ষার্থীরা সাধারণত আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সহযোগিতা নারীদের জন্য আরও বেশি প্রয়োজন।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে প্রাথমিকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ, উচ্চমাধ্যমিকে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং স্নাতক পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে। এ ছাড়া স্নাতকোত্তরে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিপ্লোমায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং সদ্য পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষিত তবে বেকার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে পরিবার, সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সচেতন নয়। প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলেও আমরা তত গুরুত্বের সঙ্গে নিই না, যার কারণে আত্মহত্যার হার কমছে না।’
বেসরকারিভাবে কিছু কাজ হলেও সরকারিভাবে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার নিজেরাই মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। সরকারের কাছে আবেদন জানাই, দ্রুত গতিতে যেন দেশব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।’
আত্মহত্যা প্রতিরোধে আঁচল ফাউন্ডেশন ১৪টি সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম, বন্ধু সহযোগিতা গ্রুপ গঠন, লাইফ স্কিলস ওয়ার্কশপ আয়োজন, গেমিফিকেশন টেকনিক, ফিলিংস অ্যালার্ম সিস্টেম চালু করা, পারিবারিক কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম, সৃজনশীল থেরাপি ক্লাস, ডিজিটাল মেন্টাল হেলথ ক্যাম্পেইন, রিভারসাইড হেলথ রিট্রিট পরিকল্পনা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির স্কলারশিপ, আত্মহত্যা প্রতিরোধ গবেষণা তহবিল, জীবন সংরক্ষণ প্রতিশ্রুতি দিবস, কৃতজ্ঞতা চর্চা সেশন ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপেন হেল্প লাইন চালু করা।