বেলা ২টা। গরমের উত্তাপ উপেক্ষা করে রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনী চকসহ নিউ মার্কেট এলাকায় ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন আসন্ন ঈদের প্রিয় পোশাকের সন্ধানে। শুধু পোশাক নয়, চলমান রমজান মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন অনেকে।
বন্ধ হয়ে গেছে সন্তানদের স্কুল। ফলে অনেকে ঈদের কেনাকাটা আগেভাগে শেষ করে চলে যাবেন গ্রামের বাড়িতে। তাই রমজানের এই সময়ে বিক্রেতাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের সামাল দিতে। রাতে চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। তাই ক্রেতারা বলছেন, রাতের কেনাকাটা বাদ দিয়ে দিনেই শেষ করতে হচ্ছে সব প্রয়োজন।
রাজধানীর বসুন্ধরা বা যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বড় শপিং মলগুলোতে এখনো ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভিড় দেখা না গেলেও নিউ মার্কেট এলাকায় প্রতিদিনই হাজারও মানুষের পা পড়ছে।
মোহাম্মদপুর থেকে নিলুফা বেগম এসেছেন তার আট বছরের ছোট মেয়েকে নিয়ে গাউছিয়া মার্কেটে। মেয়ের জন্য নতুন জামার পাশাপাশি নিজের জন্য কিনবেন বোরকা। গাউছিয়া মার্কেটের ইসমাইল ম্যানশনে কথা হয় তার সঙ্গে। নিলুফা বেগম বলেন, ‘ইফতারের পর মূলত ঘরের নানা কাজ থাকে। সে সময় বের হওয়া যায় না। তাই বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়েই মার্কেটে এসেছেন। আর দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলার সার্বিক যে অবস্থা তাতে রাতে বের হওয়া নিরাপদ বোধ করি না।’
তিনি বলেন, ‘এখানে সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের জিনিসপত্রই পাওয়া যায়। ঈদের কেনাকাটা শেষ হয়েছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, না এখনো শেষ হয়নি। অল্প অল্প করে কিনছি, দেখছি।’
ইসমাইল ম্যানশনের আল্লাহ ভরসা বোরকা কালেকশনের বিক্রেতা নাজমুল বলেন, এখন অনেকে ফ্যাশনেবল বোরকা পছন্দ করেন। ঈদের জন্যও নতুন বোরকা কিনেন। আমাদের বেশির ভাগ বোরকা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়। তবে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী বোরকা বানিয়েও দেওয়া হয়। দরদামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩৫০০ টাকা দামেরও বোরকা আছে।
ক্রেতা কেমন জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, আগের মানুষ ২০ রোজার পর মূলত ঈদের কেনাকাটায় আগ্রহ দেখাত। এখন রজমান শুরু হওয়ার পর থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করে। আমরাও সে অনুযায়ী সব নতুন কালেকশন সংগ্রহে রাখছি। তবে ২০ রোজার পর থেকে মূলত ঈদের কেনাকাটা বেশি জমে।
গত বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সায়েন্সল্যাব হয়ে নিউ মার্কেট পর্যন্ত দুপুর বেলাতেই মানুষের উপস্থিতি বেশি। দোকানিরা বলছেন, ইফতারের আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের চাপ থাকে সবচেয়ে বেশি।
এ ছাড়া এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটায় দোকানগুলোতে ভিড় করছেন তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের ক্রেতারা। সায়েন্সল্যাবের বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট আর প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে তরুণদের পছন্দের পাঞ্জাবি কিনতে।
ঈদের সময় গরম থাকবে। সুতির পাঞ্জাবির ভালো কালেকশন দিয়ে সাজানো হয়েছে ঈদের আয়োজন, বললেন সায়েন্সল্যাবের মোড়ে রূপসী বাংলার বিক্রেতা লিয়াকত। পোশাকের দাম কেমন, প্রশ্নে তিনি বলেন, দাম আগের বছরের মতোই রাখা হয়েছে। যাতে সব ধরনের ক্রেতাই কিনতে পারেন।
মেয়েদের থান কাপড় আর থ্রি-পিসের জমজমাট কেনাকাটা দেখা গেছে সুবাস্তু আরোমা সেন্টারে। মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গিয়েই দেখা গেল থরে থরে সাজানো থান কাপড় আর রংবেরঙের থ্রি-পিস। ক্রেতারা কিনছেন মাপ অনুযায়ী থান কাপড়। আর রেডিমেড কাপড়ের দোকানগুলোতেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মার্কেটের মদিনা ফ্যাশনের ম্যানেজার রেফায়াত হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সব সময় জমজমাট থাকে এই মার্কেট। মূলত থান কাপড় আর থ্রি-পিসের জন্য এই মার্কেট সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।
তিনি বলেন, থ্রি-পিসের ঈদের কালেকশন রজমানের প্রথম থেকেই আসতে শুরু করে। ঈদ করতে যারা গ্রামের বাড়িতে যান তারা রোজার শুরুতেই আনস্টিচড থ্রি-পিস কিনে তৈরি করে নেন। এ ছাড়া আমাদের কাছে রেডিমেড থ্রি-পিসও আছে। সেগুলোর কাটতি বেশ ভালো।
শুধু মার্কেটগুলোতে নয়, এর মধ্যে ঈদের কেনাকাটা জমতে শুরু করেছে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাত আর নিউ মার্কেটের সামনের দোকানগুলোতে ঈদের বাহারি পোশাকের পাশাপাশি গৃহস্থালি নানা পণ্য কিনতে ক্রেতাদের বেশ উপস্থিতি ছিল।
তবে ঈদকে সামনে রেখে এ এলাকায় আগে যেসব বিক্রেতা গৃহস্থালি পণ্য বিক্রি করত তাদের অনেকেই এখন বাচ্চাদের পোশাক, কেউ জুতা, আবার কেউ থ্রি-পিস বিক্রি করছেন। নিউ মার্কেটের সামনে বাচ্চাদের জামা বিক্রি করছিলেন আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আগে তিনি গৃহস্থালির নানা পণ্য বিক্রি করতেন। ঈদকে সামনে রেখে বাচ্চাদের জামা বিক্রি করছেন। দাম ৪০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। ক্রেতা কেমন জানতে চাইলে বলেন, ক্রেতা আছে। দুপুরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের বেশি ভিড় থাকে। তবে ইফতারের পরও ক্রেতা আসেন।
গাউছিয়া মার্কেটের পাশে পাকিজা তাঁতবাজার ঘুরেও দেখা গেছে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি। মেয়েদের গহনার জন্য পরিচিত এই মার্কেটের বিক্রেতারা বললেন, ইফতারের পর পরই বেশ জমে ওঠে এই মার্কেট। সব ধরনের কেনাকাটা শেষ হলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কেনার জন্য মূলত ক্রেতারা এখানে ভিড় করেন। ফলে ঈদের সপ্তাহখানেক আগে খুব জমে ওঠে এই মার্কেট।