স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ১৭ ফেব্রুয়ারি আলোচনার সিদ্ধান্ত হওয়ায় সচিবালয়ের সামনের সড়ক ছেড়েছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবার।
এর আগে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব আতাউর রহমানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন তারা। পরে সন্ধ্যায় সড়ক ছেড়ে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের দিকে চলে যান।
স্মারকলিপি জমা দেয় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তারা সচিবালয় প্রবেশ করেন। প্রতিনিধিদলে থাকা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা হলেন ফখরুদ্দিন আহমেদ, মো. দেলোয়ার, মাহবুব, মো. মনির ও রোকসাল আল প্রধান রিয়াল।
মাহিন সরকার সাবেক বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের উদ্দেশে বলেন, ‘আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি বিডিআর কল্যাণ পরিষদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সংশ্লিষ্ট কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের জন্য বিডিআর কল্যাণ পরিষদের দাবিগুলো পাঠানো হবে। যদি কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত হয়, সে ক্ষেত্রে নতুন করে কমিটি করে হলেও ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসবেন তারা।’
মাহিন সরকার আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়করাও বিডিআর কল্যাণ পরিষদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তাই জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সচিবালয়ের সামনের সড়ক ছেড়ে সবাইকে শহিদ মিনারে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি গতকাল দুপুর পর্যন্ত চলে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন তারা। এ সময় জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। একপর্যায়ে কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে সামনের দিকে এগোতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। সচিবালয়ের সামনে এলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে রাস্তায় বসে পড়েন ‘জাস্টিস ফর বিডিআর’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। প্রতীকী কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় শুয়ে পড়েন অনেকে।
বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলো হচ্ছে-
১. পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
২. এরই মধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে।
৩. গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ব্যতীত শব্দ এবং কার্যপরিধি ২-এর (ঙ) নম্বর ধারা বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদ্ঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৪. পিলখানায় শহিদ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কারাগারে মারা যাওয়া সব বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৫. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনতে হবে।
৬. পিলখানার হত্যাকাণ্ডে সব শহিদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে শহিদদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।