ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

ইসরায়েলি ঔপনিবেশিকতার সময় ফুরিয়ে আসছে!

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
ইসরায়েলি ঔপনিবেশিকতার সময় ফুরিয়ে আসছে!
রিচার্ড ডি উলফ

১৯২০ থেকে ১৯৪০-এর দশকে ইউরোপীয় পুঁজিবাদের ফ্যাসিবাদী বিপর্যয়ের সময় আমার জন্ম হয়েছিল। সেই বিপর্যয় ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা নিয়ে ইসরায়েলের বড় অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই নিবন্ধটি বর্তমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বিপর্যয় বিশ্লেষণ করতে অতীতের দুটি ঘটনাকে বর্ণনা করতে হবে। 

এই ধরনের একটি নিবন্ধ লেখার পেছনে কিছু কারণ আছে, যা আমার জীবনের কিছু সত্য ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শুরু করি। আমার নানা ও নানিকে নাৎসিদের মৌথাউসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়েছিল। আমার ফুপুকে আউসভিৎস কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়েছিল। আমার মা এবং খালাকে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে। 

এই ঘটনার কারণে আমার বাবা-মা ইউরোপ থেকে পালিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন। এ ধরনের নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করা ভিকটিমদের অন্য বংশধরদের মতো নির্যাতনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার জীবনেও ভেসে ওঠে। আমার অনুভূতি দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করি। 

উত্তরসূরিদের জীবনে কী ঘটেছে তা নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন। কেউ কেউ বিশ্বের এমন এমন ইতিহাস থেকে বেঁচে এসে নিরাপত্তার খোঁজে অন্যদিকে চলে গেছেন। কেউ আবার সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করেন যে, পৃথিবীর কিছু অংশ বা পুরোটাই সেই অবস্থার বাইরে চলে গেছে- যা ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছে। 
কেউ কেউ সেই রকম ক্রোধ ও ভয়ে থাকেন যে, ওই ঘটনা আবার ঘটতে পারে। তাদের মধ্যে অনেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন, যেখানে তারা এটিকে পুনরাবির্ভূত হতে দেখেন। অন্যদের যারা নিপীড়ন চালায় তাদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম চালিয়ে যান। এখনো অনেকে বিভিন্ন নিবন্ধ এবং বই লিখে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। 

ইসরায়েল সারা বিশ্বে পূর্ববর্তী ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদের আদলে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা পরিচালনার চেষ্টা করছে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমাকে পরোক্ষভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। বুঝে ওঠার আগেই, আমি হার্ভার্ড এবং র‌্যাডক্লিফে আন্ডারগ্রাজুয়েটদের একটি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমাদের ২০ জনকে গ্রীষ্মকালীন শিক্ষাদানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পূর্ব আফ্রিকায় নিয়ে গিয়েছিল। বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার বিষয়ে আমি সেখানে শিখতে শুরু করি। 

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডক্টরাল গবেষণামূলক কাজে গিয়ে লন্ডনের ঔপনিবেশিক অফিস এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামের রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে আমার জ্ঞান অনেক বেড়ে যায়। আমার বই ‘দ্য ইকোনমিক অব কলোনিয়ালিজম: ব্রিটেন এবং কেনিয়া, ১৮৭০-১৯৩০’ (নিউ হ্যাভেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৪)-এ কেনিয়ার উপনিবেশবাদী অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। 

ব্রিটেন কেনিয়ার স্থানীয় জনগণকে বিতাড়িত করেছিল এবং তার কয়েক হাজার শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীর জন্য দেশের উর্বর উচ্চভূমি সংরক্ষণ করেছিল। ভূমি এবং পুলিশ সুরক্ষা ছাড়াও ব্রিটেন তার অভিবাসীদের জন্য কফির বীজ, পরিবহন এবং কেনিয়ায় উৎপাদিত কফি রপ্তানির অর্থনীতি পরিচালনা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। লাখ লাখ কেনিয়ান কৃষ্ণাঙ্গকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তারা তাদের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য অপর্যাপ্ত বলে মনে করেছিল।

এভাবে তাদের বেঁচে থাকার জন্য শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীদের কফিবাগানে স্বল্প মজুরিতে শ্রম দিতে হয়েছিল। সেই স্বল্প মজুরির ওপর আরোপিত ট্যাক্স ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারকে অর্থায়ন করতে সাহায্য করেছিল। তারা নির্মমভাবে শোষক বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছিল। কেনিয়ার এই অর্থনৈতিক এবং জাতিগত বিচ্ছিন্নতা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের মতো সমান্তরাল বিষয়।
এ ধরনের অর্থনৈতিকব্যবস্থার করণে ক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে গণ-আন্দোলন রূপ নেয়। তাদের সংগঠিত বিদ্রোহ ব্যাপক প্রতিরোধের উদ্রেক করে। কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যত্রও এ ধরনের প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটেন নিয়মিতভাবে তাদের দমন করে যায়। 

অবশেষে, কেনিয়ায় সংগঠকরা জোমো কেনিয়াত্তার চারপাশে জড়ো হন এবং তথাকথিত কেনিয়া ল্যান্ড অ্যান্ড ফ্রিডম আর্মিকে বিদ্রোহের জন্য একত্রিত করেন। তাদের সংগ্রাম ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৫০-এর মাউ মাউ বিদ্রোহ (জঙ্গি আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন; যা ১৯৫০-এর দশকে কেনিয়ার কিকুয়ু জনগণ দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল) হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
 
সেই বিদ্রোহে ৬৩ জন ব্রিটিশ সামরিক অফিসার, ৩৩ জন বসতি স্থাপনকারী, ১ হাজার ৮০০-এর বেশি স্থানীয় পুলিশ ও সহায়ক সৈন্য এবং ১১ হাজারের বেশি কেনিয়ান বিদ্রোহীর প্রাণহানি হয়েছিল। ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করে, কেনিয়াত্তাকে বন্দি করে এবং গর্বের সঙ্গে বিজয় ঘোষণা করে। 

ব্রিটেনের বিজয় অবশ্য তার কেনিয়া উপনিবেশের জন্য মৃত্যুঘণ্টা শোনায়। মাউ মাউ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং চরম বিদ্রোহ দেখিয়েছিল। তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, সেটলার উপনিবেশের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত মুখোমুখি হবে। ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা এগুলোকে উপনিবেশের বাড়তি খরচ হিসেবে দেখেছিলেন, যেগুলো তারা বহন করতে পারতেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা প্রায় সর্বত্র বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।

ব্রিটিশ নেতারা ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে পালাতে পারেননি। মাউ মাউ-এর কিছু পরে, ব্রিটেন কেনিয়ার জাতীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে, কেনিয়াত্তাকে মুক্ত করে এবং কেনিয়ার নতুন নেতা হিসেবে তাকে গ্রহণ করে। স্বাধীনতা কেনিয়ার বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটায়।

বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার কেনিয়ার পাঠটি ব্রিটিশ নেতাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ইসরায়েলি নেতারা সেখান থেকে শিক্ষা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ইহুদিবাদ এবং ইউরোপীয় ইহুদিদের বিশেষ ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে, বেশির ভাগ ইসরায়েলি নেতা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা চাপিয়ে দিতে এবং বলপ্রয়োগ করে তা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।

১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরায়েলি নেতাদের স্বাধীনতার ঘোষণা তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিস্তিনি এবং আরব প্রতিরোধকে উসকে দেয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গণ-আন্দোলন এবং ব্যাপক বিদ্রোহ সেই প্রতিরোধকে প্রশমিত করে দিয়েছে। পূর্ববর্তী ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ইসরায়েলি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবেই থেকে যাবে। 

গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইসরায়েল বিশ্বশক্তির সঙ্গে জোট গঠন করেছে, যা তার বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ফ্রন্ট-লাইন এজেন্ট হিসেবে অবস্থান করছে। যেখানে প্রধান বৈশ্বিক শক্তি সংস্থানগুলো অবস্থান করছে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবশালী সামরিক সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রাথমিক সমাজতান্ত্রিক, সমষ্টিবাদী এবং কিবুতজিম উপাদানগুলোকে আন্ডারকাট করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটের কারণেই সহজ হয়েছে। 

অধিকাংশ ইহুদিবাদী নেতা স্বেচ্ছায় এই জোটের মূল্য পরিশোধ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইসরায়েলের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক নির্ভরতা রয়েছে। অবশেষে, ইসরায়েলি নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অভ্যন্তরে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অংশীদারদের সঙ্গে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সংযোগ গড়ে তোলেন। ইসরায়েলি নেতারা আশা করেছিলেন যে, বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা টিকে থাকতে পারে। 

কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এবং বাইরের অনেকের কাছে এটি মনে হয়েছিল যে, নেতাদের কৌশল এবং সংযোগগুলো এর বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতাকে সুরক্ষিত করতে পারে। তার পর কেনিয়ায় যা ঘটেছিল তা ইসরায়েলে পুনরাবৃত্তি হতে শুরু করে। ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করেছিল, গণ-আন্দোলন অনুসরণ করেছিল এবং অবশেষে, শক্তিশালী ও সংগঠিত বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। ইসরায়েলের বিজয়ের ওপর পরবর্তীকালে আরও বৈশ্বিক সমর্থন বাড়লে তা বিরোধিতার রূপ নেয়। ইসরায়েলি বিজয়গুলো কেনিয়ায় তাদের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার সমকক্ষদের মতো অর্জিত বিজয়। 

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনে এখন সমানভাবে পরিষ্কার হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেশি হতে পারে। এতে বহু প্রাণ যেতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে। গাজায় ইসরায়েলের চরম সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যেই যুদ্ধে অংশ নিতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত, উন্নত প্রশিক্ষিত এবং কার্যকর অস্ত্র নিয়ে আসছে। একইভাবে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটাতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এতে অনেক ভুক্তভোগী সন্তান অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। 

ইতিহাস এবং বর্তমান সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। এমনকি সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মতো একজন কট্টর ইসরায়েলি সমর্থককেও কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করতে হয়েছে (যদিও তিনি এর ঐতিহাসিক অর্থ বা এর রাজনৈতিক প্রভাব স্বীকার করেননি)। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমরা মূল্যায়ন করেছি যে, হামাস প্রায় তত বেশি নতুন জঙ্গি নিয়োগ করেছে যতটা তারা হারিয়েছে। এটি একটি স্থায়ী বিদ্রোহ এবং চিরস্থায়ী যুদ্ধের একটি রেসিপি।’

ব্রিটেনের মৃতপ্রায় সাম্রাজ্য ১৯৬৩ সালে কেনিয়ার স্বাধীনতাকে মেনে নিতে বাধ্য করে এবং এর সেটলার ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যের বর্তমান পতন ইসরায়েলেও অনুরূপ কিছু করতে বাধ্য করছে। সর্বশেষ এবং সবচেয়ে খারাপ গাজা যুদ্ধের পরে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মাউ মাউ বিদ্রোহের পরে কেনিয়ায় ব্রিটেন যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তার কাছাকাছি পৌঁছেছে।

মার্কিন নেতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইসরায়েলের সঙ্গে জোটের ঝুঁকি এবং খরচ সুবিধার চেয়ে বেশি বাড়ছে। মার্কিন নাগরিকসহ অনেককে রাজি করানো হয়েছে যে, ইসরায়েলকে তহবিল ও অস্ত্র সরবরাহ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত’ এবং তাই বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া যুদ্ধবিরতি অনুসরণ করা হয়েছে।

ইসরায়েল চলমান সমালোচনাকে কীভাবে প্রতিরোধ করে এবং কীভাবে এড়িয়ে যায় তা এখন চলমান মৌলিক গতিপথের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস বলে যে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বা তার উত্তরসূরিরা শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। তাদের হারানো জোট ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ত্বরান্বিত করবে।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, আমহার্স্ট, যুক্তরাষ্ট্র
এশিয়া টাইমস থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি
ড. মোস্তাফিজুর রহমান

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল অনুঘটক হলো বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি হয় না। আমাদের দেশে যেটা দেখছি, ২৪-২৫ শতাংশের মধ্যে বিনিয়োগ থমকে আছে কয়েক বছর। ক্রেডিট নেওয়া হয় ব্যাংক থেকে বিনিয়োগের জন্য, এখানেও স্থবিরতা দেখছি। আমরা দেখছি যে, আমদানি ক্রেডিটের মেশিনারি আমদানির মাধ্যমে যন্ত্রপাতি এনে যে বিনিয়োগ করা হয়, সেই আমদানি নিয়েও একটা স্থবিরতা আছে। 

সবটা মিলিয়ে বিনিয়োগে একটা বড় ধরনের স্থবিরতা আছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই বিনিয়োগে চাঞ্চল্য আনতে হবে। আর দ্বিতীয় কথা হলো, আমি কত ইউনিট বিনিয়োগ করে ১ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ করতে পারি। আমি যদি রেশিও কমাতে পারি, তার মানে হলো- আমার উৎপাদনশীলতা ভালো। আমি যদি ৪ ইউনিট দিয়ে ১ শতাংশ জিডিপি গ্রোথের পরিবর্তে ৩ ইউনিট বিনিয়োগ করে ১ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ করতে পারি, এটাই উৎপাদনশীলতা। এই উৎপাদনশীলতাটুকু জরুরি। 

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কমিটি করেছে। সেই সংস্কার কমিশন কাজ করেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। আমার মনে হয় যে, একটা হতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন এবং দ্বিতীয়ত হতে হবে প্রযুক্তির বাস্তবায়ন। প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে এখন যে সিস্টেম আছে, এটাতে বড় ধরনের পরিবর্তন করতে হবে। এনবিআরের নিজস্ব যে জনশক্তি আছে, তা দিয়েই কাজ পরিচালনা করতে হবে। এনবিআরের নীতিমালা প্রণয়ন এবং নীতিমালা বাস্তবায়ন দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। এনবিআরে যারা কাজ করেন তাদের ওপরের দিকে ওঠার রাস্তা যাতে রাখা হয়, এমন ধরনের সংস্কার করতে হবে। এটার একটা দিক আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। প্রযুক্তিকে যত বেশি কাজে লাগানো যাবে তত বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব হবে। আমরা ইতিবাচক একটা দিক দেখলাম যে, এবার ই-সাবমিশন বা ইলেকট্রনিক সাবমিশন অনেক ভালো হয়েছে। 

করপোরেটের ক্ষেত্রে, ব্যক্তি খাতের ক্ষেত্রে এগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। ডিজিটাল প্রস্তুতিটা রাখতে হবে। আমাদের কাস্টমস, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স- এগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় করতে হবে। যে সফটওয়্যারগুলো তারা ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে ইন্টার অপারেবিলিটি থাকে। একটার সঙ্গে আরেকটার সংযোগ একই সঙ্গে সমন্বয় থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও  অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে থাকে- যাতে ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম আমরা করতে পারি। আমাদের প্রত্যক্ষ কর মাত্র ৩২-৩৩ শতাংশ। এটাকে আরও কীভাবে বাড়ানো যায় তা ভাবতে হবে। সেটা করতে গেলে ইন্টার-অপারেবিলিটি অব দ্য সিস্টেমস অর্থাৎ কাস্টমস, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স- এগুলোর সমন্বয় করতে হবে। বেশি বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইনকাম ট্যাক্সের কাজকে কেন্দ্রীয়ভাবে করতে হবে। এটা বিভিন্ন দেশে আছে। ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর বিশাল সুযোগ আমাদের আছে। সাধারণ জনগণের ওপর অপ্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে নয়, প্রত্যক্ষ কর কীভাবে আমরা বাড়াতে পারি সেই চিন্তা করতে হবে।

 যাদের কর দেওয়ার শক্তি আছে, কিন্তু দেন না, যাদের বিভিন্ন সময় শুল্ককর ১০ শতাংশ দিলেই সব সাদা করা যাবে, রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ করলে সাদা করা যাবে- এ ধরনের যারা আছেন, তাদের প্রণোদনা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। তা থেকে সরে এসে ডিজিটালাইজেশনে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং এনবিআরের মধ্যে জবাবদিহি এবং প্রণোদনা দুটির সমন্বয় করে আমাদের এগুলো মোকাবিলা করতে হবে। কারণ দেখা যাচ্ছে যে, রাজস্ব যা আহরণ করি, রাজস্ব ব্যয়ে তা চলে যায়। পুরো উন্নয়ন ব্যয়টা হয়ে গেছে ঋণনির্ভর। হয় অভ্যন্তরীণ, নয় বৈদেশিক। এটা টেকসই হবে না। যার ফলে বিনিয়োগ পরিষেবার ভার ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই। আমরা যদি রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারি, তাহলে উদ্বৃত্ত রাজস্ব দিয়েও উন্নয়ন ব্যয়ের একটা অংশ মেটাতে পারব। ঋণনির্ভরতা এবং সুদাসলের কারণে বড় ধরনের একটা অঙ্ক আমাদের বাজেটে রাখতে হচ্ছে; যা রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এটা টেকসই হয় না এবং এটা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে।

আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো করতে হবে। এসব জায়গায় আমাদের বড় ধরনের একটা দুর্বলতা রয়েছে। এটাকে মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমান সরকার ১০০টা প্ল্যানের জায়গা থেকে সরে এসে ১০টা স্পেশাল জোনকে ভালোভাবে চালু করতে চাচ্ছে। আমরা কিন্তু আগেই বলেছিলাম, ১০০টা স্পেশাল জোন করার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করে ১০ থেকে ১২টা করে ভালোভাবে চালান। বর্তমান সরকার এ পদক্ষেপগুলোই এখন নিচ্ছে। আমার মনে হয় এটা খুব ভালো যে, তারা এটা করতে চাচ্ছে। এটা হলে বিনিয়োগে চাঙাভাব আসবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ যদি বাড়ানো যায় তাহলে রপ্তানি বাজারে একটা ভালো সংযোগ থাকে। আমাদের রপ্তানিও বাড়ে। 

সুতরাং যারা আমদানি করবে, রপ্তানি করবে এবং স্পেশাল জোনগুলো ব্যবহার করবে, তাদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসের ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুৎ, সেন্ট্রাল প্ল্যান, দক্ষ জনশক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করতে হবে। শুধু জোন করলেই হবে না। আরও অনেক সমান্তরাল কাজ আমাদের করতে হবে। সেসব জায়গায় এখনো অনেক দুর্বলতা আছে। যা এখন উদ্যোগ-উদ্যম নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক একটা পুনর্গঠন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার বিভিন্ন ধরনের পলিসিগত পরিবর্তনও আনার চেষ্টা চলছে এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টাও চলছে। বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি হবে না, কর্মসংস্থান হবে না, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, জীবনমান উন্নত হবে না। সেই বিনিয়োগ মূলত ব্যক্তি খাতেই করতে হবে।
 
শুধু শিল্পোদ্যোক্তা নয়, সার্ভিসেস সেক্টর, ই-সার্ভিস, আইটি অ্যানাবল সার্ভিসেও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। যারা আসতে চাচ্ছেন তাদের জন্য দেশের শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য আমাদের ইনসেনটিভ আছে। সেবা খাতে যে উদ্যোক্তা ইয়াং জেনারেশন, তাদের জন্য স্পেশাল উইনডো সৃষ্টি করা দরকার। এগুলোতে আরও উদ্যোগ-উদ্যম নিয়ে কাজ করতে হবে। ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানো, তার খরচ কমানো- আইটি অ্যানাবল সার্ভিসে যারা আসে তাদের জন্য এ সুযোগগুলো অবারিত করতে হবে। নতুন নতুন খাতে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের যে প্রণোদনা কাঠামো আছে, তার পরিবর্তন লাগবে। রেডিমেট গার্মেন্টসের ভেতরেও অনেক সম্ভাবনা আছে। 

আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশও ভিয়েতনামের মতো বড় রপ্তানিকারক দেশ হতে পারবে। রপ্তানির ভেতরে টেকনোলজিক্যাল যে কম্পোনেন্ট, আমাদের দেশে উচ্চ টেকনোলজি কম্পোনেন্ট ১ শতাংশেরও কম আর ভিয়েতনামে ৪৩ শতাংশের বেশি। সেই রকম একটা টেকনোলজিক্যাল রেডিয়েশন করে আমাদের কিন্তু তুলনামূলক যে সুবিধাগুলো আছে, তাকে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় রূপান্তরিত করার একটা সুযোগ আছে। আগামীতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে, তখন অনেক রেফারেন্স সুবিধা, বাজারসুবিধা, শুল্কমুক্ত সুবিধা, কোটামুক্ত সুবিধা চলে যাবে। সেখানেও আমাদের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে। যাতে করে এই বাজার সুবিধানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থেকে তারা দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় উত্তীর্ণ হতে পারে।

লেখক: সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

সাহিত্যপাঠের সঙ্গী

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:১২ পিএম
সাহিত্যপাঠের সঙ্গী
ড. পবিত্র সরকার

 এবারের ‘ত্রৈলোক্য’তে একটু বিদ্যাজগতের কথা বলি, সাধারণ পাঠকের কাছে মাপ চেয়ে। মাস্টার তো, তাই মাঝে-মধ্যে ওখানে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করে, কিছু খবর দিতে ইচ্ছে করে। সবাই না হলেও, বেশ কিছু লোক এই ধরনের কিছু খবরের জন্য প্রতীক্ষা করি।
ব্যাপারটা একটু গোড়া থেকে বলি। সম্প্রতি স্নেহাস্পদ অধ্যাপক বরুণকুমার চক্রবর্তী তাদের বাংলা বিদ্যা-সমিতির পক্ষ থেকে বাংলা আকাদেমিতে আমাকে (আমাদের প্রয়াত শিক্ষক) অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মারকবক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ করেছিলেন।

বক্তৃতা এমন কিছু আহামরি দিয়েছি বলে আমার মনে হয় না, কিন্তু কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলাম যে, আমাদের মাস্টারমশাইরা যেমন বিশাল বিশাল মহাকাব্যের মতো বই লিখে গেছেন একার চেষ্টায়, এখন সে রকম বিশাল কাজ করার উদ্যোগ দেখি না কেন? মোটা নোটবই হয়তো হয়, কিন্তু মৌলিক কাজ? সাহিত্যের, ইতিহাসের, বা তার কোনো একটা ভাগ- নাটক, কবিতা, উপন্যাস, ইত্যাদির ইতিহাসের? তারা কোনো ডিগ্রি বা পুরস্কারের কথা ভেবে এ কাজ করেননি, চাকরিতে প্রমোশনের জন্যও না- নিছক বিদ্যাভূমিগত তীব্র আকাঙ্ক্ষায় বিপুল অনুসন্ধান আর কঠোর আত্মপীড়দনমূলক পরিশ্রম করে ওই সব মহাগ্রন্থ রচনা করেছেন। 

আমি কেন দেখি না, তার কারণগুলো জানি না, তা নয়, তার কিছু আলোচনাও করলাম।
সেই সভাতেই তারা একজন গবেষককে ‘আচার্য সুকুমার সেন স্মৃতি পুরস্কার’ দিল তার রচিত ‘ফরাসি সাহিত্যের ইতিহাস’ (এবং মুশায়েরা) বইটির জন্য। এই গবেষক অধ্যাপক উদয়সংকর বর্মা, সরকারি কলেজের অধ্যাপনা থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন। বইটি প্রায় চার শ পৃষ্ঠার, এটিই সম্ভবত বাংলায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফরাসি সাহিত্যের ইতিহাস। 

এ বইটির খবর নিয়ে লেখার কথা ভাবলাম কেন? ভাবলাম এই জন্য যে, বাঙালি বহুদিন ধরে ইংরেজিতেই পৃথিবীর নানা সাহিত্য পড়ছে, বাংলা অনুবাদেও কিছু পড়ছে। বাংলা অনুবাদও বেশির ভাগই ইংরেজি থেকে, তাতে মূলের কতটা নষ্ট হয়েছে কে জানে? গল্প-উপন্যাসের ক্ষেত্রে তবু এক কথা, গল্পের ছাঁচটা ধরা যায়। কবিতার বেলায় সমস্যা হয়, জানা কথা। গল্প-উপন্যাসেও অনুবাদে বা অনুবাদের অনুবাদে লেখকের শৈলী, ভাষার কারিকুরি কতটা বজায় থাকে সন্দেহ। কবিতায় তো শৈলীই বারোআনা কথা বলে।

এর পাশাপাশি, এটাও ঠিক যে, বাঙালি অনেকদিন ধরে বাইরের পৃথিবীর নানা ভাষা শিখছে। ইংরেজি ছাড়া সবচেয়ে জনপ্রিয় বিদেশি ভাষা তার কাছে ছিল ফরাসি, এক সময় রুশ ভাষা ফরাসিকে হারিয়ে দিয়েছিল বোধ হয়, এখন তার জৌলুশ কমেছে। জাপানি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে নানা কারণে। চীনা, স্প্যানিশ ইত্যাদিরও চর্চা প্রচুর হয়। আমাদের বন্ধু তরুণ ঘটক মূল স্প্যানিশ থেকে সেরভেন্তেস-এর ‘দোন কিখোতে’ বা ডন কুইক্সোট অনুবাদ করে আমাদের চমকে দিয়েছেন। চীনা, জাপানি থেকেও অনুবাদ হয়েছে, বন্ধুবর অরুণ সোম রুশ থেকে দোর্দণ্ডপ্রতাপে অনুবাদ করে চলেছেন। বাংলাদেশেও এই কাজ প্রচুর হচ্ছে জানি, হয়তো পরিমাণে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি হারে। সব খবর যে আমি রাখতে পারি না, তা আমারই ব্যর্থতা।

এটা ঠিক যে, সবাই সাহিত্য পড়ার জন্য অন্য ভাষা শেখে না, শেখে নানা লক্ষ্য থেকে- ভাষার দেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, অনুবাদক বা দোভাষীর চাকরি, ব্যবসা- এমনকি অন্য ভাষার স্বামী, বধূ বা প্রেমিক-প্রেমিকার তাগিদে। তবে সাহিত্য পড়ার সুযোগ তার একটা বড় পার্শ্বিক লাভ বা উপকার। আর যারা সাহিত্য পড়েন, তারা সে ভাষার উন্নত বা জনপ্রিয় সাহিত্যের অনুবাদ করে নিজেদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতেই পারেন, অনেক বাঙালি যেমন করেছেন। মূল ভাষা থেকে অনুবাদ, ইংরেজি থেকে নয়। 

আমি আগেও লিখেছি যে, ঔপনিবেশিকতা এক সময় আমাদের এমনই আচ্ছন্ন করেছিল যে, আমরা এক সময় ইংরেজিকেই মূল ভাষা ভাবতাম। আমাদের এক বন্ধু বোরিস পাস্তেরনাকের একটা ছোট উপন্যাসের অনুবাদ পড়ে খুব খুশি। বইটির বাংলা নাম ‘শেষ গ্রীষ্ম’- ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। সে সেটা নিয়ে কফি হাউসে ঢুকছিল, এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ায় একটু বাহাদুরি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এটা পড়েছিস?’ বন্ধুটি দেখে একটু উন্নাসিকভাবে বলল, ‘ওহ, বাংলা! আমি অরিজিনালটা পড়েছি- দ্য লাস্ট সামার!’ সে বোঝাতে চেয়েছিল, সে ইংরেজিটা পড়েছে। বলা বাহুল্য, মূল রুশটা সে পড়েনি।

যাই হোক, এখন মূল ভাষা থেকে প্রচুর না হলেও বেশ কিছু বই মূল ভাষা থেকে অনুবাদ হচ্ছে। স্মৃতি এখন বিশ্বস্ত নয়, কিন্তু আবছা মনে পড়ছে প্রাচীন গ্রিক থেকে মোহিনী মোহন চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদ, জার্মান থেকে কানাইলাল মুখোপাধ্যায় বা সুনীলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুবাদের কথা। আগে লোকনাথ ভট্টাচার্য করেছেন ফরাসি থেকে, পরে চিন্ময় গুহ করেছেন। আগে ননী ভৌমিক করে গেছেন, আর এখন আমার সহপাঠী বন্ধু অরুণ সোমের নিরলস কাজের কথা তো বলেইছি, বলেছি স্প্যানিশ থেকে তরুণ ঘটকের অনুবাদের কথা। জাপানি থেকে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, নির্মল দাশ অনুবাদে ব্যস্ত আছেন। বাংলাদেশেও নিশ্চয়ই এই রকম মূল থেকে অনুবাদের একটি বাহিনী গড়ে উঠেছে। সব খবর আমি রাখতেও পারি না।

এবার বাঙালি সাহিত্যপাঠকদের কথায় আসি। তারা পৃথিবীর যেকোনো সাহিত্য বাংলায় পড়ুন বা ইংরেজিতে পড়ুন বা সেই মূল ভাষায় পড়ুন- সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো- এই পড়াটা অনেকটা ফলদায়ক হয় যদি সেই সাহিত্যের একটা ইতিহাস পাশে রেখে সে ভাষার কোনো রচনা পড়তে পারি। তা হলে লেখক সম্বন্ধে, রচনাটা সম্বন্ধে, রচনার গুণাগুণ বা ওই সাহিত্যের ধারাবাহিকতায় তার অবস্থান সম্বন্ধে অনেক কিছু আমরা জানতে পারি, যাতে রচনাটি পড়ার কাজটা নানাভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। অবশ্যই নিছক বিনোদনসন্ধানী পাঠক হিসেবে আমরা এভাবে কোনো বই বা রচনা পড়ি না, হাতের কাছে পাই বলে পড়ে ফেলি। কিন্তু যদি মননশীল পাঠক হিসেবে নিজেকে নির্মাণ করতে চাই, তা হলে সাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে বইটি পড়ার বিকল্প আর কিছু নেই। 

এতকাল আমরা সাধারণভাবে ইংরেজি ভাষায় লেখা নানা ভাষার সাহিত্যের ইতিহাসের ওপর এই কাজের জন্য নির্ভর করেছি, যদি মূল ভাষায় আমাদের ততটা প্রবেশ না থাকে। কিন্তু এটাই আনন্দের কথা যে, বাংলাভাষাতেও এখন বিদেশি সাহিত্যের ইতিহাস কিছু রচিত হচ্ছে, যেমন অধ্যাপক বর্মার বইটি। ইংরেজি ও সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস এক সময় সিলেবাসে ছিল বলে একাধিক বেরিয়েছিল, গুরুস্থানীয় শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য প্রভৃতি অনেকেই লিখেছিলেন। বন্ধুবর রামবহাল তেওয়ারী লিখেছিলেন হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাস। সহপাঠী অরুণ লিখেছেন রুশ সাহিত্যের ইতিহাস। এবারে আমরা পেলাম ফরাসি সাহিত্যের ইতিহাস। বাংলাদেশেও নিশ্চয়ই এ ধরনের কাজ প্রচুর হয়েছে।
এই বইগুলো আমাদের সচেতন ও মনস্ক সাহিত্যপাঠের সঙ্গী হোক।

লেখক: ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

বিজেপির দৃষ্টি এবার পশ্চিমবঙ্গে

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
বিজেপির দৃষ্টি এবার পশ্চিমবঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা বঙ্গেশ্বরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় মেয়াদের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুঁ শব্দও করেননি। মমতার সাম্প্রতিক আন্দোলন কর্মসূচি ভোটার তালিকায় কমিশনের কারচুপি রোখাকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ঠিক না ভুল এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন। এসব ইঙ্গিত দেখে ওয়াকিবহাল মহলের স্পষ্ট ধারণা, নতুন দলের দিকেই পদক্ষেপ রাখছেন তিনি। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই দল ঘোষিত হবে। সেই দলের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নেমে পড়বেন ভাইপো অভিষেক। সেই লক্ষ্যে তিনি নাকি ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে নিজের নামে একটি নতুন দল নথিভুক্ত করেছেন।

আহ্বান নেই, বিসর্জনও নেই। যা রাজ্য রাজনীতি তো বটেই, তৃণমূলের মধ্যেও নতুন করে কৌতূহল বাড়িয়েছে। এ-ও কৌতূহল যে, দিদিই অভিষেককে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে বারণ করে দিয়েছেন, নাকি অভিষেক নিজে থেকেই নীরব। বরং বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ায় দেখা গেল, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সেবার আশ্রয়েই রয়েছেন। তার নির্বাচন কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে বিপুল মানুষকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিষেবা দেওয়ার জন্য অভিষেক যে স্বল্প মেয়াদের শিবির গড়েছেন, তার সাফল্যতেই মজে রয়েছেন সাংসদ। সেবাশ্রয় শিবিরে নথিভুক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ছুঁতে চলেছে। বাংলায় যা বেনজির বইকি। বিস্ময় শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নেই। আবাস যোজনায় কেন্দ্র বরাদ্দ বন্ধ করার পর পাল্টা জেদ দেখিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

 সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষমেশ সবটাই তার অগ্রাধিকার, তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে, তারই সিদ্ধান্ত। কিন্তু গত বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রথমে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, আবাস যোজনায় কেন্দ্র বরাদ্দ বন্ধ করলেও পরোয়া নেই, তৃণমূল সরকার রাজ্যের কোষাগার থেকেই বাংলার মানুষকে বাড়ি বানানোর জন্য টাকা দেবে। এবং তা দেওয়া হবে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। দেখা গিয়াছিল, সেই ডেডলাইন ফেল করেনি সরকার। ৩১ ডিসেম্বরের আগেই ১২ লাখ পরিবারকে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে শুরু করেছিল নবান্ন। শুধু তা নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিসেম্বরে এ-ও ঘোষণা করেন যে,  আরও ১৬ লাখ পরিবারকে আগামী অর্থবর্ষে বাড়ি বানানোর টাকা দেওয়া হবে। অনেকের মতে, সেদিক থেকে এদিনের বাজেট এক প্রকার উদ্‌যাপন করার কথা ছিল অভিষেকের। কারণ, তার মুখরক্ষা হয়েছে। একুশের মঞ্চে তিনি যে ঘোষণা করেছিলেন, তাকে ছাপিয়ে সরকার বৃহত্তর লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে চাইছে। কিন্তু তার পরও দেখা গেল, অভিষেক কোনো শব্দই খরচ করলেন না বাজেট নিয়ে। সংবাদমাধ্যমে সরাসরি কোনো বিবৃতি তিনি দেননি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কোনো পোস্ট করেননি। অথচ ২০২৪ সালে রাজ্য বাজেটের দিন তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন অভিষেক। বাজেটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা হয়েছিল। তা নিয়েই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

অভিষেক অঙ্গীকার করেছিলেন যে, উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি এলাকা মহকুমা হবে। সরকার যেদিন সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, সেদিন এক্স হ্যান্ডেলে বড় পোস্ট করেছিলেন অভিষেক। আবার কদিন আগে নির্মলা সীতারামন সাধারণ বাজেট পেশ করার পর তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সরকারের বাজেট নিয়ে দলের অলিখিত নম্বর টু তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যে কিছু বললেন না, তা অনেকেরই নজর কেড়ে নিল। অনেকেরই মনে হলো, এক নম্বর ও দুই নম্বরের মধ্যে কোথাও একটা মতান্তর হচ্ছে। কোথাও একটা আড়ষ্টতা তৈরি হয়েছে।

দলীয় কর্মীদের বক্তব্য, বিষয়টা এখন আর আড়ষ্টতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন স্পষ্ট দূরত্বই তৈরি হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। সেই দূরত্ব এখন আর ঘোচানো সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো ঠিক কখন নতুন দল তৈরি করবেন অভিষেক। ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, পুজোর আগেই নতুন দলের কথা ঘোষণা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মমতা কি আবার নতুন করে দলীয় সংগঠন গোছাবেন? নাকি এখন থেকেই সেই লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন।

২০২৬-এর লক্ষ্যে অবিলম্বে মাঠে নামতে চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দল ছেড়ে নতুন দল গঠন করে তিনি যে আগামী দিনে নির্বাচনে লড়বেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সেই লক্ষ্যে তলায় তলায় বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার বৈঠকও শুরু হয়েছে। তার দলের সঙ্গে সরাসরি আঁতাত হতে পারে বিজেপির। সে ক্ষেত্রে অভিষেককেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে নতুন করে রাজ্যে এনডিএ জোট গঠিত হতে পারে। এই জোট গঠনের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সব দায়িত্ব অমিত শাহর ওপরই অর্পিত। তিনি দোলের পরেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন। সেই সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোপন বৈঠক হতে পারে।

অমিত শাহর এক নম্বর পছন্দের নেতা হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার সঙ্গে ইতোমধ্যে অমিত শাহর কথা হয়েছে। সম্ভবত সেই কারণে ইদানীং শুভেন্দু কোনো সভাতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না। সম্প্রতি তিনি সন্দেশখালীতে বিজেপির একটি দলীয় সভায় যোগ দেন। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নিয়েও মুখ খুলছেন না অভিষেক। আগে তিনি রাজ্য বিজেপিকে তুলাধোনা করতে ছাড়তেন না। ইদানীং কিন্তু তিনি কেন্দ্রীয় বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত।

জেলা সফরের লক্ষ্যে অভিষেক প্রথমে নিজের জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা দিয়েই শুরু করতে চান। এই জেলায় চারটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্র আছে। দক্ষিণবঙ্গের রাজনীতিতে এই জেলার গুরুত্ব অসীম। তাই নিজের ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে যে সেবাশ্রয় প্রকল্প করে জনগণকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া শুরু করেছেন অভিষেক তা জেলার প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি বোঝাতে চান, তাকে ক্ষমতায় আনলে আগামী দিনে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ হয় এমন নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলা সফর ও কনভেনশনের পর অভিষেক নজর দেবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে। এই জেলার ১৫টি বিধানসভা আসন তার পরবর্তী লক্ষ্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে নজর দেওয়ার কারণ ঘাটাল কেন্দ্রের লোকসভা সাংসদদের সঙ্গে অভিষেকের সুসম্পর্ক এবং সার্বিকভাবে জেলার তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভ।

জানা গেছে, ২১ জুলাইয়ের আগে চার মাসে তিনি রাজ্যের সব জেলা চষে বেড়াতে চান। তার পর ২১ জুলাইয়ের আশপাশের দিন দেখে নতুন দল করার কথা ঘোষণা হতে পারে। শহিদ দিবসকে বেছে নেওয়ার একমাত্র কারণ ওই দিনের জমায়েতকে ফ্লপ শোয়ে পরিণত করা। বিশেষ করে মঞ্চে বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার দিকেই তার অন্যতম লক্ষ্য। তার জন্য এই বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সময়মতো যোগাযোগ করা হবে।

এদিকে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। বাংলায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে এখন থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনা করে নিতে চাইছে তারা। চলতি মাসেই কলকাতা সফরে আসছেন অমিত শাহ। তিনি রণকৌশল নিয়ে কথা বলতে পারেন বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে। হয়তো এই বৈঠকগুলোতেই অভিষেক সম্পর্কে দলের কী পদক্ষেপ হবে তা ব্যাখ্যা করা হতে পারে। জনসমক্ষে এই কৌশল ব্যক্ত না করে আপাতত নেতাদের মধ্যে তা গোপন রাখা হবে। নেতারা সুকৌশলে পরবর্তী স্তরের কার্যকর্তাদের যা নির্দেশ দেওয়ার দেবেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় পদ্ম ফোটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বিজেপি। একাধিক নেতা, মন্ত্রী রাজ্যে এসেছেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন কর্মী-সমর্থকরা। প্রধানমন্ত্রীও একাধিকবার বাংলায় এসে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাতে খুব একটা লাভ হয়নি এবং ২০২১ সালে তৃণমূল ১১৪ আসন পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে। গেরুয়া ঝড় উঠলেও তার প্রতিফলন ভোটের রেজাল্টে দেখা যায়নি। তাই ২০২৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূলকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে প্রস্তুত নয় বিজেপি নেতৃত্ব। চলতি মাসেই কলকাতায় আসছেন অমিত শাহ। সফরের নির্দিষ্ট দিন এখনো জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, দলের ভিতর অভিষেকের সঙ্গে আঁতাত কি সদস্য-সমর্থকরা মেনে নেবেন? তাদের বোঝানো গেলেও শুভেন্দু অধিকারী নিজে কী অবস্থান নেবেন? গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের সামনের সারিতে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরাই ছিলেন। তা সত্ত্বেও ভোটারদের কাছে বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল যে, জিতলে শুভেন্দু অধিকারীই হবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে নন্দীগ্রামে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাস্ত করে তিনি তার ক্ষমতা দেখানোর পর পরবর্তীকালেও রাজ্যের এক নম্বর নেতা হিসেবে তার নামই উঠে এসেছে। 

বিজেপির একাংশ আবার চান, মিঠুন চক্রবর্তীকে কোনো একটি কেন্দ্রে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনে মুখ্যমন্ত্রী করতে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীকেও অনেকে সামনের সারিতে রেখেছেন। তাদের কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল কি আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে? কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য বোঝাচ্ছেন রাজ্যের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটকে ভাগ করার এ ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। এই ভোট ভাগ না করলে বিজেপির এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসা মুশকিল। তাদের আশা, দলীয় নেতারা এই যুক্তি মানবেন।

লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক

গণপরিবহনে আচরণ কেমন হবে?

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৪:১২ পিএম
গণপরিবহনে আচরণ কেমন হবে?
শিহাব শাহরিয়ার

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। ২০০৯ সাল, নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছি। উঠেছি নিউইয়র্কের জ্যামাইকায়। আর বইমেলা হলো বাঙালিপাড়া বলে খ্যাত জ্যাকশন হাইটে। প্রথমবার নিউইয়র্ক। যার বাসায় উঠেছি, তিনি সাবওয়ের একটি স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বললেন, পনেরো স্টেশন পার হলেই আপনি নামবেন। ট্রেনে উঠেই দেখলাম পুরো কম্পার্টমেন্ট নীরব, যাত্রীরা যার যার মতো বই পড়ছে, বসে আছে, দাঁড়িয়ে আছে, মোবাইল দেখছে কিন্তু কোনো উচ্চবাচ্য নেই। আমি নিজেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিন্তু কখন যে ষোলো নম্বর স্টেশন পার হয়ে গেছি টের পাইনি। যাই হোক, সেখানে নেমে একটু ইতস্তত করছি, এমন সময় আমার চিন্তিত রূপ দেখে হঠাৎ করেই আমার সামনে হাজির হলেন সাদা পোশাকধারী একজন জায়েন্ট ফিগারের পুলিশ এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যান আই হেলপ ইউ?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘প্লিজ’। তখন তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কোথায় যাবে (অবশ্যই ইংরেজিতে)’? আমার স্টেশনের কথা বলতেই, তিনি তাকে অনুসরণ করতে বললেন এবং আমাকে ওপাশে নিয়ে ‘ই’ ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বললেন, ‘পরের স্টেশনেই তুমি নেমে যাবে’। বললাম, ‘মেনি থ্যাংকস’।

 তিনি বললেন, ‘ইউ আর ওয়েলকাম’। ব্যস, আমি পরের স্টেশনে নেমে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, হায়রে প্রিয় দেশ বাংলাদেশ? দেশের গণপরিবহন এবং পরিবহনে আমাদের নিয়ম-কানুন, আচার-আচরণ? ব্যক্তিগতভাবে রাজধানী ঢাকায় আছি প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর। প্রথম জামালপুর থেকে ট্রেনে এসে নেমেছিলাম কমলাপুর স্টেশনে। মনে আছে সেই গাদাগাদি, মানুষের কলরব, দীর্ঘ সময় ধরে অসহ্য গরমের মধ্যে বসে থাকা, তার পর গভীর রাতে বাস ধরে মিরপুরের বাসায় আসা? এর মধ্যে ভয় ছিল ট্রেনের মধ্যে ডাকাতি, বিশেষ করে ময়মনসিংহ পার হলে গফরগাঁও ডাকাত এলাকার ভয় কুরে কুরে খেয়েছে। এখন বাংলাদেশের ট্রেনযাত্রা মোটামুটি স্বস্তির হলেও, অন্যান্য অনেক সমস্যা রয়েছেই।

 বিমানে উঠেছি অনেক পরে কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশের শহরগুলোতে গণপরিবহন বলতে ট্রেনের পরেই বাস, এই বাসে চড়েই প্রতিদিন যাতায়াত করি এখান থেকে সেখানে। এই গণপরিবহনে ওঠার নানান দুঃসহ অভিজ্ঞতা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত পাই। বলতে হবে, গণপরিবহনগুলোতে প্রথম সমস্যা যাত্রীদের আচরণ। আপনি বাসে ওঠেন, ট্রেনে ওঠেন, টেম্পোতে ওঠেন, লঞ্চে ওঠেন কিংবা বর্তমান বাংলাদেশে নতুন যুক্ত আধুনিক মেট্রো ট্রেনে ওঠেন- দেখবেন যাত্রীদের আচরণ বদলায়নি? আমরা জানি আচরণ শিক্ষার প্রথম পাঠশালা নিজের পরিবার। পরিবারের অভিভাবকরাই শিখিয়ে দেবেন অথবা বলে দেবেন কোথায় কীভাবে চলতে হবে, কথা বলতে হবে, কাকে বসার সিট ছেড়ে দিতে হবে, কাকে সিটে বসতে আহ্বান জানাতে হবে, চিৎকার করে কথা বলা যাবে না, মোবাইলে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না, অন্য যাত্রীর সঙ্গে অকারণে খারাপ আচরণ করা যাবে না, বলা যাবে না আমি কে তুই জানিস? বলা যাবে না আমি তোরে দেইখ্যা নেব? 

খুব ছোটবেলায়, আমার নানা আমাকে বলেছিলেন, নানাভাই শোনো, তুমি যখন ভবিষ্যতে বাসে অথবা ট্রেনে উঠবে, তখন উঠেই সবাইকে সম্মান করে সম্বোধন করবে, সিট খালি থাকলে আগে নিজে না বসে বড়দের কিংবা মেয়েরা থাকলে তাদের সিটে বসতে আহ্বান জানাবে, কেমন? এই কথাটি নানা বলেছিলেন আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে, আমি এখনো এই কাজটি করি। কিন্তু এখনকার মানুষ বা প্রজন্মের বালক-বালিকারা, তরুণ-তরুণীরা কি তা করছে? সবাই করছে না। কেন করছে না? আমরা তাহলে শিক্ষা-দীক্ষায়, আদর্শে, চেতনায়, মননে, মগজে কতটুকু এগোলাম বা উন্নত হলাম বা দিন দিন নৈতিকভাবে পেছাচ্ছি? আসলে এগোনো বা পেছানো কোনোটাই নয়, বাঙালির আচরণ শুদ্ধ হয়নি বা বলা যায়, একই জায়গায় রয়েছে বা স্থির বা স্থবির হয়ে আছে। কেন বলছি, যেমন ধরুন আপনি মিরপুর থেকে গুলিস্তানে যাবেন, বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন, বাস আসতেই আপনি দরোজা দিয়ে উঠতে যাচ্ছেন, ঠেলাঠেলি করে উঠলেন, উঠে ওপরের রড ধরে দাঁড়ালেন, আপনার পাশেই দাঁড়ানো একযাত্রী মোবাইলে উচ্চস্বরে কথা বলছে, ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বলছেন, আমি ফার্মগেটে এসে গেছি, অথচ দেখেন বাসটি তখন মাত্র দশ নম্বর গোলচক্করে, এই যে দেখুন মিথ্যা বলছেন এবং অন্যদিকে উচ্চস্বরে কথা বলে বাসের পরিবেশকে রীতিমতো কুলষিত করছেন। আপনি তাকে কিছু বলবেন, বললে উল্টা আপনাকে শাসাতে পারে।

 কিংবা ধরুন সিটে জানালার পাশে বসে আছেন, আপনার পাশে যাত্রীটি খপ করে জানালা দিয়ে থুতু ফেলল, এই থুতুর ছিটা বাতাসে উড়ে এসে আপনার গায়ে লাগল, আপনার কেমন লাগবে? আপনি তখন কী করবেন, কী বলবেন, কিছু কি শেখাতে পারবেন তাকে? সে যদি ভদ্র হয় তাহলে, আপনাকে দুঃখিত বলতে পারে, না হলে নয়! আপনি টিস্যু দিয়ে হয়তো থুতু মুছবেন। অথবা ধরুন, পাশের যাত্রীটি সিগারেট ধরিয়ে গাড়িতে ধোঁয়া ছাড়ছে, তখন আপনি এবং বাসের অনেকেই যারা সিগারেট খান না কিংবা সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটি কি তাকে বলতে পারবেন, হয়তো পারলেন কিন্তু বলার পর আপনাকে বলল, আমি সিগারেট খাচ্ছি তো আপনার কী? প্রয়োজন হলে আপনি বাস থেকে নেমে যান? এখন আপনি কী করবেন, নেমে যাবেন? আবার ধরুন, একটি মেয়ে (নারী) বা একজন বয়স্ক ব্যক্তি (সিনিয়র সিটিজেন) বাসের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের কি আপনার বসতে দেওয়া উচিত নয়? ওই আমার নানার কাছেই ফিরে যাই, সম্মান করে বসতে দেওয়াটাই সম্মানের।

আমাদের আচরণ কি উন্নত বা পরিবর্তন করা উচিত নয়? অবশ্যই আচরণ বদলাতে হবে। কারণ আপনার ব্যক্তিগত বা প্রাইভেটে বাহনে যে আচরণ করবেন, গণপরিবহনে একই আচরণ করা যাবে না। দুই ধরনের বাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। আপনি উন্নত জীবন চাইবেন কিন্তু আচরণ সুন্দর করবেন না? আপনি শিক্ষিত হবেন কিন্তু বাসে-ট্রেনে উঠেই উচ্চস্বরে কথা বলবেন, মোবাইল করবেন, ভিডিও দেখবেন, হুট করে ব্যবহার করা টিস্যুটা ফেলে দেবেন, মুরুব্বিদের সম্মান করবেন না- আপনি স্থান-কাল-পাত্র বুঝবেন না, আপনি সুন্দরকে সুন্দর বলবেন না, আপনি নীরবে কথা না বলে- অযথা কোনো বিষয়ে তর্কে জড়িয়ে বা রাজনৈতিক আলোচনায় পুরো বাস বা মেট্রোর কম্পার্টমেন্ট গরম করে তুললেন, বলুন এটি কি শোভন? এটি কি ভালো আচরণ? আমরা মেট্রো রেলের যুগে প্রবেশ করেছি কিন্তু আচার-আচরণে আমরা পিছিয়েই থাকলাম। 

আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন, বাসের চালক, লোকটি নিরক্ষর অথবা স্বল্প শিক্ষিত, সে চালকের সিটে বসে কন্ডাক্টরকে দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে বেদুমছে টানছে আর গাড়ি চালাচ্ছে, এই সময় আপনি যদি বলেন ড্রাইভার সাহেব সিগারেটটা পরে খান, তখন দুই ধরনের উত্তর পেতে পারেন- এক. আপনার অসুবিধা হলে, গাড়ি থেকে নেমে যান অথবা দুই. সে সিগারেটটি নিভিয়ে ফেলবে। দেখবেন চালকরা সব সময় তাদের মতো করে চালাবে, যাত্রীদের সুবিধার কথা তোয়াক্কাই করবে না! হয়তো বলবে, সিটে বইসা থাকেন, কতা কইবেন না? সবচেয়ে ভয়াবহ যেটি, সেটি হলো দূরপাল্লার বাসে অথবা মহানগরে আসা-যাওয়া বাসগুলোতে এসব গণ্ড ও গুন্ডা গাড়িতে চালকরা যাত্রী মেয়ে বা নারীদের ধর্ষণ করে। প্রায় অহরহ ঘটছে এই ঘটনা। 

বাসে ডাকাতি হচ্ছে- শোনা যায়, চালক ও হেল্পার এই ডাকাতির সঙ্গে যোগসাজশ আছে। আমরা কি এই দুঃসহ অবস্থা থেকে উত্তরণ বা নিষ্কৃতি বা নিস্তার পাব? পাব, তবে আগে আমরা নিজেরা এক এক করে পরিশুদ্ধ ও পরিশীলিত হই এবং পরে অন্যকে এই বিষয়ে আহ্বান জানাই। এবং হতে হবেই, না হলে, ভেঙে যাবে ব্যক্তি, ভেঙে যাবে পরিবার, ভেঙে যাবে সমাজ ও চূড়ান্তভাবে ভেঙে যাবে রাষ্ট্রকাঠামো।   

লেখক: কবি
[email protected]

গ্রীষ্মের আগেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
গ্রীষ্মের আগেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করুন

গ্রীষ্ম আসছে। প্রকৃতির উত্তাপ যেন ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে বাতাসে। বাংলাদেশে এই সময়টাতে তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ে, আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বিদ্যুতের চাহিদা। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এই মৌসুমে লোডশেডিং এক অনিবার্য দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়ায়। দুপুর গড়ানোর আগেই শুরু হয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ফ্যান স্তব্ধ, হাসপাতালের ওয়ার্ডে অসুস্থ রোগীর নিশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। কৃষকের সেচযন্ত্র থেমে যায়, কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে পরে।

 বিদ্যুতের এই অপ্রতুলতা শুধুই অন্ধকার ডেকে আনে না, এটি জীবনযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ শুধু জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য নয় এটি অর্থনীতির চাকা সচল রাখারও অন্যতম চালিকা শক্তি। এটি দেশের প্রাণস্পন্দন। দেশ ও জাতির স্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহে সামান্যতম ব্যত্যয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হবে পাশাপাশি অর্থনীতি ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই গ্রীষ্মকাল শুরুর আগেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রজ্ঞা দাস 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ 
[email protected]