রাজধানী ঢাকার লালমাটিয়ায় কয়েকটি সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। সড়কগুলোতে এমনভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে যে, হাঁটার জায়গাও রাখা হয়নি। এ ছাড়া সড়ক খুঁড়তে গিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ির পানি ও বিদ্যুতের লাইনও কাটা পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরই আবার নিজ খরচে তা ঠিক করে নিতে হচ্ছে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমাটিয়া বি-ব্লকের ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সড়ক খনন করে বড় বড় পাইপ বসিয়ে ড্রেনেজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ৩ নম্বর সড়কে পাইপ বসানোর কাজ শেষ। ঢালাইয়ের ঢাকনা বসিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ সড়ক ধরে কিছুটা হাঁটলেই ৬ নম্বর সড়ক। ৬ নম্বর সড়ক ধরে একটু এগোলে ৪-৫ নম্বর সড়ক। এ সড়কগুলোয়ও পাইপ বসানো হয়েছে। এখন মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
সড়কগুলো ধরে হাঁটার সময় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেল। ৪ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়ি থেকে এক ব্যক্তি বের হলেন, সঙ্গে এক শিশু। বাড়ির তুলনায় সড়কটি এতটাই গভীর করে খোঁড়া হয়েছে যে, শিশুটি সড়কে নামতে পারছিল না। ভদ্রলোক প্রথমে নিচে নেমে তারপর ওই শিশুকে দুই হাতে ধরে সড়কে নামালেন। কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভদ্রলোক বললেন, ৩ নম্বর সড়কের কাজ মাসখানেক আগে শুরু হয়েছে। আর ৪ নম্বর সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে রোজা শুরুর এক দিন আগে। সেই থেকেই আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
৪ নম্বর সড়কের এক বাসিন্দা বলেন, ‘যে কাজটি হচ্ছে সেটি আমাদের জন্য দরকার। ১৯৮২ সালের পর থেকে এখানে কোনো কাজ হয়নি। কাজ যে হচ্ছে তাতে আমরা খুশি। কিন্তু যারা কাজ করছে, তাদের কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় নেই। ভেকু দিয়ে খনন করছে। এতে মাটির নিচে থাকা বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কাটা পড়ছে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগ কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় নেই। এ ধরনের কাজের সময় সব বিভাগেরই প্রতিনিধি থাকা উচিত। তাদের সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন আমার চোখের সামনে মারাত্মক একটা দুর্ঘটনা থেকে এক শ্রমিক রক্ষা পান। ভেকু চালকের সামান্য আঘাত লাগে। আমার বাসার সামনের বৈদ্যুতিক লাইন কাটা পড়ে। তখনই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পানির লাইনও কাটা পড়ে। পানির লাইন তারা ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের লাইন আমি ঠিক করিয়েছি। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।’
হাত দিয়ে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দেখেন, জিআই কেবল লাগিয়েছি। আমার তো রাজনৈতিক প্রভাব নেই, তাই নিজের টাকায় ঠিক করিয়েছি।’
এই সড়কের বাসিন্দা নগর পরিকল্পনাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন, ‘দ্যাখো, সামান্যতম হাঁটার জায়গাও রাখেনি। এতগুলো বাড়ি থেকে এত এত মানুষের বের হয়, প্রবেশ করে। শিশু-বৃদ্ধ-নারী- যারা আছেন তারা অনেকেই বাসা থেকে বের হতে পারেন না। এভাবে কাজ করলে তো হয় না। যারা শ্রমিক তারা তো এতো কিছু বোঝেন না। কিন্তু প্রতিষ্ঠান-সংস্থা যারা কাজ করাচ্ছে, তাদের তো দায়িত্ব আছে। এভাবে কেউ কোনো দিন রাস্তা কাটে! একটার পর একটা রাস্তা কাটছে আর যেভাবে ইচ্ছা খোঁড়াখুঁড়ি করছে।’
কারা কাজ করছে তাও বোঝার উপায় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্তত একটা সাইনবোর্ড তো থাকবে যে এই সড়কে কাজ চলছে। অমুক সংস্থা কাজ করছে। আমরা নাগরিকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। এ ধরনের কথা তো থাকা উচিত। কিছু নেই। এটা কি! কোনো কর্তৃপক্ষের চেহারা নেই। কাউকেই দেখলাম না। একটা অভিজাত এলাকা। মানুষগুলো কীভাবে যায়-আসে। এভাবে একটার পর একটা রাস্তা ধরছে। নাগরিকদের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধাবোধ কিছুই নেই।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘শিশুদের তিনটি স্কুল এবং দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ মানুষের বসবাস এখানে।’ দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
এই কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মাহমুদ মোল্লা জানালেন, দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে কাজ শেষ করে ফেলব। শনিবার থেকে আরও ২০ জন শ্রমিক কাজে লাগাব। এক সপ্তাহের মধ্যে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। ঈদের আগে কাজ শেষ করব।