
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সম্ভাব্য বাজেট ৫ হাজার ৯২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার মধ্যে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে ইসি বাজেটে রেখেছে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর স্থানীয় সরকারের পাঁচ স্তরের নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমদের সভাপতিত্বে সর্বশেষ সভায় ভোটের সম্ভাব্য এই ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করা হয়।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য আরও খাত রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের অগ্রাধিকারের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচনের জন্যও প্রায় সমান অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে কমিশনের ঘাটতি আছে ৫ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। সংসদ নির্বাচন বাবদ ২৮শ’ কোটি টাকা চাহিদা দিলেও তা কমে আসতে পারে। সবকিছু ভোটের সময়কার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। ইসির প্রস্তাবিত চাহিদা সরকার যাচাই-বাছাই করবে এবং ইসি সচিবালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সেটার পরিমাণ চূড়ান্ত হবে।’
এদিকে ২০২৬-২৭ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৮২৯ কোটি ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৭২৪ কোটি ৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা চেয়েছে কমিশন। এ ছাড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম, জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ ও বিতরণ, নির্বাচন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ভোটার তালিকা খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ ০৫ হাজার টাকা। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৭০ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার টাকার সংস্থান রাখার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। আর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭১ হাজার এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৪০ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। ইসির আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যমেয়াদি বাজেট প্রাক্কলনের কার্যবিবরণী থেকে এসব চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সরকারপ্রধানের পরিকল্পনা ধরেই ভোটের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সিইসি।
বিগত ১২ নির্বাচনে ইসির ব্যয়
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই বছরের মাথায় হতে যাওয়া ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আগের বারের চেয়ে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বেশি ধরা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা। পরে তা আরও বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ওই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়। আর বাকি ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। ফলে অর্ধেক এলাকায় ভোট হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ কমে আসে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে ইসির বাজেট ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর হওয়া অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ইসির ব্যয় ছিল ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে বাজেট ছিল ৩৭ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ১৯৮৬ সালে হওয়া তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ইসির ব্যয় ধরা হয় ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
এলিস/সালমান/