ঢাকা ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের জনগণ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ পিএম
আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
বাংলাদেশের জনগণ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’কে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য প্রিন্ট-এর সিনিয়র সম্পাদক মৌসুমী দাস গুপ্ত। গত ৫ আগস্ট সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন খবরের কাগজ-এর সিনিয়র সহ-সম্পাদক সানজিদ সকাল

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তার বোনকে নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে ভারতে পৌঁছেছেন। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

ড. ইউনূস: বাংলাদেশে আমরা এখন স্বাধীন ও সার্বভৌম। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখল করে রাখা হয়েছিল। শেখ হাসিনা শক্তি ব্যবহার করে স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করছিলেন। তিনি সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন। এখন বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন মতামত পোষণ করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের জনগণ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে সারা দেশে বিজয় উদযাপন করছে। আমি তরুণদের স্বাগত জানাই এমন একটি বিজয় অর্জনের জন্য।

তরুণরা সবাইকে একত্রিত করতে পেরেছে এবং দেশবাসীকে মুক্ত করেছে। সবাই স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজে পেয়েছে এবং আনন্দ উল্লাস করছে। আমরা আবার নতুন করে দেশকে পুনর্গঠন করতে পারব। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এবার নতুন করে দেশ আবার মুক্ত হলো। আমরা দেশকে নতুন করে সাজাতে পারব। বাংলাদেশকে সুন্দর একটি দেশে রূপান্তর করতে চাই। আমরা সেভাবেই প্রতিজ্ঞা করব। ছাত্র ও তরুণরা আমাদের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে। আমরা সেটাই দেখার জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? সেনাপ্রধান দেশের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন। সেই অন্তর্বর্তী সরকারকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. ইউনূস: আমি আশা করি, সবকিছু ঠিকমতোই হবে। শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন। আমরা এখন মুক্ত। আমরা যা চাইব, সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। পূর্বের ইস্যুগুলো বিলীন হয়ে যাবে। সবকিছুতেই নতুন কিছু নিয়েই আমরা যাত্রা শুরু করব। 

বাংলাদেশে যা ঘটছে তাতে আপনার কি কোনো ভূমিকা থাকতে পারে?

ড. ইউনূস: আমি সব সময় জনগণের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবস্থা ও অন্য সবকিছু নিয়েই দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। আমি আগামী দিনগুলোতে কাজ করার ভালো সুযোগ পাব। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে আমি কাজ করার তেমন কোনো পরিবেশই পাইনি। কারণ তিনি সব সময় আমার পেছনে লেগেছিলেন এবং তাড়া করে বেড়িয়েছেন। আমি এখন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দেশের কাজে নিয়োজিত করতে চাই, যা আগে কখনো পারিনি। 

আপনার শিগগিরই বাংলাদেশে ফেরার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

ড. ইউনূস: অবশ্যই, আমি খুব শিগগিরই বাংলাদেশে ফিরব। গণযোগাযোগ মাধ্যমে ফুটে উঠেছে যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে আগুন দিয়েছে। শেখ মুজিবের যত ম্যুরাল ছিল তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 

শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

ড. ইউনূস: দেশের বর্তমান দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় শেখ হাসিনা নিজের জন্য কী অর্জন করেছেন। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য কতটুকু করে যেতে পেরেছেন। তিনি দেশের জন্য যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল। বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে সে ক্ষেত্রে তরুণদের দোষ দেওয়া যাবে না। শেখ হাসিনার ব্যক্তিকর্মের ফলেই এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজগুলো হলো। 

আপনি কি মনে করেন শেখ হাসিনা তার পিতার উত্তরাধিকার হিসেবে সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন করেছেন? 

ড. ইউনূস: শেখ হাসিনা তার পিতার গৌরব পুরোটাই নষ্ট করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের ওপর আমেরিকার কোনো প্রভাব আছে কি না? বাংলাদেশের এই ট্রানজিশন মুহূর্তে আমেরিকা কি কিছু করতে পারে?

ড. ইউনূস: জনগণ মনে করে যে ভারত বাংলাদেশের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় ভূমিকা পালন না করার জন্য আমেরিকার ওপর জনগণ অসন্তুষ্ট। কারণ বাংলাদেশের সবকিছুই ভারতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কারণে বাংলাদেশের মানুষ আমেরিকার ওপর হতাশ।

আমেরিকা ও ভারত দুই দেশই বাংলাদেশের ওপর ভূমিকা রাখবে। আমার অভিযোগ হলো, আমেরিকা এতদিনে কম ভূমিকা পালন করেছে এবং ভারত সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে বর্তমানে আমেরিকা ও ভারত কেমন ভূমিকা পালন করবে, আমি তা জানি না। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিতে দুই দেশ কেমন ভূমিকা রাখবে তাও বোঝাতে পারছি না। 

ভারত কীভাবে বাংলাদেশে ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়তে পারে কি না?

ড. ইউনূস: বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তা ছাড়া আমরা সার্কভুক্ত দেশ। আমরা নিঃসন্দেহে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। বাংলাদেশেকে কীভাবে পুনর্গঠন করে সাজানো যায়, সেই চিন্তা মাথায় রেখে ভারতের এগিয়ে আসা উচিত। আমরা ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।

আমরা উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ ও মতবিনিময়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখব। বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠুক। 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সভাপতি খালেদা জিয়া অসুস্থ রয়েছেন এবং সরকার বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। অদূর ভবিষ্যতে বিএনপি রাজনীতিতে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে?

ড. ইউনূস: আমরা শেখ হাসিনা সরকার নিয়ে আলাপ করছিলাম। গতকাল আর আজকের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিএনপি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। আমরা বলতে পারছি না যে, ভবিষ্যতে বিএনপি কী করতে পারবে? অন্য কোনো দল বা ছোট দল এগিয়ে আসতে পারে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো দল আগামী নির্বাচনে এগিয়ে আসতে পারে কি না? 

ড. ইউনূস: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলকে বারবার মোকাবিলা করেছে। অবশেষে শেখ হাসিনা সরকার জামায়াতে ইসলামী দলকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অতএব, এই দল নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অন্য কোনোভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটা এখন অনুমান করা কঠিন।

বিএনপি কিছুটা নীরব রয়েছে। কারণ বিএনপি সব সময় আওয়ামী লীগের দ্বারা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এখন যেহেতু দেশ মুক্ত, সেহেতু তারা নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমরা জনগণের কাছে যাব। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কোন দল থাকবে, আর কোন দল থাকবে না এবং কোনো দল পুনরায় নতুন করে শক্তিশালী হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কোনো দলের আবির্ভাব ঘটতে পারে কি না? এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?  

ড. ইউনূস: অবশ্যই হতে পারে। নতুন কোনো দলের আবির্ভাব হতে পারে। তরুণরাই ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে। তরুণরাই দেশকে নতুন করে শক্তি জোগাবে। প্রাচীন ধারণা ও চিন্তাচেতনা ধারণ করা জাতির জন্য ঠিক হবে না। আমাদের ভাবতে হবে তরুণদের নিয়ে।

তরুণরাই দেশের দায়িত্ব নেবে এবং তারাই দেশকে পুনর্গঠন করবে। তরুণরা দেশের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তরুণদের অগ্রগামী হতে সেই ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তরুণরা আমাদের দেশকে মুক্ত করেছে। এবারের আন্দোলনে দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। মুক্তিযোদ্ধারাই সিদ্ধান্ত নেবেন দেশ কোন দিকে আগাবে। 

বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আপনার আহ্বান কী?

ড. ইউনূস: বিজয়কে উপভোগ করুন। বাংলাদেশ এখন মুক্ত। জনগণকে গণতন্ত্রের মূলতন্ত্রে ফিরে আসার আহ্বান করছি। দেশে এখন কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে এবং আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারব। আমরা যদি চেষ্টা করি, বাংলাদেশকে সৃষ্টিশীল ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে গঠন করা সম্ভব।

আমরা একটি আদর্শ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। সার্কমুক্ত দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে দেখাতে চাই। যেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেককে সহযোগিতা করবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বড় আকারে রূপ ধারণ করেছিল। অল্প সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করল এবং তিনি দেশত্যাগ করলেন। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

ড. ইউনূস: দেশ পরিবর্তনের বড় উদাহরণ এই ছাত্র আন্দোলন। দেশে আন্দোলন হওয়া উচিত বলে ছাত্ররা অনুভব করে এবং তারা তা প্রকাশ করে দেখিয়ে দিয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের সূচনা হচ্ছে। এই মুহূর্তে সব বাধা অতিক্রম করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের সব বাধা অতিক্রম করার সেই ক্ষমতা রয়েছে।

বাংলাদেশকে সৃজনশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তরুণরা খুবই নিবেদিত। তরুণরা বাংলাদেশকে ভালোবাসে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণরাই যথেষ্ট। তারা একটি সম্মানজনক জাতি উপহার দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে প্রশ্ন ও প্রত্যাশা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে প্রশ্ন ও প্রত্যাশা
ড. তোফায়েল আহমেদ

বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট, ২০২৪-এ শপথ গ্রহণ করে। এ সরকার পূর্ববর্তী তিন বা চারটি ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের ঐতিহ্যের অনুবর্তী হলেও প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের অন্তর্বর্তী সরকার, বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও লতিফুর রহমানের দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের বিধানবলে গঠিত এবং সংবিধান নির্ধারিত সময়ে তারা দায়িত্ব শেষ করেন। 

বিরাজিত সরকার কাঠামোয় একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থায় তারা কাজের সুযোগ পান। তুমুল একটি হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার অকার্যকর হয়ে পড়লে ২০০৭-০৮-এ ভিন্ন প্রকৃতির একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের ভালো বিকল্প না পাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলেরই দায় ছিল। বিএনপি বিচারপতির অবসরের বয়স বাড়ানোয় আওয়ামী লীগ সিরিয়ালে থাকা সর্বশেষ অবসরে যাওয়া বিচারপতি মাসুদকে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং বিএনপিও অন্য বিকল্প অনুসন্ধান না করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়ে বসে। তার পরের ইতিহাস সবার জানা। 

১/১১-এর সরকারের কাজকর্ম নিয়ে ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণকারী আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে নানা কটু মন্তব্য করলেও তারাই জাতীয় সংসদে দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব কাজকর্ম ও পরিবর্তন সাপেক্ষে আইনকানুনের বৈধতা দান করে। কিছু ধারা পরিবর্তনের নমুনা, যেমন- উপজেলা পরিষদ আইনে ‘জাতীয় সংসদ সদস্যকে উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা ও পরিষদ উপদেষ্টার উপদেশ শুনবে’- এ জাতীয় ধারা সংয়োজন করা হয়। 

যেটি ছিল পরিষদকে অকার্যকর করার একটি অন্যতম হাতিয়ার। আবার ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ আইনটি তারা রেকটিফাই করেননি। ফলে কমিশন অকার্যকর হয়ে পড়ে। দুই বছরের শাসনকালের সেই সরকার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ বেশুমার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির মামলা দায়ের করে। আওয়ামী লীগের সরকার গঠিত হওয়ার পর শেখ হাসিনাসহ সরকারি দলের সবার কয়েক হাজার মামলা প্রত্যাহার হয়ে যায়। 

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দল বিএনপির সবার মামলা বহাল থাকে এবং দ্রুততার সঙ্গে বিচার ও শাস্তি-প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও কর্ম-প্রক্রিয়া আলোচনার আগে এ প্রাসঙ্গিক ইতিহাস অনেক কারণে মনে করার প্রযোজন রয়েছে। কারণ কোনো নতুন ঘটনা-দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে আমরা অবলীলাক্রমে অতীত ভুলে যাই বা ভুলে যাওয়ার ভান করি।

২০২৪-এর অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়ে আলোচনার প্রথম বিষয় হচ্ছে, এ সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী চারটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে প্রেক্ষাপটগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ও সমস্যার বিচারে পর্বতপ্রমাণ পার্থক্য রয়েছে। অনেক প্রশ্ন অনেকে ওঠাচ্ছেন, এ সরকার কবে যাবে? কিন্তু এ প্রশ্নগুলো যৌক্তিকভাবে ওঠাতে গেলে বেশি না হলেও অন্তত দুই বছর এ সরকারকে সময় দেওয়ার প্রশ্ন আসবে। 

লাগলে হয়তো আরও বেশিও দিতে হতে পারে। সরকারের কাজ শুরুর আগে যদি কেউ বলতে শুরু করেন- আপনি কবে যাবেন, তা খুব অন্যায্য ও হঠকারিতা। ৮ আগস্ট ২০২৪-এ শপথ নেওয়ার পর মাত্র এক মাস গত হলো। যদি প্রশ্ন করা হয়,  ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থান না হলে আওয়ামী লীগ আরও কয় বছর ক্ষমতায় থাকত? কখন কবে নাগাদ নির্দলীয় সরকারের অধীনে রাজনৈতিক সমতলভূমিতে নির্বাচন পাওয়া যেত। তার সদুত্তর পাওয়া কঠিন।

সব ধরনের শূন্যতার মাঝে একটি ‘সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ‘শাসন’ এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শুধু একটি নির্বাচন করার জন্য এ সরকার গঠিত হয়নি। এ সরকারের ম্যান্ডেট অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। দেশে পরিপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রের নানামুখী সংস্কার কর্মসূচির। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে। বিশেষত সংস্কার বিষয়ে কমিশন গঠন তার একটি স্পষ্ট ও বাস্তব পদক্ষেপ। সংস্কারের ক্ষেত্রেও সবকিছু অন্তর্বর্তী সরকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে তা হলফ করে বলা যায় না, না পারলেও একটি পথ রচনা করে দিয়ে যেতে পারবে।

এ সময়ের মধ্যে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল বা জোটকে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য নিজেদের পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিটি দলের গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক কাঠামোর গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং প্রত্যেক প্রার্থীর উচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রার্থীর শিক্ষা, নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা, অপরাধ, কালোটাকা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ইত্যাদি নিয়ে সংবিধানে অনেক কিছুই সর্বজনীনতার খাতিরে অনুপস্থিত হলেও আরপিও, আচরণবিধি এবং হলফনামার আট তথ্যের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি মনোনয়নকে জনপ্রত্যাশার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়। এবার সে প্রচেষ্টা আন্তরিকভাবে করতে হবে। 

স্বাভাবিক রাজনৈতিক কারণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত এবং গণতন্ত্রমনা অন্যান্য ডান, বাম ও মধ্যপন্থি দলগুলো আওয়ামী লীগের বিপর্যস্ত অবস্থার সুযোগ নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা নিশ্চয়ই সেভাবে নিজেদের সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করছেন। কিন্তু দেশ পরিচালনার নীতিনির্ধারণ ও যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে তারা কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন, সেটি জাতি দেখতে চাইবে। সে জন্য এখন একটি স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশ তারা পাচ্ছেন। আশা করি, সে সুযোগ গ্রহণ করে তারা নিজেদের ভালোভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন এবং দল পুনর্গঠন করে নেবেন।

ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ সব বাম দল ও মোর্চা সরকারের সঙ্গে সভা করে তাদের মতামত দিয়েছে, সে জন্য তাদের অভিনন্দন। এটিই জাতি আশা করছিল। এখানে জাতীয় পার্টি নিয়ে বড় একটি প্রশ্ন আছে। রাজনীতিতে সুবিধাবাদের জনবিরোধী ভূমিকাকে চিরতরে শেষ করার প্রচেষ্টা হিসেবেই জাতীয় পার্টির ভূমিকার বিষয়টি মনে রাখতে হবে। এ দলটি গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছে। সময়-সুযোগে বর্তমানে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগের অনুগ্রহের দায় শোধে এ ভদ্র ও শিষ্ট চেহারা ভবিষ্যতে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। 

গোলাম মোহাম্মদ কাদের নির্বাচনের আগে ভারত গিয়ে সবকও নিয়েছিলেন। আবার তা জনসমক্ষে প্রকাশে অস্বীকারও করেছিলেন। এসব কুকাজের জন্য তারা কি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বা তাদের বর্তমান অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন বলে জানা নেই। আওয়ামী লীগ যদি ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়; জাতীয় পার্টিও তার অনুগত ও বিশ্বস্ত দোসর হিসেবে দোষী হবে।

দেশের মানুষ একটি স্বচ্ছ রাজনীতি ও সুষ্ঠু নির্বাচন, দলনিরপেক্ষ পেশাদার প্রশাসন, নীতিনৈতিকতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, সুদক্ষ অর্থব্যবস্থা তথা পেশাদার ও দায়িত্বশীল ব্যাংক, ব্যাংকার ও ব্যবস্থাপক দেখতে চায়। দেশের সব নাগরিক ও পেশাদার সংঘ-সমিতি একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের রূপ নিয়েছিল, অনেকে সরকারের দায়িত্বশীল পদে বসে রাজনীতির স্লোগান ধরেছেন এবং দুহাতে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়েছেন, পাচার করেছেন, তাদের বিচার নিশ্চয়ই হবে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের স্বার্থে কাউকে ছাড় দিতে হবে- এ কথা যেন না বলা হয়। কোনো কোনো দল ও মহল বলতে শুরু করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, এমন কিছু যেন না করা হয়। অনেকে রপ্তানি করে তার জন্য প্রণোদনার অর্থ গ্রহণ করে; আবার রপ্তানির মাধ্যমে আয় করা অর্থ বিদেশে রেখে জালিয়াতি করেছেন। বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নানা খাতে অন্যায্য মুনাফা, ব্যাংকের অর্থ ও নানা সংস্থার পদ-পদবি বাগিয়ে লুটপাট করেছেন, তাদের ছাড় ও ছেড়ে দেওয়া চলবে না। 

সংবিধানের প্রজাতান্ত্রিক চরিত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য দ্বিকক্ষবিশিস্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা একটি অন্যতম পদক্ষেপ হতে পারে। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার, যেমন- ‘সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ ও অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য ‘পোস্টাল ব্যালট’ চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিকড় থেকে শিখর পর্যন্ত দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনের অধিকর্তাদের নিজ নিজ পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে। তারা কখনো কোনো দলের আজ্ঞাবহ নয়, তারা হবেন প্রজাতন্ত্রের গর্বিত জনসেবক। 

স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে গণতন্ত্রমুখী ধারায় পুনর্গঠিত করতে হবে। ‘দেশের মালিক দেশের জনগণ’- এ বোধ ও সংস্কৃতি হবে সরকারের মূল দর্শন এবং সরকার হবে স্মল ও স্মার্ট। এগুলো হলো এ সরকার থেকে গণপ্রত্যাশা। সবটা এ সরকার করতে পারবে তা নয়। এখানে এসব প্রত্যাশার দিকগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি পথরেখা তৈরি করবে এবং আগামীর নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে এগুলো নিয়ে বোঝাপড়ার বিষয় আছে। জাতি স্পষ্টভাবে সে রকম একটি বোঝাপড়া দেখতে চাইবে।

লেখক: অধ্যাপক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ
tofailahmed.info

জেন জেড এবং দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২১ এএম
জেন জেড এবং দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি
ড. মতিউর রহমান

জেন জেড প্রজন্ম, যারা সাধারণত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন, সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে তারা বেড়ে উঠেছে। 

ফলে তারা তাদের পূর্বসূরিদের থেকে আলাদা চিন্তাধারা ও আচরণধারাসম্পন্ন। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং ভোক্তা বাজারে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথে তাদের প্রভাব আরও বেশি করে প্রতিফলিত হবে। জেন জেড প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তাদের ডিজিটাল দক্ষতা। ইন্টারনেটের যুগে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত। তাদের এই প্রযুক্তিগত পারদর্শিতা বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম।

প্রজন্ম জেডের ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং খুচরা বিক্রিসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটছে। এই প্রজন্মের ডিজিটাল পেমেন্ট এবং অনলাইন শপিংয়ের প্রতি আগ্রহ বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তি দক্ষতার কারণে জেন জেড প্রজন্ম উদীয়মান গিগ অর্থনীতিতে অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। প্রচলিত চাকরির বাজারের কঠিন নিয়মের পরিবর্তে গিগ অর্থনীতি তাদের স্বাধীনতা ও নমনীয়তার স্বাদ দিয়েছে।

বাংলাদেশের যুবকদের বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক হলেও গিগ অর্থনীতি তাদের জন্য আয়ের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট ওয়ার্ক এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে তরুণরা তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাড়ি থেকেই আয় করার সুযোগ পাচ্ছে। এই নতুন কর্মসংস্থান পদ্ধতি শ্রমবাজারে বিপ্লব ঘটিয়েছে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বিতরণ এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে গভীর প্রভাব ফেলছে।

জেন জেড প্রজন্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাদের উদ্যোক্তা মনোভাব। তারা অনেকেই নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে বা স্টার্টআপে যোগ দিতে আগ্রহী। এই উদ্যোক্তা মনোভাবের পেছনে স্বাধীনভাবে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা এবং প্রচলিত চাকরি বাজারের সীমাবদ্ধতার প্রভাব লক্ষ করা যায়।

বাংলাদেশের এসএমই খাতে প্রজন্ম জেডের উদ্যোক্তাদের আগমন অর্থনীতিকে আরও বৈচিত্র্যময় ও উদ্ভাবনী করে তুলতে পারে। যদি তাদের যথাযথভাবে অর্থায়ন, পরামর্শ এবং অবকাঠামোগত সহায়তা দেওয়া হয়, তা হলে তারা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

জেন জেড প্রজন্ম তাদের পূর্বসূরিদের থেকে ভিন্ন মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকার নিয়ে গড়ে উঠেছে। সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ববোধের প্রতি তাদের গভীর আগ্রহ তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নৈতিক ভোগের মতো বিষয়গুলো তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে তারা এমন ব্যবসা ও ব্র্যান্ডকে সমর্থন করে, যাদের মূল্যবোধ তাদের নিজস্ব মূল্যবোধের সঙ্গে মিলে যায়।

বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার অনেক তরুণ-তরুণী মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবে ভুগছে। এর ফলে তারা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। জেন জেড প্রজন্মের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে ডিজিটাল দক্ষতা, সমালোচনামূলক চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতার উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করা জরুরি। এই দক্ষতাগুলো অর্জন করলে বাংলাদেশের তরুণরা বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। 

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তনে জেন জেড প্রজন্মের জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তরুণ ও বর্ধনশীল এই জনগোষ্ঠী দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এবং ভোক্তা বাজারের একটি বড় অংশ গঠন করে। যদি এই জনগোষ্ঠীর যোগ্যতা ও উদ্যোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়, তা হলে দেশ টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে। যদি আমরা জেন জেড প্রজন্মের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে চাই, তা হলে তাদের সামনে দাঁড়ানো বেকারত্ব, অধিকারহীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। 

তাদের জন্য মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নিশ্চিত করা এবং সামাজিক সেবায় সহজ প্রবেশাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শুধু তাই নয়, একটি সমৃদ্ধ এবং সবার জন্য সমান অধিকারসম্পন্ন একটি সমাজ গড়তে হলে এই তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ওপর জেন জেড প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তার গভীর প্রভাব পড়তে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার এবং তথ্যের সহজলভ্যতা এই প্রজন্মকে রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আগের চেয়ে বেশি সচেতন করে তুলেছে। ফলে তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং তাদের মতামত প্রকাশ করছে।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের মতো সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে জেন জেড প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ তাদের পরিবর্তন ও জবাবদিহির প্রতি গভীর আগ্রহের পরিচয় দেয়। এই প্রজন্ম যখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরও প্রভাবশালী হবে, তাদের স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবি ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও সুস্থ করে তুলবে এবং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে।


বিশ্বায়নের প্রভাবে জেন জেড প্রজন্মের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গভীরভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত পৃথিবীতে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ধারণা এবং বাজারের সঙ্গে পরিচিত। ফলে তারা বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা কার্যকলাপের সুযোগ খুঁজতে আগ্রহী।

তরুণ বাংলাদেশিরা তাদের নতুন চিন্তাধারা ও বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার করছে। তাদের এই উদ্যমী মনোভাব উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতাকে আরও জোরদার করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। তবে এই একীকরণের পাশাপাশি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জও সামনে আসছে। 

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির টেকসই বৃদ্ধির জন্য প্রজন্ম জেডের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারি স্পষ্ট করেছে যে জনস্বাস্থ্য একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। তরুণদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি দক্ষ ও উৎপাদনশীল কর্মশক্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। মহামারি-পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এই সমস্যাগুলোর সমাধান না করা হলে প্রজন্ম জেডের অর্থনৈতিক সাফল্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে জেন জেড প্রজন্মের অবদান অপরিহার্য হবে। তাদের শক্তিশালী ডিজিটাল দক্ষতা, উদ্যোক্তার মনোভাব এবং সামাজিক-পরিবেশগত দায়বদ্ধতার কারণে তারা বিভিন্ন খাতে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। এই প্রজন্মের তরুণরা তাদের দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

পরিশেষে জেন জেড প্রজন্মের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তাদের সামনে দাঁড়ানো বেকারত্ব, বৈষম্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অসমতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জরুরি। এই প্রজন্মের উন্নয়ন ও কল্যাণে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ তাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর সৃজনশীলতা ও উদ্যমকে কাজে লাগিয়ে একটি টেকসই এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী
[email protected]

হত্যা মামলার বিচার এবং সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
হত্যা মামলার বিচার এবং সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত
মাসুদ আহমেদ

সরকার পতনের পরপরই শুরু হয়েছে গণহত্যার জন্য দায়ী সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, পুলিশ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাদিক্রমে হত্যার অপরাধে ফৌজদারি মামলা দায়ের। যদিও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের গণহত্যা এখনো স্বীকৃত হয়নি। ঢাকা মহানগরসহ আরও ছয়টি স্থানে এ পর্যন্ত ৪১০টি মামলা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনারের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। এসবে আসামি ও সাক্ষীর সংখ্যা মোট ৬০ হাজার। 

এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে প্রাথমিক চার্জশিট দিতে প্রয়োজন হবে তাদের নাম, বাবা ও মায়ের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, অপরাধের ধরন, সিআরপিসির প্রযোজ্য ধারা, সাক্ষীদের নাম ও ঠিকানা, সাক্ষ্য, আলামত ও অকুস্থলের বর্ণনা। এ ছাড়া লাগবে ভিডিও ক্লিপ, এফআইআর, নিহতের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, লাশ শনাক্তকারীর স্বাক্ষর, ধ্বংসকৃত সরকারি সম্পত্তির চিত্র এবং বিমাকারীর প্রতিবেদন ইত্যাদি। 

একেকজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এর একেকটি মামলায় শুধু এই বিষয়গুলো প্রথমে হাতে লিখে এবং পরে টাইপ করে চার্জশিটের ছকে পেশ করতে কমপক্ষে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। তার পর তার ওপরস্থ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সার্কেল এএসপি, অতিরিক্ত এসপি ও এসপির সঙ্গে এবং কখনো কখনো সিনিয়র কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলো যাচাই-বাছাই শেষ করে আদালতে পাঠাতে আরও তিন মাস করে সময় লাগবে। এগুলো হচ্ছে সেই সব মামলাসংক্রান্ত, যেগুলোর চার্জশিট সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার অনুমোদন করে আদালতে পাঠাতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। 

আরেক শ্রেণির মামলা এর মধ্যেই পাওয়া যাবে, যেগুলোর চার্জশিট প্রণয়নে জেলা জজ আদালতে শুনানি সম্পন্ন করতে হবে। এই মামলাগুলো যেহেতু হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংসসংক্রান্ত এবং এগুলো দায়ের হচ্ছে ঝড়ের গতিতে, সেহেতু এগুলোর বিচার করার জন্য প্রবল জনচাপ এবং ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের প্রবল চাপ থাকবে দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে। বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা ২ হাজার ১০০ জনের মতো। বিচারাধীন এবং অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। নতুন দায়েরকৃত মামলার দ্রুত বিচার দাবি করা মানেই পুরোনো মামলার বাদীদের প্রতি অন্যায় করা। 

কারণ এতে ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আগে আসলে আগে পাবেন’- সাধারণ ন্যায়বিচারের ভিত্তির চরম লঙ্ঘন। দ্রুত বিচার মানেই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা আগের মামলার শুনানি স্থগিত করে এই ৪১০টি মামলার বিরতিহীন শুনানি গ্রহণ ও বিচারকাজ সম্পন্ন করা; যেমন সাম্প্রতিকালে নোয়াখালীর মাদ্রাসা মামলায় নুসরাত হত্যাকাণ্ডে এবং চট্টগ্রামে ওসি প্রদীপের মামলায় আদালত একাদিক্রমে শুনানি ও বিচারকার্য সম্পন্ন করে রায় দিয়েছিলেন। 

ধরা গেল, সেই বেদম বিচারকাজ আরম্ভ হলো। তখন এই মামলাগুলো যাদের কলমের ভেতর দিয়ে আগাতে থাকবে, তাদের মানসিকতা এবং অবস্থানের ওপর বিচারের মান ও গতি নির্ভর করবে। যেমন প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই বলেছেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে প্রাণহানি, সম্পদহানি এবং নৈরাজ্য হয়েছে তার জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রদের দায়ী করা যায় না, দায়ী করা যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। বাস্তব হলো এই যে, আন্দোলনকারীদের হাতে ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। সরকারি গাড়ি ও মেট্রোরেলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। তাহলে এই দুটি বিষয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে কি মামলা বা শাস্তি হবে না? 

কারণ তারা তো নির্দোষ বলে সরকারপ্রধান উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কোনো ইনডেমনিটি জারি করা হয়নি। সরকারি সম্পত্তি না হয় রেহাই পেল, কারণ সেগুলো অপ্রাণীবাচক। কিন্তু ৪২ জন পুলিশের মারা যাওয়ার মামলা থেকে রেহাই দেবে কে? সন্তর্পণে পুলিশ বা নিহতদের স্বজন বাদী হয়ে মামলাগুলো করবেন, তা নিশ্চিত। তাতে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এদের সহকর্মীরা এবং সমর্থকরা পুলিশের নানা স্তরে কর্মরত। 

চার্জশিট প্রণয়ন এবং আদালতে অনুমদিত হওয়ার স্তর পর্যন্ত এরা চার্জশিটের উপজীব্যকে তাদের মনমতো না হলে কৌশলে তা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সহানুভূতিশীল গোয়েন্দা ও পুলিশ সদস্যরাও মামলার চার্জশিটের উপজীব্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। প্রধান রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সমন্বয়করা সরকার পতনের প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন যে, জেলা, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের অধিকাংশ আওয়ামী প্রেতাত্মায় ভরপুর। 

এই বিশ্বাসে প্রথম কয়েক দিন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট স্তর পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং পদত্যাগ করানো হয়েছে। কিন্তু একজন জেলা জজ বা উচ্চতর আদালতের বিচারকের শূন্যস্থান কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ এই না যে, এই সার্ভিসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এমনকি ৫০ জন বিচারক রিজার্ভ রাখা হয়। একজন বিচারক তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে।

ফলে এই শূন্যস্থান পূরণ করে দ্রুত বিচার করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হবে। অন্যদিকে আবার আগের আমলের মতো শাসন বিভাগ যদি বিচারকদের মামলার রায়ের ব্যাপারে তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন, তা হলে সেই সংস্কৃতি আগের আমলের মতোই নিচু হবে। বিচার কোনো তড়িঘড়ির বিষয় নয়। জেলা জজ পর্যায়ে যে রায়ই হোক, পরবর্তী দুটি স্তরে আপিল নিষ্পত্তিতে কী রকম সময় লাগে, তা স্মরণ করতে তিনটি মামলার উদাহরণই যথেষ্ট। 

প্রথমত, শাজনীন খুনের মামলায় বিচার শেষ হতে ১৮ বছর; দ্বিতীয়ত, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১২ বছর; তৃতীয়ত, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার বিচার হতে ৮ বছর লেগেছিল। এই সর্বশেষ মামলাটি এখন ডেথ রেফারেন্স হিসেবে ৫ বছর ধরে উচ্চতর আদালতে বিবেচনাধীন আছে। অপরদিকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সংঘটিত খুনের মামলার বিচার ও রায় কার্যকর হতে ৩৫ বছর সময় লেগেছে। এর মধ্যে ৬ বছর সংক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও। আবার বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলায় বিচার আরম্ভ হওয়ার পর সাড়ে ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। রায় এখনো অনিশ্চিত। 

পুলিশের সাবেক আইজি মামুন পলাতক ও কমিশনার আসাদুজ্জামান গ্রেপ্তার। তারাসহ ওই বিভাগের যারা সাবেক সরকারের অবৈধ সুবিধা ভোগ করেছেন এবং তাদের আমলে অধস্তন পুলিশ কর্মচারী নিয়োগ করেছেন, তাদের প্রভাব এই বিশাল বাহিনীতে অনেকাংশেই অক্ষুণ্ন রয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ড হাইকোর্টের একটি স্থান থেকে অযৌক্তিকভাবে আগত এক নির্দেশে মামলাটির বিচারকাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়। 

তারা সমাজের খুব প্রভাবশালী লোক ছিলেন না। তার পরও ক্ষমতার রশিতে এভাবে প্রভাব বিস্তার করা এই সমাজেই সম্ভব। মামলাটি শেয হতে ৩৮ বছর লেগেছে। সাম্প্রতিক মামলাগুলোর বাদী, আসামি ও সাক্ষীর মধ্যে মৃত ব্যক্তি, শিশু, বিদেশে অবস্থানরত এবং একেবারেই অসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ তাড়াহুড়ো। আমরা আত্মরক্ষায় সমর্থ একটা জাতি। ফলে প্রসিকিউশনের দক্ষতা আমাদের সামান্য। সরকারি মামলায় বিবাদীর উকিল যতটা দক্ষতা দেখান, সরকারি উকিল ততটা দক্ষতা তো দেখানই না বরং অনেক সময় নীরব থাকেন। ফলে আসামি খালাস পেয়ে যান। 

এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও কোর্ট দারোগা, পেশকার, পিপি, জিপি এবং আদালতের অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বৃহৎ অংশ অভিযোগ প্রমাণের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নেবেন বলে মনে হয় না। অভিযুক্তরা অত্যন্ত শক্তিশালী, বিখ্যাত, প্রভাবশালী এবং ব্যয়বহুল আইনজীবী নিয়োগ করবেন। তাদের সামনে অখ্যাত সরকারি উকিলরা দুর্বলতার পরিচয় দেবেন। কাঁচাভাবে মামলা দায়েরের ফলে তা বৃদ্ধি পাবে। মুন সিনেমার পাকিস্তানি মালিক বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ৩২ বছর মামলা লড়ে ওই সম্পত্তির মালিকানা ফিরে পান। 

১৯৭২ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দালালদের মামলায় বিবাদীদের সমর্থন করেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতেও মৌলিকভাবে ব্রিটিশ আইন অপরাধীর পক্ষে থাকে। বাদীর উকিল অত্যন্ত মেধাবী, সৎ ও প্রভাবশালী না হলে অভিযোগ প্রমাণ করা প্রায় ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। এ দেশে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত মামলার শতকরা ৯৫ ভাগ অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় অত্যন্ত সম্পদশালী এবং প্রভাবশালী এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত মামলাগুলো খুব দক্ষতার সঙ্গে দায়ের এবং চার্জশিট প্রণয়ন না করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে বলে মনে হয় না। 

মামলাগুলোতে অনেকেই হুকুমের আসামি, অনেক সাক্ষী বিদেশ চলে গেছেন, অনেকেই মৃত ও আহত, অনেকে সময়ের পরিসরে এই বিষয়ে আর আগ্রহী থাকবেন না। অনেক ক্ষেত্রে বিচারকও রাজনৈতিক কারণে অভিযুক্তের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, কেউ কেউ আবার বোধ করবেন বিব্রত। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া মামলাগুলো দায়ের করা বিচারপ্রার্থীর জন্য আশাপ্রদ হবে না। ব্রিটিশদের প্রণীত ফৌজদারি আইন অক্ষুণ্ন আছে। তা একান্ত নৈর্ব্যত্তিক। সেগুলোর অন্তর্নিহিত লক্ষ্যের সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্য রেখে মামলাগুলো দায়ের করা উত্তম হবে। 

লেখক: সাহিত্যিক 
[email protected]

বাইরের পৃথিবী অসুখে ভুগছে...

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ এএম
বাইরের পৃথিবী অসুখে ভুগছে...
ড. পবিত্র সরকার

বাইরে পৃথিবী অসুখে ভুগছে, দুই দেশের বেশ কিছু মানুষ আমাকে নিয়ে ভাবনায় উন্মাদপ্রায় হয়েছে।  কিন্তু আমি তখন কী সুখে যে সময় কাটাচ্ছি, তা আমিই জানি। কাজটা হয়তো ঠিক করিনি।

বাংলাদেশে গেলে আমি ঢাকা ক্লাবে, হোটেলে বা গেস্ট হাউসে থেকেছি বেশির ভাগ সময়, কিন্তু কখনো কখনো দু-একটি পরিবারের সঙ্গেও থেকেছি। কারণ এই দীর্ঘকাল ধরে যাতায়াতের ফলে সেখানে আমার কিছু পুত্র-কন্যাও আমি পেয়েছি।  হাসিব রহমান সেই রকম একটি অর্জিত পুত্র।  তার বাবা মোহম্মদ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল, তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, ‘শিক্ষাকোষ’ বলে একটি শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বকোষ তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। 

কিন্তু হাসিব হলো কম্পিউটারে ভাষাপ্রযুক্তির বিশেষজ্ঞ, তার সঙ্গে অন্য সূত্রেও আমার বাংলা একাডেমিতে আলাপ হয়। তখন (২০১০-১২) আমরা ঢাকার বাংলা একাডেমিতে ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ তৈরি করছিলাম। সেই থেকে আমি হাবিব ভাইয়ের পরিবারের আত্মীয় হয়ে যাই। অত্যন্ত অমায়িক ও সজ্জন ওই মানুষটি কবছর আগে প্রয়াত হয়েছেন, কিন্তু ওদের ফ্ল্যাটে আমার আতিথ্য আর আনুষঙ্গিক আপ্যায়ন সব সময় উদ্যত থাকে। এর আগে বার দুয়েক আমার ওদের বাড়িতে থাকা হয়ে গেছে।

এবারে যারা আমাকে আমন্ত্রণ করেছিল, তারা হাসিবের কেউ নয়। প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীনের শ্যালক সেলিমের ৭৫ বছরের জন্মজয়ন্তী উৎসবের শুরুর অনুষ্ঠানটি আমাকে উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার এক সহকারী হাসিবের পরিচিত, সে-ই হাসিবের ওখানে আমার থাকার ব্যবস্থা করে। হাসিবরা সানন্দে রাজি হয়, কাজেই আমারও দ্বিধার কোনো পরিসর ছিল না। হাসিবই আমাকে এয়ারপোর্টে নিতে আসে তার গাড়ি নিয়ে। 

তার আগের দিন জাহাঙ্গীরনগর ও অন্যত্র গুলি চলেছে, ছাত্রদের মৃত্যু হয়েছে। পথে আমরা কোনো বাধা পাইনি। কিন্তু পথে দেখলাম দলে দলে ছাত্র হওয়ার বয়স পেরিয়ে গেছে এমন মানুষ (মূলত পুরুষ) মাথায় হেলমেট ও হাতে বাঁশের ডান্ডা নিয়ে চলেছে বা জমা হয়েছে। মনে হলো, ঝড়ের সংকেত। এর মধ্য দিয়ে আমরা হাসিবের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠলাম এবং চার দিনের জন্য সেখানে এক চমৎকার বন্দিজীবন কাটালাম। বাইরে বাংলাদেশের গভীর গভীরতর অসুখ, আমার সম্বন্ধে দুই দেশেই প্রিয়জনদের বিপুল ও নিরুপায় উদ্বেগ। কিন্তু আমি অসাধারণ আপ্যায়ন ও চিন্তাহীনতা ভোগ করছি।

এর প্রধান কারণ সত্তরোর্ধ্ব হাসিবের মা। তিনি ক্যানসারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন একসময়, উঠে দাঁড়াতেও পারতেন না। পরে কিছুদিন মাটিতে কোমর হিঁচড়ে কোনো রকমে চলাফেরা করতেন, এখন একটু চলাফেরা করেন, কিছুটা টলোমলো পায়ে। কিন্তু রান্নাঘর তার নিজের বিপুল আগ্রহের জগৎ, তার দায়িত্ব অন্য কাউকে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। ব্যাপারটা রান্না থেকে শুরু হয় বললে ভুল হবে। 

আমি ভোরবেলায় উঠে দেখি খাবার ঘরে ডাইনিং টেবিলের পাশে রেফ্রিজারেটরের সামনে তিনি সামনে সবজির বাজার চারপাশে ছড়িয়ে পা মেলে বসেছেন এবং জিনিসপত্রের কাটাকুটিতে লেগে গেছেন। অন্যদের তরকারি কাটা তার কিছুতেই মনমতো হয় না বলে অন্যরা, যেমন বিদুষী বউমা, হাসিবের স্ত্রী টুম্পাকে (এখন ফাদার দঁতিয়েনের গদ্যের ওপর এমফিল শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে, সেই সঙ্গে একটি স্কুলে পড়াচ্ছে) ও রাঁধুনিকে ধারেকাছে আসতে দেন না। 

তবে টুম্পাকে পরিবেশন করতে দেন, সে খাবার সময় টেবিলে বসে আমাকে এটা-ওটা এগিয়ে দেয়। আমার খাবার চাহিদা এই বয়সে বেশি নেই।  আমি বলেছিলাম, ডাল তরকারি হবে, মাছ বা মাংসের একটা আইটেম হবে, দুটো নয়, আর বাংলাদেশের রন্ধনের গৌরব ভর্তা যা পারো খাওয়াবে। রাত্রে তো আমি সুপ আর ফল খাই, তার ব্যবস্থা রাখলেই হবে।

তা ওরা আমার কথা মেনেছে, ঢাকার আনুষ্ঠানিক নেমন্তন্নের মতো টেবিলে কুড়ি-পঁচিশটা আইটেম সাজিয়ে দেয়নি। কিন্তু প্রতিটি পরিবেশনায় কী মমতা ঢেলে দিয়েছে এই পরিবার, তা বলে বোঝানো যাবে না।  সকালে ব্রেকফাস্ট বাংলাদেশের খুব পরিচিত প্লেট, দুটি রুটি, খুব অল্প ঘি মাখানো, আর সেই সঙ্গে একটা সবজি। সাধারণভাবে অন্যত্র, লাউ ইত্যাদি দিয়ে একটু নিশ্চরিত্র ধরনের হয় এবং প্রতিদিনই প্রায় একই থাকে। 

কিন্তু হাসিবের মা রুটিটা নরম ও তুসতুসে হলো কি না, মুখে দিলে তা গলে যায় কি না, এ নিয়ে ভারি উৎকণ্ঠায় থাকেন এবং আমাকে প্রতিদিনই তাকে আশ্বস্ত করতে হতো। আর তরকারিও তিনি রোজ বদলে দিতেন, কোনো দিন কুমড়োর ছক্কা, কোনো দিন অন্য কিছু- ফলে ব্রেকফাস্ট আমার দিনের পরবর্তী ভোজনের একটা চমৎকার মহড়া হয়ে উঠত।

কিন্তু ব্রেকফাস্টের আগেও একট জিনিস ঘটত। হাসিবের দুটি মেয়ে- হিয়া আর হিমি। হিয়া আঠারো বছরে পা দিতে চলেছে, একটু আত্মমগ্ন স্বভাবের। ছোট মেয়েটির নাম হিমি, সে সবে দশ পেরিয়েছে। ভোরে আমার ঘুম ভেঙেছে কি ভাঙেনি, সে আমার ঘরের স্লাইডিং দরজায় টোকা দিয়ে খুলে, ভারি মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করত, ঢাকাই ভাষার মিষ্টি সুর- ‘দাদা, চা কইরা আনুম?’ আমি তো প্রথম দিন চমকে গিয়েছিলাম, এইটুকু মেয়ে, সে বলে কী? 

আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছে নাকি? একেবারেই না, ওই মেয়ে একটু অন্য রকম এ বাড়িতে। দুবোনই লেখাপড়ায় বেশ ভালো, কিন্তু সে আরও কম বয়স থেকে সবার ডাকখোঁজ নেয়, এটা-ওটা এগিয়ে দেয়, রান্নাবান্না সেবাযত্নেও হাত লাগায়। আমি এতটুকু মেয়ের এই বিশুদ্ধ মাতৃমূর্তি আর দেখিনি।  

শুধু সকালে নয়, বিকেলেও ঘুম ভাঙার পর সে ওই মিষ্টি গলায় ‘দাদা, চা কইরা দিমু?’ বলে আমাকে জিজ্ঞেস করত এবং আমি বাধা দেওয়ার আগেই সে চমৎকার এক মগ লিকার চা আমার টেবিলে এনে রাখত, সঙ্গে বিস্কুট। আমি কৃতার্থ হয়ে যেতাম। ছেলেমেয়েদের সেবায় আমরা বুড়োরা অভ্যস্ত, আর নাতি-নাতনিদের আমরা বিশুদ্ধ মজার সঙ্গে হিসেবে ভাবি। কিন্তু আমার এই সেবানিপুণা নাতনিটি আমাকে একটা অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে।

এখন তো কম খাই, কিন্তু খাবার যদি উৎকৃষ্ট হয়, তার প্রশংসা করতে ছাড়ব কেন? হাসিবের মা প্রতিদিন নতুন নতুন ভর্তা করতেন। একদিন করলেন কালোজিরার ভর্তা, একদিন কাঁঠালবিচির, আর একদিন হয়তো মিশ্রিত উপাদানের। ওই ভর্তা আর ডাল দিয়েই পুরো এক থালা ভাত শেষ করা যায়। হাসিব আবার বাজার খুঁজে নিয়ে আসত আমার ছেলেবেলার সব মাছ। 

সেই কবে গ্রামে খেয়েছি ‘রিঠা’ মাছ, একদিন তাই নিয়ে এল, আমার শৈশব স্মৃতি উসকে দিয়ে। একদিন আনল তেলাপিয়া, যা অনেক দিন খাই না, কিন্তু প্রথম যখন উঠেছিল বাজারে, সমাদর করে খেতাম। আমার প্রয়াত স্ত্রী চমৎকার রান্না করতেন ওই মাছটি। হাসিবের মায়েরও রান্নার হাত অপূর্ব, প্রতিটিতেই যেন একটি ম্যাজিক জুড়ে যেত।

বাইরে পৃথিবী অসুখে ভুগছে, দুই দেশের বেশ কিছু মানুষ আমাকে নিয়ে ভাবনায় উন্মাদপ্রায় হয়েছে।  কিন্তু আমি তখন কী সুখে যে সময় কাটাচ্ছি, তা আমিই জানি। কাজটা হয়তো ঠিক করিনি।  

লেখক: ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

উন্নত দেশের মতো পুলিশের প্রস্তাবই দেব

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ পিএম
উন্নত দেশের মতো পুলিশের প্রস্তাবই দেব
সফর রাজ হোসেন

আমি তো এখনো কোনো চিঠি পাইনি। এখনো কমিটির কার্যপ্রণালি বা টার্মস অব রেফারেন্স- কমিটিকে কী করতে হবে, কমিটিতে কারা থাকবেন, একচুয়ালি সরকার কী চায় এবং কমিটির অন্য সদস্য কারা হবেন সে সম্পর্কে এখনো অফিশিয়ালি কোনো কাগজপত্র পাইনি। আমরা ভাবব যে, আমাদের পুলিশ উন্নত দেশের মতো হবে। সে জন্যই আমরা হয়তো স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব করব।

তবে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার ঠেকানোর বিষয়টি হয়তো আমরা পুরোটা প্রস্তাবনায় আনতে পারব না। কারণ পুলিশের ওপর  সরকারের রাজনৈতিক যে নিয়ন্ত্রণ, সেটা বোধহয় আমার টার্মস অব রেফারেন্সের মধ্যে আসবে না। সেটা হয়তো সংবিধান নিয়ে যারা কাজ করছেন (সংবিধান সংস্কার কমিশন) তারা ঠিক করতে পারেন যে, কীভাবে সরকারের সেন্ট্রালাইজ ক্ষমতাকে ডিসেন্ট্রালাইজ করা যায়।

বর্তমানে যে সংবিধান আছে, এ সংবিধান অনুযায়ী যা হবে সে রকমই চলবে। সংবিধান সংস্কার করলে তখন সে ব্যাপারটা আলাদা কিছু হবে। নির্বাহী ক্ষমতা কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেটা তো সংবিধান বা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। আমরা হয়তো পুলিশের অর্গানোগ্রাম নিয়ে কাজ করব। আর হয়তো পুলিশ রিলেটেড যেসব আইন আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করব।

আমার টিমে আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে নেওয়া হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে দেখা করব। আমরা হয়তো আগামী ১ অক্টোবর কমিশনের প্রথম বৈঠকে বসব। সেই বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা ও একটি রূপরেখা তৈরি করব। 

সাবেক সচিব