ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

সচিবালয়ের পরিণতি যেন ধানমন্ডি ৩২-এর মতো না হয়: হাসনাত আবদুল্লাহ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম
সচিবালয়ের পরিণতি যেন ধানমন্ডি ৩২-এর মতো না হয়: হাসনাত আবদুল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ

‘জনগণের জন্য কাজ করুন, জনগণের শক্তি অনুধাবন করুন, আমি খুব করে চাইব, ধানমন্ডি ৩২-এর পরিণতি যেন সচিবালয়ে না হয়।’ 

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে এক লাইভে এসে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘আমি এটা খুব করে চাইব, মন থেকে চাইব, কোনো একসময়, হয়তো এই বছর না হোক, ১০ বছর পর হোক, ১৫ বছর পরে, ২০ বছর পরে সচিবালয়ের পরিণতি যেন গণভবনের মতো না হয়। সুতরাং শিক্ষা গ্রহণ করুন, ধানমন্ডি ৩২ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন, গণভবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সচিব- আমলাদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘আপনাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। আপনারা জনগণের সেবা করতে এসেছেন। আপনারা জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আপনারা রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না। এটা নিজের মধ্যে ধারণ করুন। আপনারা যদি মনে করেন, সচিবালয়ে বসে ধানমন্ডির সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বিদ্যমান রাখবেন, তাহলে আওয়ামী লীগকে যেভাবে বাংলাদেশ থেকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে আপনাদেরও অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হবে।’ 

কোনো জাতীয় সম্পদের ক্ষতি না করার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘৩২ নম্বরের বাড়ি ৫ আগস্টেই ধূলিসাৎ করে দেওয়া উচিত ছিল, যেটা পরবর্তী সময়ে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছে।’              

ফেসবুক লাইভে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মধ্যে ন্যূনতম সরি ফিলিংস নেই। এখনো তাদের হুমকি-ধমকি অব্যাহত আছে। ৫ আগস্টের পরে সবচেয়ে স্বাধীনতা ভোগ করছে আওয়ামী লীগ। তাদের কমেন্ট দেখলেই বোঝা যায়। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমেন্টে হুমকি-ধমকির স্বাধীনতা উপভোগ করছে।’

পরবর্তী বাংলাদেশটা তাদের দাবি করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যারা ফ্যাসিবাদ উৎখাত করেছি, এই বাংলাদেশটা আমাদের।’

মাহফুজ/

 

ঢাবির সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে শিক্ষক সমিতির শ্রদ্ধা

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৪২ এএম
ঢাবির সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে শিক্ষক সমিতির শ্রদ্ধা
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত একটি শোক বার্তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। 

এই শোক বার্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং পরিবারের শোক সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।

দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, নারী উন্নয়ন, যোগাযোগ ও সম্প্রচারে তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও জানানো হয়। 

গত ১৩ মার্চ রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে মৃত্যু হয় ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। পরে ১৪ মার্চ মরহুমের প্রথম নামাজে জানাযা গ্রিন রোডে এবং ধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাযা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

অমিয়/

যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার ৩৮৩

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:২৫ এএম
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার ৩৮৩
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী, ডাকাত, সন্ত্রাসীসহ মোট ৩৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ডাকাত দলের সদস্য, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী, কিশোর গ্যাং সদস্য ও মাদক ব্যবসায়ী। ৬ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত সাত দিন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান অভিযানে গত সাত দিনে যৌথ বাহিনী ওই সব অপরাধে জড়িত অভিযোগে ৩৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময়ে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি পিস্তল, একটি রিভলবার, দুটি শুটারগান, গোলাবারুদ, ককটেল বোমা, মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, পাসপোর্ট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক, এনআইডি, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড ও নগদ অর্থ। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তারদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনস্থ ইউনিটগুলো অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওই যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

সরকার যে সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে তা যেন শেষ করতে পারে: তথ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০০ এএম
সরকার যে সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে তা যেন শেষ করতে পারে: তথ্য উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুরের ছারছীনা দরবার শরিফের ১৩৫তম মাহফিলের শেষ দিনে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জুমার নামাজের আগে সেখানে আলোচনায় অংশ নেন তিনি। 

মাহফুজ আলম বলেন, ‘দেড়শতাধিক বছর ধরে ছারছীনা সিলসিলার খেদমত এই উপমহাদেশে অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের কাছে দোয়া চাই, সরকার যেসব সংস্কারের দায়িত্ব হাতে নিয়েছে তা যেন শেষ করতে পারে। আমরা বাংলাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং দেশকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যেন আমাদের অর্পিত দায়িত্ব শেষ করতে পারি। বিশেষ করে আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আপনাদের সন্তান হিসেবে এ দেশের খেদমত করতে পারি।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ছারছীনা দরবার শরিফের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মাদ্রাসা তৈরি করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামি শিক্ষা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। তারা শিক্ষা দিচ্ছে ইসলাম শান্তির ধর্ম।’

মাহফুজ আলম বলেন,  ‘আমার পরিবার ছারছীনা দরবার শরিফের মুরিদ ছিল। আজ আমি এখানে এসেছি পীর সাহেবের কাছে আমার ও দেশের জন্য দোয়া চাইতে। এখানে আসার মাধ্যমে ছারছীনা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ সূফী নেছার উদ্দিন আহমদের (রহ.) উপমহাদেশে দীনি সংস্কার সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পেরেছি।’

আখেরি মোনাজাতে ছারছীনা শরিফের পীর সাহেব আলহাজ হজরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে তিন দিনব্যাপী মাহফিলের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। 

পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান, বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন, পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 
এর আগে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছারছীনা দরবার শরিফের মরহুম পীরদের কবর জিয়ারত করেন।

দূষিত বাতাসের শহরে ঢাকা আজ দশম

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:৪১ এএম
দূষিত বাতাসের শহরে ঢাকা আজ দশম
ছবি: খবরের কাগজ

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) স্কোরে দূষিত বাতাসের শহরে সারা বিশ্বের মধ্যে ঢাকা আজ দশম স্থানে রয়েছে।

শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ১৪২।

একই সময়ে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কিনশাসা ১৮১ একিউআই স্কোর নিয়ে প্রথম, নেপালের কাঠমান্ডু ১৭০ একিউআই স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কাঠামান্ডুর সমান একিউআই স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে।

যখন কণাদূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকে, তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘসময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

একিউআই মান ১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন।

সুমন/

অগ্নিঝরা মার্চ কড়া নিরাপত্তায় ঢাকায় এলেন ইয়াহিয়া

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:২৭ এএম
কড়া নিরাপত্তায় ঢাকায় এলেন ইয়াহিয়া
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আজ অগ্নিঝরা ১৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র হয়। এই উত্তাল-অগ্নিগর্ভ আন্দোলনের মধ্যে কড়া নিরাপত্তায় ঢাকায় আসেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বিমানবন্দরে গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান তাকে স্বাগত জানান। কোনো সাংবাদিক ও বাঙালিকে এ সময় বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

পূর্ব পাকিস্তানের অফিস-আদালতে পূর্ণ কর্মবিরতি চলে। রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী সভা ও শোভাযাত্রা হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ে। এদিন কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে নারীদের সভা হয়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বেতার ও টিভি শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।

পাকিস্তানি সামরিক শাসক ও পিপিপির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার নিয়ে যথারীতি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখেন। নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা যাতে না যায়, সে জন্য উর্দুভাষী সামরিক শাসকদের সঙ্গে হাত মেলান ভুট্টো। 

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘আওয়ামী লীগ: যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘১৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেন, গণমাধ্যম ও স্বার্থান্বেষী মহল প্রদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখা দিয়েছে; তিনি কী বলতে চেয়েছেন তা সাধারণ মানুষ ঠিকই বুঝতে পেরেছে।’

মহিউদ্দিন আহমদ আরও লিখেছেন, ‘১৫ মার্চ করাচির নিশতার পার্কে এক জনসভায় ভুট্টো দাবি করেন, জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, সংবিধান তৈরির আগে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার যে দাবি শেখ মুজিব করেছেন, তা হতে হবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে। দেশের দুটি অংশ- পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। সারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে, যদি আওয়ামী লীগ ছয় দফা দাবি থেকে সরে আসে।’

এদিন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে গণসংগীত পরিবেশন ও পথনাটক মঞ্চায়ন করেন। নতুন সামরিক বিধি জারির প্রতিবাদে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে সভার আয়োজন করে। সভায় ছাত্রনেতারা অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশবাসীকে অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদস্বরূপ শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন অব্যাহত রাখেন। শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবদিনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন ও অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। 

খুলনার হাদিস পার্কের জনসভায় জাতীয় লীগপ্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, বাংলার প্রত্যেক মানুষ আজ বঙ্গবন্ধুর (শেখ মুজিবুর রহমান) পেছনে একতাবদ্ধ। রেডিও, টিভি, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, সেক্রেটারিয়েট প্রভৃতি আজ আওয়ামী লীগপ্রধানের আজ্ঞাবাহী। এদিন নেত্রকোনায় সুইপার ও ঝাড়ুদাররা ঝাড়ু, দা, লাঠি এবং কোদাল নিয়ে মিছিল করেন। 

এ ছাড়া বগুড়া, খুলনা, রংপুর, কুমিল্লা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার পক্ষে মিছিল-সমাবেশ হয়।

১৯৭১ সালের ১৫ মার্চের আরও কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘বাংলাদেশের তারিখ’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইস্তিকলাল পার্টির প্রধান আসগর খান পেশোয়ার আইনজীবী সমিতির সভায় বলেন, ‘এই মুহূর্তে শেখ মুজিবুর রহমান দেশের দু’অংশকে একত্রে ধরে রেখেছেন। সংখ্যাগুরু দলের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক এবং এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রসম্মত।’

সাংবাদিকদের কাছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান খান ওয়ালি বলেন, ‘নির্বাচিত পার্লামেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। বাস্তবক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের আর অস্তিত্ব নেই। ১ জুলাই থেকে এখানে চারটি পৃথক প্রদেশ হয়েছে।’