
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশকে এই সমস্যার জন্য তহবিল নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান গত শুক্রবার জাতিসংঘের রোহিঙ্গা মুসলিম মায়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব এই প্রতিশ্রুতি দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে এই সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহাসচিব গুতেরেস কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা স্মরণ করে রোহিঙ্গাদের জন্য তার উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তারা নিয়মিত বৈষম্য ও মৌলিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের শিকার।
তিনি আট বছর ধরে মায়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার প্রশংসা করেন। গুতেরেস এই সংকটময় মুহূর্তে রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের অপরিহার্য ভূমিকার স্বীকৃতি দেন।
এ সময় বাংলাদেশের খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করেন। যাতে এই বছর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে এই সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
ড. রহমান রাখাইন রাজ্যের গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরে সতর্ক করে দেন, আসন্ন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ রাজ্যটিতে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। তিনি হ্রাস পাওয়া বিদেশি তহবিল পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং পর্যাপ্ত সম্পদ সংগ্রহের জন্য তার সদিচ্ছার আহ্বান জানান। তিনি গুতেরেসকে সাহায্য প্রদানকারী ও গ্রহীতাদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় রোহিঙ্গা শিবিরে সহিংসতা, ভয়ভীতি, বৈষম্য ও স্থানচ্যুতি থেকে মুক্ত রাখতে এবং বিমান ও বোমা হামলা বন্ধ নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়।
ড. রহমান মহাসচিবকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা সম্পর্কেও অবহিত করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
জবাবে মহাসচিব দাভোসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাম্প্রতিক সময়ে বৈঠকের কথা স্মরণ করেন এবং সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিত্বের প্রতি তার ব্যক্তিগত মনোযোগের আশ্বাসও দেন।
ড. রহমান ইউএনডিপি প্রশাসক আচিম-স্টেইনার এবং জাতিসংঘের শান্তি কার্যক্রমবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন-পিয়ের-ল্যাক্রোইক্সের সঙ্গেও পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।