ঢাকা ৩০ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০২ পিএম
বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন
ছবি : খবরের কাগজ

দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।

আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্বের ইজতেমা টঙ্গী ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। আর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রথম পর্ব শেষে ৬ ফেব্রুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব শেষে ১৮ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের ওয়াক্তের মধ্য ময়দান প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

সিনিয়র সচিব ও শুরায়ি নিজামের মুরব্বিদের উপস্থিতিতে ইজতেমা অনুষ্ঠানের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছিল ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

আরও অপরাধ তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
আরও অপরাধ তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের
ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)। বিগত সরকারের আমলে কোন কোন মাত্রার মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নির্যাতন ও দেশীয় আইনের অধীন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে ওএইচসিএইচআর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। 

জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান ভলকার টুর্ক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা কীভাবে একাধিক বৃহৎ আকারের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন, তার পরামর্শ দিয়েছেন বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্র। যেখানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল।

নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে একদম সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল- এমন ঘটনাও রয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, প্রাণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এ তদন্তে সহযোগিতা করেছে, প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিয়েছে এবং নথিপত্র সরবরাহ করেছে।

সংগৃহীত সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বাধীনভাবে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর মনে করছে, সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায় ব্যবহার করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে বিচারবহির্ভূত শত শত হত্যাকাণ্ড ঘটে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়। নির্বিচারে আটক ও নির্যাতন এবং নানা ধরনের নিগ্রহের ঘটনা ঘটে।

ওএইচএসিএইচআর যৌক্তিক কারণে মনে করে যে, বিক্ষোভ এবং ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের অবগতি, সমন্বয় এবং নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে। এসব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগজনক। তাই, কোন মাত্রার মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নির্যাতন (স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে) ও দেশীয় আইনের অধীন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিভিন্ন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া’ মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হন। নিহতদের ১২-১৩ শতাংশই ছিল শিশু। এ ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ সেসময় গুরুতর আহত হন। পুলিশ ও র‍্যাবের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে তখন গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়। 

 

 

জাতিসংঘের প্রতিবেদন জুলাই আন্দোলন দমনে সমন্বয়ের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০০ পিএম
জুলাই আন্দোলন দমনে সমন্বয়ের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ১ হাজার ৪০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) ভলকার টুর্ক জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সময় দুপুরে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশে এসে ওই তদন্ত করেছিল।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ ও র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনকে তখন আটক করা হয়েছিল। যারা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে ও পঙ্গু হয়েছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তখন পদ্ধতিগত ও সংগঠিতভাবে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশ হয়ে উঠেছিল।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর আরও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে ওএইচসিএইচআর। একই সঙ্গে সংস্থাটি রাজনৈতিক দলকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এতে র‌্যাব বিলুপ্ত করা এবং সামরিক বাহিনীর কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওএইচসিএইচআরের এই রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যারা আইন ভঙ্গ করেছে এবং মানুষের মানবিক ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ‘এই রিপোর্টে ইউনূস সরকারের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে। কারণ ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের কোনো পরিবেশই নেই।’

তিনি বলেন, ‘তখন সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করে দেশ এবং জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য আইনি পন্থা অবলম্বন করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সিনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে মনগড়া তথ্য দেওয়া হয়েছে। কারণ এখন কোনো কর্মকর্তার পক্ষে সরকারের বাইরে গিয়ে সত্যি তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলেছেন, ‘বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে আইনবহির্ভূত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেটি ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ দায় অস্বীকারের কোনো সুযোগই নেই।’

প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ৮২৬ জন নিহত ও ১১ হাজার ৩০৬ জন আহতের একটি তালিকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই সাবেক সরকারের অন্তত ৮০ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপিকে আটক করা হয়েছে।

ওই রিপোর্টে ওএইচসিএইচআর বলছে, এটা বিশ্বাস করার ভিত্তি আছে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামো, আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে পদ্ধতিগতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল।

এর মধ্যে রয়েছে কয়েক শ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে মারাত্মক শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন। এসব কারণে বিক্ষোভের সময় এমন যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলছে জাতিসংঘ। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র অংশ এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতে, সমন্বয়ে ও নির্দেশনায় এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, ব্যক্তি নিরাপত্তা, নির্যাতন ও বাজে আচরণ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার, ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার, ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার অধিকারের মতো বিষয়গুলো।

বিজিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরাসরি অপারেশনের বিষয়ে আদেশ ও অন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা, যা তাদের বিক্ষোভকারী ও অন্য বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত করেছিল। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা ছিল।

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জন সদস্যের নাম এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ ওএইচসিএইচআরকে সরবরাহ করা হয়েছে। পুলিশের মতে, এসব ব্যক্তিই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। যাদের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ১০ জন তখনকার সংসদ সদস্য, ১৪ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা, ১৬ জন যুবলীগ, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং ৭ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া অমানবিক পরিবেশে আটক, নির্যাতন ও বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর আচরণের শিকার হয়েছে। নারী ও কন্যাশিশুরাও নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন। বিশেষত শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখ সারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছেন। নারীরা যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ছিল লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ছবি এবং ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয়েছে, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিক্ষোভ দমনের জন্য পুলিশের সঙ্গে আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও বিভিন্ন জায়গায় লোকজনকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিলেন এবং সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।

অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার আরও ৫৯১

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার আরও ৫৯১
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশব্যাপী চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ৫৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে অভিযান শুরুর দিন থেকে চার দিনে ২ হাজার ৮৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। 

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে ৫৯১ জন ও সারা দেশে নিয়মিত অভিযানে আরও ১ হাজার ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এ সময় জব্দ করা হয়েছে পুলিশের লুট হওয়া একটি চায়নিজ রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি এলজি, চারটি ওয়ান শুটারগান, একটি ম্যাগজিন, ২০টি ককটেল, ছয়টি ছুরিসহ দেশীয় নানা অস্ত্র-সরঞ্জাম। 

এর আগে অপারেশন ডেভিল হান্টে গত রবিবার সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয় ১ হাজার ৩০৮ জনকে, সোমবার ৩৪৩ জন, মঙ্গলবার ৬০৭ জন এবং সর্বশেষ বুধবার গ্রেপ্তার হন ৫৯১ জন।

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মীসহ গ্রেপ্তার ৩১

চট্টগ্রাম নগরে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা, হামলা, সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার আসামি। তাদের মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের তিন কর্মীও রয়েছেন। সিএমপির বিভিন্ন থানার পুলিশ ২৪ ঘণ্টায় (১১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা) তাদের গ্রেপ্তার করে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিএমপির জনসংযোগ শাখার এসআই মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। গ্রেপ্তাররা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী, পরিকল্পনাকারী ও তাদের সহযোগী বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ গ্রেপ্তার ২২

ময়মনসিংহে ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার বিকেলে খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মাহফুজা খাতুন। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ধোবাউড়া উপজেলার গামারীতলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন।

নোয়াখালীতে গ্রেপ্তার ২১

নোয়াখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. ইব্রাহীম খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

তিনি বলেন, যৌথ অভিযানে নোয়াখালীতে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে পাঁচজন, কোম্পানীগঞ্জে একজন, হাতিয়া আটজন, বেগমগঞ্জে দুজন, চাটখিলে তিনজন, চরজব্বারে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চরজিয়া উদ্দিন থেকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবুল কালাম সফি প্রকাশ সফি বাতান্যাকে তার চতুর্থ স্ত্রী হাসিনা বেগমসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এ ছাড়া সিলেটে ছয়জন, আশুলিয়ায় পাঁচজন, ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মী, দিনাজপুরে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাউশির ডিজির অপসারণ দাবিতে আলটিমেটাম

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ পিএম
মাউশির ডিজির অপসারণ দাবিতে আলটিমেটাম
শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হককে অপসারণ করতে আলটিমেটাম দিয়েছে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। দাবি না মানলে শিক্ষা ভবনের অবস্থা ধানমন্ডি ৩২-এর মতো হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। 

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে জোটের নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর, প্রেতাত্মা এই মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হককে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে বসিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই মহাপরিচালককে প্রত্যাহার না করলে সারা দেশের শিক্ষকরা শিক্ষা ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন। এ জন্য সচিব ও যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান দায়ী থাকবেন।

বুধবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে খবরের কাগজকে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষা ভবন দুর্নীতির আখড়া। দাবি না মানলে খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার দাবি না মানলে আমরা রবিবার কর্মসূচি দেব।’

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন অনিয়ম, তাদের সমর্থন নিয়ে অধ্যক্ষ হওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে মাউশির নতুন ডিজির বিরুদ্ধে। তার অপসারণ চেয়ে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষক কর্মচারী জোট।

 

আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত হত্যার শিকার: জাতিসংঘ

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২২ পিএম
আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত হত্যার শিকার: জাতিসংঘ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ হওয়া আবু সাইদ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাইদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিনার (ওএইচসিএইচআর)। প্রতিবেদনে আবু সাঈদের বিশেষ ঘটনাটি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় পুলিশকে উদ্দেশ করে দুই বাহু ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে চিৎকার করার সময়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র এবং ভূ-অবস্থান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তকারীরা তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, তা সাক্ষ্য-প্রমাণের জন্য পুনর্নির্মাণ করেন। একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, তার আঘাতগুলো প্রায় ১৪ মিটার দূরত্ব থেকে ধাতব গুলিবোঝাই শটগান দিয়ে কমপক্ষে দুবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

এতে আরও বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। এ সময় আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আহতরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুর এ সংখ্যা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল।