
গত পাঁচ বছরে (২০১৯ থেকে জুলাই ২০২৪) বিদেশ সফরে রাষ্ট্রের ২০০ কোটি টাকা ব্যয় এবং রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে বিভিন্ন দেশ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি কেনার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কমিশনের নিয়মিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু হবে।
অভিযোগ অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ওই ৫ বছরে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮টি ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভাড়া করতেন সরকারি টাকায়। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে জাতিসংঘের প্রায় প্রতিটি অধিবেশনে সরকারপ্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন এবং প্রতিবারই নিউইয়র্কে নিয়ে যেতেন বিশাল বহরের সফরসঙ্গী। শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে ২২৭ জনের একটি দল নিয়ে নিউইয়র্কে ৭০তম সাধারণ অধিবেশন এবং টেকসই উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে এই সংখ্যা ছিল ১৭৮ এবং ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৪।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ সিরিজের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজে সফর করতেন। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে স্থানীয় সময় বিকেলে হেলসিংকির ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৯০২-যোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন। সরাসরি ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা না করে ফিনল্যান্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এই ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট অবতরণ এবং সেখানে দুই দিনের ল্যান্ডিং চার্জসহ সফরসঙ্গীদের যাবতীয় খরচ বহন করতে অতিরিক্ত ৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। এ অবস্থায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিমানের।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি সংগ্রহের জন্য রাষ্ট্রের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে মানদণ্ড ভঙ্গ করে কয়েকটি ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি কিনেছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় অব ব্রাসেলস ও ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়; যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি চুক্তির বিনিময়ে বাগিয়ে নেওয়া এবং এসব ডিগ্রি ও পদক নিতে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছে। এটি দুদকের তফসিলভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।