ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ এএম
পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি
সৈয়দ ফারুক হোসেন

বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পলিথিনের ব্যবহার হলেও এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় ৩ হাজার কারখানায় দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। এগুলোর সিংহভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। রাজধানীর ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। তার মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়।...

পলিথিন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনিবার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আর তার পরিণতি আমরা ভোগ করছি প্রতিনিয়তই। ক্যানসারসহ নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে শরীরে। চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। অবশেষে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অকালমৃত্যুর করুণ পরিণতির দিকে। অত্যধিক পলিথিন ব্যবহার নিয়ে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এমন কথাই বলছেন। পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে হরমন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রুণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। পৃথিবীব্যাপী তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। অনেক দেশ আইন করে তা নিষিদ্ধও করেছে। সহজলভ্যতা, বহুমুখী ব্যবহার, স্বল্পমূল্য, হালকা ওজন ও উচ্চ স্থায়িত্বের ফলে নানা ধরনের প্লাস্টিকসামগ্রী যেমন- প্লাস্টিক ব্যাগ, ফিল্ম, সিনথেটিক পোশাক, কার্পেট, থালাবাসন, ঘটিবাটি, বোতল, টায়ার, খেলনা, প্যাকেটজাত দ্রব্য, সার, যন্ত্রপাতি, যানবাহনের বডি ও যন্ত্রাংশ ইত্যাদি পরিণত হয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অনিবার্য উপাদানে। নিত্যব্যবহার্য এসব প্লাস্টিকসামগ্রী, সিনথেটিক টেক্সটাইল ও কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে। যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বত্র, এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। 

ইতোমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাস্টিকদূষণ। একসময়ের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার প্লাস্টিক এখন পরিবেশদূষণ নামের দুঃস্বপ্নের শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অপব্যবহার এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের বিস্তৃত ব্যবহারের মধ্যে থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী উপকরণ, সবই পরিবেশ ক্ষয়ে অন্যতম অবদান রাখে। মূল সমস্যাটা হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে। একটি বড় পরিমাণের প্লাস্টিক বর্জ্য গিয়ে জমা হয় ভাগাড়ে, যেগুলো পচতে সময় গেলে যায় বছরের পর বছর। 

এ ছাড়া অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে একটি মোটামুটি পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্যের গন্তব্য হয় জলাশয়গুলো, যার জের ধরেই ক্রমবর্ধমান সমুদ্রদূষণের সমস্যাটি আরও বৃদ্ধি পায়। সমুদ্র যেন প্লাস্টিক বর্জ্যের এক বিশাল মজুত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে বিপর্যস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীবন। জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ৮ মিলিয়নেরও বেশি মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিবছর সমুদ্রে প্রবেশ করে। এই প্লাস্টিকদূষণ সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিশাল হুমকির রূপ নেয়, কেননা তারা প্রায়ই ভুল করে প্লাস্টিককে খাবার মনে করে বা বিভিন্নভাবে তাদের শরীর প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নত দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশে কম ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় সব ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাস্টিকের তৈরি। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশির ভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে। প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। 

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। দেশের কোনো সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ রাখা যাবে না। এর পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ১০টি কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে সুপারশপগুলোর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, ক্রেতারা যেন নিজস্ব ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসেন। ব্যাপক হারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় সম্পর্কে এখন আর কারও দ্বিমত নেই। দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি এবং ঢাকা শহরের চারপাশের নদ-নদীদূষণ, সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার মতো বাস্তব সংকটের প্রেক্ষাপটে বিগত সরকার আইন করে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও আইনের বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার কারণে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বর্তমান সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

 এটা সময়োপযোগী, বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ। গত ২২ বছরে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় পলিথিনের ব্যবহার কমেনি এতটুকুও। বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পলিথিনের ব্যবহার হলেও এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় ৩ হাজার কারখানায় দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। এগুলোর সিংহভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, অনেক দেশে তা ১০ মাসেও হয় না। এদিকে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীর ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। তার মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। অপচনশীল ও সর্বনাশা পলিথিনের এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়োনিষ্কাশনের ড্রেন, নালা, নর্দমা, খাল, বিল ও নদীগুলো ভরাট হচ্ছে আর দূষিত হচ্ছে পানি। ২০২৩ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি করে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। 

সে হিসাবে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। দেশে পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ পলিথিন হলেও এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে টিস্যু ব্যাগ। ওভেন পলি প্রোপাইলিন দিয়ে প্লাস্টিক পণ্য তৈরির পাশাপাশি টিস্যু ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন রঙের ও মোটা হওয়ায় অনেকেই ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার। টিস্যু ব্যাগ অপচনশীল। এই বস্তুটি ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। যা পয়োনিষ্কাশন নালায় আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ। এই সুসমন্বিত রূপের ব্যত্যয়ই পরিবেশেরদূষণ ঘটায় এবং পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রার অবক্ষয় দেখা দেয়। পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হতে পারে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এর জন্য দায়ী। মানুষের অসচেতনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণেই পরিবেশদূষণ হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। পলিথিন উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে এটির বাজারজাতকারী ও ব্যবহারকারীরা পর্যন্ত জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে রয়েছে। পলিথিন জমা হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলে। 

পলিথিন পোড়ালে বাষুদূষণ ঘটে। পলিথিন এবং প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো মাটিতে পড়ার দরুন মাটি তার মৌলিকত্ব হারাচ্ছে এবং এসব মাটিতে কোনো ভৌত কাঠামো নির্মাণ করলে তা দুর্বল হতে পারে। গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতেই তরিতরকারির খোসা, মাছের অপ্রয়োজনীয় অংশ, বাড়িঘর, উঠান ঝাড়ু দেওয়ার পর ময়লা-আবর্জনাগুলো একটা নির্দিষ্ট গর্তে ফেলা হয় এবং যেগুলো কয়েক মাস পর কৃষক জৈব সার হিসেবে কৃষিকাজে ব্যবহার করে। পলিথিন এবং প্লাস্টিকের বর্জ্য ড্রেন, নদী-নালা, খাল-বিলে ফেলার দরুন ময়লা পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ সহজলভ্য হওয়ায় শহর এলাকায় তরিতরকারির খোসা, মাছের অপ্রয়োজনীয় অংশ, খাবারের উচ্ছিষ্ট এবং বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা পলিথিন ব্যাগে ভরার পর সেগুলো কোনো ডাস্টবিনে অথবা রাস্তার পাশে ফেলা হয়। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বর্জ্যে অনেক আগেই বিষাক্ত হয়েছে বুড়িগঙ্গার পানি। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

 নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে ৮ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা পলিথিন এবং প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো একত্রিত করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং প্রজ্বলিত পলিথিন এবং প্লাস্টিক থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস গাছপালার মাধ্যমে পরিশোধিত হতে পারে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পলিথিনের কুফল থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য সরকার ইতোমধ্যে সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এর সঙ্গে মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধের আইন কার্যকর করার লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ ও শপিং ব্যাগ জব্দ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। 

এখন কাগজ ও পাটের ব্যাগের ব্যবহারই আমাদের পলিথিনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারে। পাটের ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে সরকারের ব্যাপক নজরদারিসহ প্রচার মাধ্যমগুলোতে (রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা) ব্যাপক প্রচার দরকার। এভাবে পলিথিনের ক্ষতিকারক দিকগুলো সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর করার পর কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলোর ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে আপামর জনসাধারণকে সহযোগিতা করতে হবে।

লেখক: সাবেক রেজিস্ট্রার, বিএসএফএমএসটিইউ
[email protected]

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমমর্যাদার

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ এএম
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমমর্যাদার
আনু মুহাম্মদ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের যে জটিলতা এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ভারতের এই আধিপত্যবাদী যে চেহারা, সেই চেহারার উন্মোচন ঘটানো দরকার। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তাদের আধিপত্যবাদী চরিত্র বিদ্যমান। এই সরকারের আগেও ছিল। মূলত এটা তৈরি হয়েছে ভারতে যে বৃহৎ পুঁজির বিকাশকেন্দ্রিক ভবন তার সম্প্রসারণের তাগিদ থেকে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমস্যা, এটিকে হিন্দু-মুসলমান সমস্যা হিসেবে দেখা খুবই ভুল। কারণ নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র, তার সঙ্গেও ভারতের অনেক সমস্যা আছে। এ ছাড়া মালদ্বীপ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা- এসব দেশের সঙ্গে ভারতের একপেশে মনোভাব বিদ্যমান।

 ফলে এসব দেশের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ ভারতের শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে, তার প্রকাশ ঘটেছে সেসব দেশের সরকারের মধ্যেও। বর্তমানে বাংলাদেশ হচ্ছে সর্বশেষ তালিকায়। সেখানে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। সরকার পতনের পর ক্ষোভের প্রকাশটা এখন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেও পরিচালিত হয়েছে। হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে নানা শর্তে এমন অনেক চুক্তি করেছে, এমনভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ধারণ করেছে যে, এতে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের আপামর মানুষকে ভারতের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে বাধ্য করেছে।

আমাদের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট। এটা কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যার বিষয় নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের সীমান্ত হত্যা চলছে বহুদিন ধরে। হাসিনা সরকারের সময় ছিল, এখনো সেটা অব্যাহত আছে। পানিবণ্টন সমস্যা ভারত কখনো সমাধান করতে চায়নি। অসম বাণিজ্য, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশে একচেটিয়া বাণিজ্য করে। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা দিয়ে থাকে।

 নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সৃষ্টির একটা খুব ভালো সুযোগ ছিল। সেখানেও ভারত নানা রকমভাবে বাধা দেয়। তা ছাড়া তারা একচেটিয়াভাবে ট্রানজিটসহ অন্যান্য নানা ধরনের সুবিধা চায়। হাসিনা সরকার তার ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে ট্রানজিটের এমন অনেক ধরনের সুবিধা ভারতকে দিয়েছে, সেগুলো খুবই অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর। সেগুলো নিয়ে জনগণের মতামত নেওয়াও হয়নি। জনগণের সম্মতির বিরুদ্ধে গিয়ে এ ধরনের চুক্তিগুলো করা হয়েছে। 

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা। আমরা নিশ্চয়ই এটা স্বীকার করি যে, ভারত রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশেই ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রের কোনো মায়ামমতা বা সহানুভূতি থাকে না। রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত স্বার্থ বিবেচনা করে। সেই স্বার্থ বিবেচনা করে ভারত রাষ্ট্র তখন বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা করেছে। আমাদের এটা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে যে, ভারতের জনগণ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর বোঝা বহন করেছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছে।

ভারতের জনগণের সেই ভূমিকাকে আমরা কোনো দিন ভুলতে পারব না। সব সময় তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারতের জনগণের এই ভূমিকার কারণে ভারতের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বা বিজেপি সরকারের যেকোনো দাবি মেনে নেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। ১৯৭১ সালে বিজেপি বলে কোনো দলও ছিল না। নরেন্দ্র মোদির ভূমিকাও সে সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না। ভারতের জনগণের সহায়তা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার অর্থ এই নয় যে, আদানিকে ব্যবসা দিতে হবে। কিংবা নরেন্দ্র মোদির যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত স্বার্থ সেগুলো পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা হতে হবে বন্ধুত্ব ও সমমর্যাদার।

 যেখানে ভারতের শাসক শ্রেণি সব সময় চাইবে বাংলাদেশ অধস্তন রাষ্ট্র হিসেবে থাক। সে ক্ষেত্রে হাসিনা সরকার একটা চরম গ্রুপ তৈরি করেছিল এবং ভারত বাংলাদেশকে অধস্তন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যস্ত হয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ অধস্তন অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে বা যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ভারতে বাংলাদেশবিরোধী একটা ব্যাপক, খুবই অসম্মানজনক, বিতর্কিত, অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে এবং সেই অপপ্রচারের মূল বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগণ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। এর থেকে মনে হতে পারে যে, ভারতের সরকার হিন্দু জনগণের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল কিংবা তাদের স্বার্থ রক্ষায় খুবই আগ্রহী। এটা যদি সত্য হতো তাহলে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণ অনেক ভালো অবস্থায় থাকত।

ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এবং তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হলো হিন্দু জনগোষ্ঠী, হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা যে ধরনের শাসন-নিপীড়নের মধ্যে বাস করে এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করে সেটার চিত্র আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি। বিজেপির সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গরিব মানুষ ভারতেই বাস করে। এদের ভারতের সামরিক, বেসামরিক নিপীড়ন-নির্যাতনের বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়া তৎপরতা ভারত রাষ্ট্রে আছে। সুতরাং বাংলাদেশের কথা যখন তারা বলে, হিন্দু জনগণের প্রতি মায়া-মহব্বতের ব্যাপার নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে, তখন তারা আসলে এটাকে একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

 সেই কারণে বিজয়ের মাসে আমাদের কয়েকটা জিনিস নিশ্চিত করতে হবে- ভারত সেটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, এই হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন, সেই ধরনের ঘটনা যেন কোনোভাবেই না ঘটে। সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশে কিছু উন্মাদ লোক থাকতে পারে। যারা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন এবং সাম্প্রদায়িক তৎপরতা কিংবা জমি দখলের লোভে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপরে আক্রমণ করতে পারে বা নিপীড়ন করতে পারে। সে রকম ঘটনা যেন না হয়। সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি এটা পরিষ্কার করতে হবে যে, যারাই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি করবে তারা আসলে বিজেপির স্বার্থ রক্ষা করছে। 

দ্বিতীয়ত, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বর্তমান বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ ব্যাপক লড়াইয়ের মধ্যে আছে। শোষণ, নিপীড়ন এবং আধিপত্য, সাম্প্রদায়িকতার জন্য ভারতের জনগণও লড়াই করছে। সেখানে বামপন্থি, সংখ্যালগিষ্ঠ জনগণ একই সঙ্গে সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগণের চেতনাসম্পন্ন যারা, তারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, নিপীড়নমূলক ভূমিকা, শোষণ এবং আধিপত্য, বৃহৎ পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনগণকে উচ্ছেদ করা- এর জন্য তারাও লড়াই করছে।

 সে জন্য বাংলাদেশের দিক থেকে আমাদের উচিত হবে, কীভাবে ভারতের সেই নিপীড়িত জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো যায় এবং তাদের সঙ্গে একাত্ম সংহতি করা যায়। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গেও এই সংহতিটা তৈরি করতে হবে। যাতে দক্ষিণ এশিয়া একটা গণতান্ত্রিক অঞ্চলে পরিণত হতে পারে। গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভারত একটা বাধা। সুতরাং সেই আধিপত্যবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের সংহতি তৈরি করতে পারলে সেটা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন যাত্রার পথ সুগম করবে।

 বাংলাদেশে এই বিজয়ের মাসে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সব সময় সজাগ-সচেতন ও সক্রিয় আছে। এই লড়াইয়ের ফলাফল হিসেবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের সঙ্গে সমঝোতার মধ্যে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

লেখক: শিক্ষাবিদ

নিয়ন্ত্রণহীন জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
নিয়ন্ত্রণহীন জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম
এস এম নাজের হোসাইন

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজার প্রতিনিয়তই অস্থিতিশীল হয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র মাস মাহে রমজান। এ উপলক্ষে আবার রমজানে ব্যবহার্য সব নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়া শুরু হয়েছে। এর বাইরে মানুষের জীনরক্ষাকারী ওষুধের দামও মাস গেলেই বাড়ে। যারা প্রতিনিয়ত শাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী তারা জানেন মাস পেরোলেই তাদের ওষুধের দাম বাড়ে। 

এর বাইরে আবারও বাড়ানো হয়েছে কয়েকটি ওষুধের দাম। ফামের্সিগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যথানাশক ট্যাবলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিস, ভিটামিন, গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশনসহ কোনো কোনো কোম্পানির ওষুধ এক পাতার দাম ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই হিসাবটি যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে ওষুধের দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর নিত্যপণ্যের দামের মতো লাগামহীনভাবে দাম বাড়ার ফলে জিম্মি হয়ে পড়ছেন রোগীরা। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাদের অবস্থা শোচনীয়। একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আছেন মহাযন্ত্রণায়।
 
সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের এমনিতেই যেখানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা, সেখানে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, গ্যাস্টিক, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রতি মাসের ওষুধের খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে একদিক খাদ্যপণ্য, অন্যদিকে অনেক সময় কাঁটছাট করে ওষুধ কিনে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছেন। যেহেতু ওষুধ জীবনরক্ষাকারী পণ্য এবং অনেক সময় ইংরেজিতে দাম লেখা থাকে, সে কারণেই সাধারণ মানুষ ওষুধের দর-কষাকষি বা যাচাই-বাছাই করে ক্রয়ের সময় ও সুযোগ কোনোটিই পান না। সেখানে প্রতিনিয়তই নানা অজুহাতে দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

স্বাস্থ্য ও ওষুধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের চিকিৎসা বাবদ মোট খরচের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় ওষুধ কিনতে। এতে ওষুধভেদে বড় ব্যবধানে ঘন ঘন দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এর সার্বিক প্রভাব জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়বে। আর ওষুধের মূল্য নিয়ে বাজারে অব্যাহতভাবে চরম নৈরাজ্য চলছে। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর অধিক মুনাফা ও দাম নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা জরুরি। তা না হলে দেশের চিকিৎসা খাত নিম্নবিত্ত মানুষের আওতার বাইরে চলে যাবে। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা পর্যায়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদারকিব্যবস্থা একবারেই দুর্বল।

 জেলা পর্যায়ে একজন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক লোক দেখানো কোনো কোনো সময় ফার্মেসিগুলো পরিদর্শনে যান। এর বাইরে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে ফার্মেসিগুলোয় অভিযান পরিচালনা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ওষুধের দাম নিয়ে তেমন একটা শাস্তির বিষয় দেখা যায় না। 

সরকার দেশে ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে থাকে। অথচ দেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি ওষুধ কোম্পানি ২৭ হাজারেরও বেশি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বিভিন্ন নামে উৎপাদন করে থাকে। কোভিড মহামারি-পরবর্তী সময় থেকে দেশের ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতি ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির যুক্তি- বিশ্ববাজারে ওষুধের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারসংকট, উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে ওষুধের দাম বাড়ছে।

 বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমলেও আমাদের দেশে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এমনকি হাইকোর্ট গত ২৯ এপ্রিল দেশে ওষুধের দাম খেয়ালখুশিমতো বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। অনেক সময় দেখা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখার চেয়েও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত। সে কারণেই ওষুধশিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা নিয়মিত দাম বাড়ালেও তারা সে বিষয়ে অধিকাংশ সময়ই নীরব থাকে। যেহেতু ওষুধের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনের তেমন ওজর-আপত্তি নেই, সে কারণে ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ওষুধের দাম বাড়তে প্রতিনিয়তই তৎপর থাকেন। 

সরেজমিনে নগরীর রাজধানীর মিটফোর্ড, বংশাল, নাজিরাবাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা এবং শাহবাগসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার একাধিক ফার্মেসিতে ওষুধের দাম বৃদ্ধির সত্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, গত ১৫ দিন অস্ত্রোপচার-পরবর্তী মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায় ব্যবহার করা ট্যাবলেট টেরাক্স-১০ প্রতি পিস আগে বিক্রি হতো ১২ টাকায় আর এখন দাম বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। অর্থাৎ বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। একইভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যামলোসার্ট ট্যাবলেট এক পাতা ১০টির দাম ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে একই কোম্পানির ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের কমেট-মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এক পাতা ১০টির দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩ ডিএস ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাপসুলের দাম প্রতিটি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য ৩০টির এক বক্স রসুভা (৫ এমজি) ট্যাবলেট ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। দুটিরই মূল্য বেড়েছে ২০ শতাংশ।

রোগীদের ইউরিক অ্যাসিডজনিত সমস্যায় ফেবুক্সোস্ট্যাট ৪০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট প্রতি পিস ১২ টাকা বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে। মূল্য বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হিউমুলিন এন ইনজেকশন ৩ মিলি কুইকপেন ৫টির এক প্যাকের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বাইজোরান ৫/২০ ট্যাবলেট কয়েক দিন আগেও এক পাতার ১৫টির দাম ছিল ১৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ২০ শতাংশ।

প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দেশের মানুষকে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। ওষুধ কেনার পেছনেই সিংহভাগ খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে চিকিৎসাব্যবস্থায় অনেক দিন থেকেই প্রচলিত আছে- চিকিৎসক যে কোম্পানির ওষুধ লিখবেন সেটাই নিতে হবে। তা না হলে অসুখ তো সারবে না বরং আরও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা প্রতিদিন চিকিৎসকদের নানা উপঢৌকন দেওয়াসহ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভিড় জমান। এ কারণে চিকিৎসকরা যাদের কাছ থেকে বেশি সুবিধা পান তাদের ওষুধ বেশি লিখে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। এ কারণে দাম বেড়ে দরিদ্র ও অসচ্ছল মানুষের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর একসময় ২ শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বে ছিল। কিন্তু এখন ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করছে। এর বাইরের ওষুধগুলোর মূল্য নির্ধারণ অনেকটাই নির্ভর করে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মর্জির ওপর। এতে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাব থাকলেও ভোক্তাদের অধিকার ও যুক্তিকে বারবার উপেক্ষা করে অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রচলিত ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া, সেটি যুক্তি ও ন্যায়সংগত কি না সন্দেহ আছে। জেনেরিক নামের যে ২ শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের ছিল, তা পুনর্বহাল করা দরকার। স্বাধীনতার আগে দেশে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। এখন ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদন করা হয়। দেশে উৎপাদিত ১২৪টি ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির যে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

 একই সঙ্গে বর্তমানে ঔষধ প্রশাসনের দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। দেশে ওষুধশিল্প বিস্তার লাভ করলেও ওষুধ তৈরির কাঁচামালের ৯৭ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলোর অধিকাংশই আসে ভারত ও চীন থেকে। উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকেও কিছু কাঁচামাল আসছে। নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছে, যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। 

২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে এই সুবিধা বহাল থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেশের ওষুধশিল্প সম্প্রসারণ করলেও সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেমে নেই। শুরুতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এটি নিয়ন্ত্রণ করত। এখন দেশীয় বড় করপোরেটগুলো তাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে ওষুধশিল্পে এ ধরনের অস্থিরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বড় কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধ করা ও এই ব্যবসায় অনৈতিক বিপণন পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। 

লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
[email protected]

প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ এএম
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার

ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। বিগত আট বছরের তুলনায় নভেম্বরে দূষণের মাত্রা ১০ ভাগ বেড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা প্রকাশ করে। কোন কোন উৎস থেকে বায়ুদূষণ হয় এবং সেটিকে কোন কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে  নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটি দেওয়া আছে। এই নির্দেশনা অনুসরণ করলেই বায়ুদূষণ কমে আসবে। সবাই যদি আমরা কাজ না করি, তাহলে একা কোনো সংস্থা, অধিদপ্তরের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যথায় আমাদের এই দূষণের মধ্যে থাকতে হবে। বায়ুদূষণে নাগরিকদের অংশগ্রহণ কম থাকে। তারা হয়তো বর্জ্য পোড়ায়। তবে এটা উল্লেখযোগ্য না। যানবাহন, শিল্পকারখানা, নির্মাণকাজ, ইটভাটা- এসব থেকে দূষণের পরিমাণটা বেশি হয়। সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা নাগরিক হিসেবে সচেতন থাকতে পারি। দূষিত এলাকায় কম যেতে পারি। মাস্ক পরতে পারি। 

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা

বড় সিদ্ধান্ত ছাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ এএম
বড় সিদ্ধান্ত ছাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান

ঢাকা শহরে বায়ুদূষণে অনেকগুলো উপাদান কাজ করে। বর্তমানে এটা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, যেখানে আসলে উন্নতি করার খুব একটা সম্ভাবনা আছে কি না সন্দেহ। এখান থেকে ফিরে আসার লক্ষণ কম দেখা যাচ্ছে। বরং ড্যাপকে (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) ধ্বংস করে এই শহরে আরও ভবন বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যত্রতত্র শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এই শহরকে ভোগের পণ্য বানাতে চায়। এখানে কোনো প্ল্যানিং অর্ডার নেই, কোনো কন্ট্রোল নেই। তাই যা হওয়ার কথা, দূষণ বেড়েই চলছে। কোনো একটা সূচকে আমরা আগের চেয়ে ভালো আছি, সে রকম দেখা যাচ্ছে না। শহরটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। চীনে বায়ুদূষণের মাত্রা খারাপ হলে অলিম্পিক বয়কটের ডাক আসে। তখন চীন প্রাইভেট কারের ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলে। আমাদেরও এ রকম বড় চিন্তা করতে হবে। বড় প্রভাব ফেলতে হবে। ছোট ছোট কোনো কিছু দিয়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। পরিকল্পনায় বড় চিন্তা করার মতো উদ্যোগ কোনো সরকারের মধ্যে দেখছি না। এই মুহূর্তে যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় শহরে কংক্রিট বাড়াব না, ঢাকার আশপাশের ইটভাটা সব বন্ধ করা হবে। এ রকম বড় সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। 

সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)

উন্মুক্তভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
উন্মুক্তভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে
স্থপতি ইকবাল হাবিব

বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হলো উন্মুক্তভাবে নির্মাণকাজ। ইটের ভাটা থেকে শুরু করে বালুসহ সব কাঁচামাল উন্মুক্তভাবে পরিবহন করা হয়। ভবন হোক, ড্রেন হোক বা অন্য কোনো কাঠামো হোক, সবকিছুই আমরা উন্মুক্তভাবে করছি। এটা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। ময়লার ভাগাড় থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়াও এই দূষণের জন্য দায়ী।

ইটের ভাটা নিয়ে সত্যিকার অর্থে পদক্ষেপ নিলে দূষণ কমে আসত। ইটের ভাটাকে আধুনিকায়নের নামে একটা কারসাজি চলছে। এগুলো আধুনিকায়ন হয়নি সরকারি উদ্যোগের অভাবে। কারণ বাংলাদেশে যত নির্মাণকাজ হয়, তার মধ্যে ৬০ ভাগের বেশি করে সরকার নিজেই। সেখানে তারা ইটের বিকল্প ব্যবহার করে না। সব নির্মাণে ইটের বিকল্প ব্যবহার করতে হবে। ইটের বিকল্প যারা বানাবে, তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। সরকারকে তার নিজের নির্মাণকাজে ইটের বিকল্প ব্যবহারে উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু বলা যায়, সরকারের কারণে হচ্ছে না। একই সঙ্গে বড় বড় প্রকল্প উন্মুক্তভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সঠিক নিয়ম মেনে করা হচ্ছে না। বায়ুদূষণ সরকারি মদদে বেশি হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ড্রেন থেকে ময়লা উঠিয়ে আবার উন্মুক্তভাবে রেখে দেয়। সেটা আবার বাতাসে মিশে যাচ্ছে। সব বিষয়ে কঠোর নজরদারি, দায়বদ্ধতা এবং সরকারিভাবে জরুরি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

সহসভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });