
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে খাদ্যের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরাম বিএআরএফ আয়োজিত ‘কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএআরএফের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সবুজ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কাওসার আজম।
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কৃষিকে পানি থেকে বা পানিকে কৃষি থেকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বরং একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
একটি দেশের মানুষের প্রধান চাহিদাই হচ্ছে খাদ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এখন যেহেতু সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তাদের কাছে এ দাবি তুলতে হবে খাদ্যের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।'
তিনি বলেন, 'আমরা হাইব্রিড যুগে পৌঁছে গেছি। খাদ্য বলেন আর যা কিছু বলেন আমাদের সবকিছু বেশি করে উৎপাদন করতে হবে। রাষ্ট্রও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনে জোর করছে। কিন্তু আমি বলবো আমাদের অধিক খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনেও মনোযোগ দিতে হবে।'
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজ এত ব্যপক, সারাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব যে মন্ত্রণালয়ের হাতে। তাদের জন্য প্রতি বছর যে বরাদ্দ থাকে সেটা অনেক বড় একক প্রকল্পের চেয়েও কম। এই জায়গায় পরিবর্তন দরকার।
তিনি বলেন, আমরা খামারি নামের একটি অ্যাপ তৈরি করছি। যেখানে জমির পরিমান অনুযায়ী মাটির উর্বরতা বিবেচনায় নিয়ে কোন ফসল ভালো ফলবে, কতটুকু সার লাগবে, কি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং সর্বোপরি আবহাওয়া উপযোগী একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে। দ্রুতই এই অ্যাপটির কার্যক্রম শুরু হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অধিক কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্যও ধরে রাখতে হবে। উৎপাদন দুইভাবে বাড়ানো যায়। এক হলো জমি বাড়ানো। আর অন্যটি হলো উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। জমি বাড়ানোর যেহেতু সুযোগ কম একারণে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এর জন্য গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবনের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ সীড এসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. আলী আফজাল কিনোট পেপার উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের যে সকল সমস্যায় প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে তা হলো বনাঞ্চল উজার, লবণাক্ততা, পানি দূষণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জমির অবক্ষয়, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্পবর্জর পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষিতে ক্রমাগত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ সকল চ্যালেঞ্জ দেশের কৃষি, অর্থনীতি এবং জনগণের জীবিকার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট তীব্র হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যাগুলি আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, যা দেশের লাখ লাখ মানুষ এবং দেশের উন্নয়নকে প্রভাবিত করছে।
তিথি/মেহেদী