
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আরব আমিরাতসহ কারা নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীরা। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পুনর্বাসনে ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন আরব আমিরাত ফেরত খালেদ সাইফুল্লাহ।
তিনি বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাক্ষাতের অনুমতি না পেলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
আগামী দিনে রেমিট্যান্স বন্ধের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ার দেন তিনি।
৬ দফা দাবি হলো- আরব আমিরাতসহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যেমন- যারা বিদেশ যেতে চান সরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে বিদেশ পাঠাতে ব্যবস্থা, যোগ্যতা অনুযায়ী দেশে চাকরির ব্যবস্থা করা; ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হতে চায় তাদেরকে ব্যাংক/ যেকোনো সংস্থার মাধ্যমে বিনাসুদে প্রয়োজনীয় লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং বয়স্ক প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রকার সরকারি ভাতার আওতায় নিয়ে আসা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ ফেরত প্রবাসীদের নো-এন্ট্রি দিয়েছে, সেই নো-এন্ট্রি তুলে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া, একই মামলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এখনো গ্রেপ্তার চলমান, তা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া বন্ধসহ মামলা শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগারে যেসব বাংলাদেশি প্রবাসী বন্দি আছেন তাদেরকে অতিদ্রুত মুক্ত করে নিয়ে আসা, প্রবাসীদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যারা দিয়েছে বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক কনসাল জেনারেল বিএম জামালসহ জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা, ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মতো একটি ট্রাস্ট গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের তালিকায় কারা নির্যাতিত প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং জুলাই বিপ্লবের বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাতজনের একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনের কারণে গ্রেপ্তার প্রবাসীদের মুক্ত করায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আরব আমিরাত থেকে এখন পর্যন্ত ১৮৯ জন দেশে ফেরত এসেছেন এবং এখনো ধরপাকড় চলছে। শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা আরব আমিরাতে সফরে যাবেন।’
সফরে প্রবাসীদের মামলা তুলে নেওয়াসহ নো-এন্ট্রি তুলে নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রবাসী ফেরতদের নো-এন্ট্রি আইন তুলে নিয়েছে আরব আমিরাত সরকার। তাই সরকার উদ্যোগ নিলে নো-এন্ট্রি তুলে নিলে আবারও প্রবাসীরা আরব আমিরাতে যেতে পারবেন বলে আশা রাখছি।’
লিখিত বক্তব্য খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে প্রবাসীরা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে মিছিল করেন এবং রেমিট্যান্স বন্ধের কর্মসূচি পালন করেছিল। মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মিছিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা সম্পৃক্ত নয় এমন অনেকের নামের তালিকা তৎকালীন কনসাল জেনারেল অ্যাম্বাসেডর জামালের মাধ্যমে সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জমা দেয়।
তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন হাফেজ মুহাম্মদ, ফরিদ শাহিন, জাহাঙ্গীর, আমিনুল ইসলাম, সৌদি প্রবাসী মঈন উদ্দিন বাবু প্রমুখ।
শফিকুল/পপি/