
বিগত দিনে নির্বাচন কমিশনের বদনামের সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো সংস্থাটির ওপর রাজনৈতিক প্রভাব- এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, তার কমিশন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়াতে চায় না। জনগণকে দেওয়া ওয়াদা অনুযায়ী যথাযথ নির্বাচন করতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি- আরএফইডি আয়োজিত সাংবাদিক হোসাইন জাকির বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, ‘ইসির এত বদনাম, এত গালি দেয়, এটা কেন হল? এর ১শ’টা কারণ বলতে পারবেন, ২শ’টা কারণ বলা যাবে। কারণ বিগত দিনে আমরা রাজনীতির কাছে নির্বাচন কমিশনকে সঁপে দিতে দেখেছি। কিন্তু আমার কাছে সংকটের এক নম্বর কারণ হল- পলিটিক্যাল কন্ট্রোল অব দ্য ইলেকশন কমিশন বা ইসির ওপর রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনীতিবিদদের ইসির ওপর এ ধরনের ইনফ্লুয়েন্স বন্ধ করা সম্ভব না হলে আগের অবস্থার উত্তরণ সম্ভব হবে না। সেই আগের অবস্থাই রয়ে যাবে’। তাই নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফেরাতে রাজনীতিকদের প্রভাব বিস্তার বন্ধ করার ওপর তাগিদ দেন সিইসি।
কমিশনের পরিকল্পনা সম্পর্কে সিইসি নাসির উদ্দিন আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে চাই না। রাজনীতিতেও ঢুকতে চাই না। কমিশন কমিটমেন্ট অনুযায়ীই কাজ করবে। আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিরপেক্ষ থাকতে আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন। তবে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাস্তবে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও একই রকম। সব জায়গায় মতদ্বৈধ থাকবে। ভিন্নমত মানেই বিপক্ষে না। একই বিষয়ে ভিন্নমত থাকবেই। এটা সহজ হিসাব। এই জিনিসটা অনেকে মানতে পারে না। তবে মানার বিষয়ে আমার অভ্যাস আছে। আমাকে নিয়ে সমালোচনা করলে ধরে নেব কোনো ঘাটতি বা সমস্যা রয়েছে, তখন নিজেকে শুধরে নেব।’
বিগত দিনে সবাই তালিয়া বাজাতে বাজাতে দেশটার ১২টা বাজিয়েছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘তালিয়া বাজানো আমাদের ভুলে যেতে হবে। সব বিষয় বাস্তবতার ভিত্তিতে দেখতে হবে। একজন একটা কথা বললো, আর আমি তালি বাজাতে থাকলাম- এটা যাতে না হয়। আর ইসির একার পক্ষে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সমস্যা আসবে, সেসব সমাধান করেই কমিশন সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য আমরা সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি’।
আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানে আরএফইডির উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক হোসাইন জাকির বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন। এবার তিন মাধ্যমে (প্রিন্ট, টেলিভিশন ও অনলাইন ক্যাটাগরি) পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- দৈনিক ইত্তেফাকের সাইদুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের মাহমুদুল হাসান ও বিডি২৪ লাইভ ডটকমের মেহেদী হাসান। এ সময় নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এলিস/মেহেদী/