ঢাকা ১০ চৈত্র ১৪৩১, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
English

রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনায় পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২১ পিএম
রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনায় পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

রাষ্ট্র পরিচালনা ও প্রশাসনিক পদ্ধতি পরিবর্তনে দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে আলাদা-আলাদা ছয়টি ফাইলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ছয়টি কমিশন হলো- সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

সংস্কারের প্রস্তাবে রয়েছে- সংবিধানে ৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন করা, দুদককে ন্যায়পালের আদলে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, সংসদীয় ৩০০ আসন থেকে ৪০০তে উন্নীতকরণ, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে পুলিশ কমিশন গঠন ও জনপ্রশাসনে উপসচিবের পদোন্নতিতে প্রশাসন ৫০ শতাংশ, অন্যান্য ক্যাডার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ।

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব
সংবিধান সংস্কারে ৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ, ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন, জবাবদিহি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিষয়ে বলা হয়- সংসদে নিম্নকক্ষ পরিচিত হবে জাতীয় সংসদ নামে আর উচ্চকক্ষ সিনেট নামে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে ৪ বছর। নিম্নকক্ষ সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। এর মধ্যে ৩০০ জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। আর ১০০ জন নারী নির্ধারিত ১০০ নির্বাচনি এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এর কাজ হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই। এ ছাড়া সংবিধানে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে ‘বাঙালি’ নয় পরিচিত হবেন ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে। সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে দুজন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন, যাদের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত হবেন। কোনো সংসদ সদস্য একসঙ্গে একটির বেশি পদে অধিষ্ঠিত হবেন না। পদগুলো হলো- প্রধানমন্ত্রী, সংসদনেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান। অর্থবিল ব্যতীত নিম্নকক্ষের সদস্যরা তাদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন। আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সব সময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার
দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে ১৬টি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে ১৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন কমিশন উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কারে ২ শতাধিক সুপারিশ করেছে। 

এই কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা- যার মেয়াদ হবে ৪ মাস, না ভোটের প্রচলন, গণভোট, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর শাসনকালের মেয়াদ, নারী আসনসহ সংসদীয় আসন ৪ শতে উন্নীতকরণ, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোট আয়োজনকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা, আইসিটি আইনে সাজাপ্রাপ্তদের কোনো দলের সদস্য না করা, গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের নির্বাচনের বাইরে রাখার বিধান, ব্যালটের পাশাপাশি অনলাইন ভোটিং সিস্টেমের প্রস্তাব, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে সংশ্লিষ্ট আসনে পুনরায় নির্বাচন আয়োজনসহ নানা বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। 

বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে প্রাধান্য পাওয়া সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা, প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারকদের নিয়োগ, বিচারক হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা পরিবর্তন, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো সংশোধন, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয়, আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ, আইনের সংস্কার, আইন শিক্ষার সংস্কার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ এবং আদালত অঙ্গন দলীয়করণমুক্ত রাখা প্রভৃতি। 

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলার বিষয়ে বলা হয়েছে- সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের প্রাধান্য এবং আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান প্রণয়ন। যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন’ গঠনের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন। প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত কমিশন কর্তৃক উন্মুক্ত আবেদনের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই এবং সুপারিশ।

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, সাবেক বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি ছাড়া অপসারণযোগ্য নন, এমন পদে আসীন ব্যক্তিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুরোধ ছাড়াও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার ক্ষমতা কাউন্সিলকে প্রদান।

দুদক সংস্কার প্রস্তাব
দুর্নীতি দমন কমিশনকে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ৪৭ দফা সুপারিশের মধ্যে কমিশনারদের পদ তিন থেকে বাড়িয়ে একজন নারীসহ ৫ সদস্যে উন্নীত এবং কমিশনের মেয়াদ পাঁচ থেকে কমিয়ে চার বছর করতে বলা হয়েছে। অবশ্য ২০০৪ সালে প্রণীত দুদক আইনে মেয়াদ ৪ বছরই ছিল। পরে আইনের সংশোধনীতে মেয়াদ ৫ বছর করা হয়। দুদকের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের পুরো অংশ সরাসরি দুদকের স্বতন্ত্র তহবিলের দেওয়া, কমিশন নিয়োগে সার্চ কমিটির নাম বদলে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষক কমিটি’ গঠন, দুদক আইনের সংস্কার, প্রেষণজনিত আমলানির্ভরতা কমানো, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো ও প্রণোদনার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষক’ কমিটির বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা এড়াতে প্রধান বিচারপতি বাদ দিয়ে তার পরে সুপ্রিম কোর্টে যিনি সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ হবেন, তিনি হবেন বাছাই কমিটির প্রধান, হাইকোর্টের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ একজন সদস্য হবেন, প্রধান বিচারপতির নিযুক্ত একজন থাকবেন- যিনি বাংলাদেশের শাসন সম্পর্কে জানেন, মহাহিসাব নিরীক্ষক, পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে একজন, সংসদ নেতা থেকে মনোনীত একজন সদস্য ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা থেকে মনোনীত একজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে বাছাই কমিটি। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির যে বিধান করা হয়েছিল, সেটি পুরোপুরি বিলুপ্ত করতে হবে। 

জনপ্রশাসন সংস্কার প্রস্তাব
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দেশের পুরোনো ৪টি বিভাগ অনুযায়ী প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বলা হয়েছে। ক্যাপিটাল সিটি সরকার, মন্ত্রণালয়ের কলেবর কমিয়ে ২৫টি মন্ত্রণালয় করা ও সরকারি সেবার প্রাপ্যতা নিয়ে নিয়মিত গণশুনানির আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদবি পরিবর্তন, জেলা পরিষদ বাতিল, উপজেলা পর্যায়ে একজন এএসপিকে ‘জননিরাপত্তা অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন এবং উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে বলা হয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ২৫ ভাগ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পুলিশ সংস্কার প্রস্তাব
বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভেরিফিকেশনসহ ৬৩ বিষয়ে সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। এতে বলা হয়েছে, ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করা, যাদের তদন্ত-সংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ব্যতীত অন্যত্র বদলি করা যাবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) চাকরিপ্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রহিত করা, রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাই বন্ধ, ভেরিফিকেশনের কাজ সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে শেষ করা এবং অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজনে ১৫ দিন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিটি থানা বা উপজেলায় একটি ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। যারা ওয়াচডগ বা ওভারসাইট বডি হিসেবে কাজ করবে এবং দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, পদায়ন, বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থানভেদে নদীপথের অপরাধ কমাতে ভাসমান থানা গঠন করা, নারী ও জেন্ডার সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, লিগ্যাল অফিসার্স সেল ও লিগ্যাল এক্সপার্ট নিয়োগ, কর্মঘণ্টার ক্ষেত্রে আট ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত প্রণোদনা, মানসিক চাপ হ্রাসের জন্য পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও মেলামেশার সুযোগ, বিনোদন কার্যক্রম গ্রহণ, আবাসন সমস্যা নিশ্চিত করা, নির্দিষ্ট মেয়াদে ছুটি ভোগ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। জনকেন্দ্রিক ও জনবান্ধব পুলিশিং করার জন্য নিয়মিত টাউন হল সভা, নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন, এক দিন পুলিশ হয়ে দেখুন শিরোনামে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি পুলিশিংব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ, সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করে সরকার।

গত ১১ সেপ্টেম্বর গঠিত হওয়া ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্রসচিব সফর রাজ হোসেনকে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে দুদক সংস্কার কমিশন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা পুরস্কার দেবেন মঙ্গলবার

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা পুরস্কার দেবেন মঙ্গলবার
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫ তুলে দেবেন আগামী মঙ্গলবার (২৫ মার্চ)। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পদক দেওয়া হবে।

রবিবার (২৩ মার্চ) তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)। সূত্র: বাসস

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি
ছবি: খবরের কাগজ

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জনভোগান্তি, হতাহতের ঘটনা, ও দুর্নীতি উদঘাটনে অবিলম্বে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি এসেছে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদদের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে। 

পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধার ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পের ফ্লাইওভার বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ১০০তম দিনে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিবের সঞ্চালনায় ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুদ্দিন তুহিন, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, প্রাণ প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির মুখপাত্র ইবনুল সৈয়দ রানাসহ আরও অনেকে। 

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান বলেন, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন পায়। তবে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতির কারণে তিন বছরের এই প্রকল্প এক যুগ পার হলেও সম্পন্ন করা যায়নি। এতে এই প্রকল্প ঢাকাবাসীর জন্য জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পের পাশাপাশি সাপোর্ট টু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নাম দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ইউটিলিটিস স্থানান্তর এবং পরামর্শক সেবার বড় একটা খরচ আলাদা করে ফেলা হয়েছে। নামে পিপিপি প্রকল্প হলেও প্রকৃতপক্ষে এই প্রকল্পের প্রায় ৫২ দশমিক ৯ ভাগ আর্থিক বিনিয়োগ হচ্ছে জনগণের করের টাকায়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের ১২৮ একর জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকা হিসাব করলে এই প্রকল্পের সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ ৬০ শতাংশ পার হয়ে যায়।

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় আইন ও পরিকল্পনার ব্যত্যয় করে পরিবেশ ও জলাশয় ধ্বংসকারী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক এর পূর্ণাঙ্গ কারিগরি নকশা, অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও সামগ্রিক লাভক্ষতির উপযোগিতা বিশ্লেষণ, পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন, পরিবহনগত সমীক্ষা প্রতিবেদন ও সামাজিক প্রভাবগত বিশ্লেষণ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। জনগণ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত সাপেক্ষে পুরো প্রকল্পের পূনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে পান্থকুঞ্জ রক্ষায় ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন পরিবেশবিদরা।

জয়ন্ত সাহা/মাহফুজ

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১০:১৪ পিএম
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে কোনো চুক্তি সই হবে না। তবে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। 

রবিবার (২৩ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকালে চীনের প্রস্তাবিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশ যুক্ত হবে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জিডিআইতে যুক্ত হতে আমাদের আপত্তি নেই।’

এদিকে আগামী মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

ভারত উত্তর দিয়েছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ভারতের উত্তর এখনো আমরা পাইনি।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর সামনে রেখে রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘এই বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি হচ্ছে। এই সফর ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর সামনে রেখে আমরা এখনো কাজ করছি। দুই দেশ কীভাবে পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।’

আগামী ২৬ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের সফরে চীনে যাচ্ছেন।

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জনগণ দুর্নীতিবাজ বলে ধারণা করেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। 

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখার উপসচিব জামিলা শবনম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। 

রবিবার (২৩ মার্চ) এটি প্রকাশ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব ও সরকারি দপ্তরের মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব এবং ওপরের স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি গঠন করে সরকার। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির দ্বিতীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের বিষয়ে জনমনে দুর্নীতিবাজ মর্মে ব্যাপক ধারণা রয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

স্বাধীনতা দিবসে উন্মুক্ত থাকবে নৌবাহিনীর জাহাজ

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৭ পিএম
স্বাধীনতা দিবসে উন্মুক্ত থাকবে নৌবাহিনীর জাহাজ
ফাইল ছবি

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নির্ধারিত জাহাজগুলো জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। 

রবিবার (২৩ মার্চ) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, নৌবাহিনীর ওই জাহাজগুলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা, বরিশাল ও চাঁদপুরের নির্ধারিত স্থানে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এর মধ্যে ঢাকার সদরঘাটে নৌবাহিনীর জাহাজ (বানৌজা) চিত্রা, নারায়ণগঞ্জের পাগলা নেভাল জেটিতে বানৌজা অতন্দ্র, চট্টগ্রামের নিউ মুরিংয়ে (নেভাল বার্থ-২) বানৌজা সমুদ্র অভিযান, খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ টার্মিনালে বানৌজা অপরাজেয়, মোংলায় দিগরাজ নেভাল বার্থে বানৌজা ধলেশ্বরী, বরিশালের মেরিন ওয়ার্কশপ জেটিতে বানৌজা পদ্মা এবং চাঁদপুরে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বানৌজা শহিদ ফরিদ পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।