
১৯২০ থেকে ১৯৪০-এর দশকে ইউরোপীয় পুঁজিবাদের ফ্যাসিবাদী বিপর্যয়ের সময় আমার জন্ম হয়েছিল। সেই বিপর্যয় ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা নিয়ে ইসরায়েলের বড় অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই নিবন্ধটি বর্তমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বিপর্যয় বিশ্লেষণ করতে অতীতের দুটি ঘটনাকে বর্ণনা করতে হবে।
এই ধরনের একটি নিবন্ধ লেখার পেছনে কিছু কারণ আছে, যা আমার জীবনের কিছু সত্য ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শুরু করি। আমার নানা ও নানিকে নাৎসিদের মৌথাউসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়েছিল। আমার ফুপুকে আউসভিৎস কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়েছিল। আমার মা এবং খালাকে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে।
এই ঘটনার কারণে আমার বাবা-মা ইউরোপ থেকে পালিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন। এ ধরনের নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করা ভিকটিমদের অন্য বংশধরদের মতো নির্যাতনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার জীবনেও ভেসে ওঠে। আমার অনুভূতি দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করি।
উত্তরসূরিদের জীবনে কী ঘটেছে তা নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন। কেউ কেউ বিশ্বের এমন এমন ইতিহাস থেকে বেঁচে এসে নিরাপত্তার খোঁজে অন্যদিকে চলে গেছেন। কেউ আবার সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করেন যে, পৃথিবীর কিছু অংশ বা পুরোটাই সেই অবস্থার বাইরে চলে গেছে- যা ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছে।
কেউ কেউ সেই রকম ক্রোধ ও ভয়ে থাকেন যে, ওই ঘটনা আবার ঘটতে পারে। তাদের মধ্যে অনেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন, যেখানে তারা এটিকে পুনরাবির্ভূত হতে দেখেন। অন্যদের যারা নিপীড়ন চালায় তাদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম চালিয়ে যান। এখনো অনেকে বিভিন্ন নিবন্ধ এবং বই লিখে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন।
ইসরায়েল সারা বিশ্বে পূর্ববর্তী ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদের আদলে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা পরিচালনার চেষ্টা করছে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমাকে পরোক্ষভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। বুঝে ওঠার আগেই, আমি হার্ভার্ড এবং র্যাডক্লিফে আন্ডারগ্রাজুয়েটদের একটি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমাদের ২০ জনকে গ্রীষ্মকালীন শিক্ষাদানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পূর্ব আফ্রিকায় নিয়ে গিয়েছিল। বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার বিষয়ে আমি সেখানে শিখতে শুরু করি।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডক্টরাল গবেষণামূলক কাজে গিয়ে লন্ডনের ঔপনিবেশিক অফিস এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামের রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে আমার জ্ঞান অনেক বেড়ে যায়। আমার বই ‘দ্য ইকোনমিক অব কলোনিয়ালিজম: ব্রিটেন এবং কেনিয়া, ১৮৭০-১৯৩০’ (নিউ হ্যাভেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৪)-এ কেনিয়ার উপনিবেশবাদী অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।
ব্রিটেন কেনিয়ার স্থানীয় জনগণকে বিতাড়িত করেছিল এবং তার কয়েক হাজার শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীর জন্য দেশের উর্বর উচ্চভূমি সংরক্ষণ করেছিল। ভূমি এবং পুলিশ সুরক্ষা ছাড়াও ব্রিটেন তার অভিবাসীদের জন্য কফির বীজ, পরিবহন এবং কেনিয়ায় উৎপাদিত কফি রপ্তানির অর্থনীতি পরিচালনা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। লাখ লাখ কেনিয়ান কৃষ্ণাঙ্গকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তারা তাদের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য অপর্যাপ্ত বলে মনে করেছিল।
এভাবে তাদের বেঁচে থাকার জন্য শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীদের কফিবাগানে স্বল্প মজুরিতে শ্রম দিতে হয়েছিল। সেই স্বল্প মজুরির ওপর আরোপিত ট্যাক্স ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারকে অর্থায়ন করতে সাহায্য করেছিল। তারা নির্মমভাবে শোষক বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছিল। কেনিয়ার এই অর্থনৈতিক এবং জাতিগত বিচ্ছিন্নতা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের মতো সমান্তরাল বিষয়।
এ ধরনের অর্থনৈতিকব্যবস্থার করণে ক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে গণ-আন্দোলন রূপ নেয়। তাদের সংগঠিত বিদ্রোহ ব্যাপক প্রতিরোধের উদ্রেক করে। কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যত্রও এ ধরনের প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটেন নিয়মিতভাবে তাদের দমন করে যায়।
অবশেষে, কেনিয়ায় সংগঠকরা জোমো কেনিয়াত্তার চারপাশে জড়ো হন এবং তথাকথিত কেনিয়া ল্যান্ড অ্যান্ড ফ্রিডম আর্মিকে বিদ্রোহের জন্য একত্রিত করেন। তাদের সংগ্রাম ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৫০-এর মাউ মাউ বিদ্রোহ (জঙ্গি আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন; যা ১৯৫০-এর দশকে কেনিয়ার কিকুয়ু জনগণ দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল) হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
সেই বিদ্রোহে ৬৩ জন ব্রিটিশ সামরিক অফিসার, ৩৩ জন বসতি স্থাপনকারী, ১ হাজার ৮০০-এর বেশি স্থানীয় পুলিশ ও সহায়ক সৈন্য এবং ১১ হাজারের বেশি কেনিয়ান বিদ্রোহীর প্রাণহানি হয়েছিল। ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করে, কেনিয়াত্তাকে বন্দি করে এবং গর্বের সঙ্গে বিজয় ঘোষণা করে।
ব্রিটেনের বিজয় অবশ্য তার কেনিয়া উপনিবেশের জন্য মৃত্যুঘণ্টা শোনায়। মাউ মাউ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং চরম বিদ্রোহ দেখিয়েছিল। তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, সেটলার উপনিবেশের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত মুখোমুখি হবে। ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা এগুলোকে উপনিবেশের বাড়তি খরচ হিসেবে দেখেছিলেন, যেগুলো তারা বহন করতে পারতেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা প্রায় সর্বত্র বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।
ব্রিটিশ নেতারা ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে পালাতে পারেননি। মাউ মাউ-এর কিছু পরে, ব্রিটেন কেনিয়ার জাতীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে, কেনিয়াত্তাকে মুক্ত করে এবং কেনিয়ার নতুন নেতা হিসেবে তাকে গ্রহণ করে। স্বাধীনতা কেনিয়ার বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটায়।
বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার কেনিয়ার পাঠটি ব্রিটিশ নেতাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ইসরায়েলি নেতারা সেখান থেকে শিক্ষা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ইহুদিবাদ এবং ইউরোপীয় ইহুদিদের বিশেষ ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে, বেশির ভাগ ইসরায়েলি নেতা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা চাপিয়ে দিতে এবং বলপ্রয়োগ করে তা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরায়েলি নেতাদের স্বাধীনতার ঘোষণা তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিস্তিনি এবং আরব প্রতিরোধকে উসকে দেয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গণ-আন্দোলন এবং ব্যাপক বিদ্রোহ সেই প্রতিরোধকে প্রশমিত করে দিয়েছে। পূর্ববর্তী ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ইসরায়েলি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবেই থেকে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইসরায়েল বিশ্বশক্তির সঙ্গে জোট গঠন করেছে, যা তার বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ফ্রন্ট-লাইন এজেন্ট হিসেবে অবস্থান করছে। যেখানে প্রধান বৈশ্বিক শক্তি সংস্থানগুলো অবস্থান করছে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবশালী সামরিক সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রাথমিক সমাজতান্ত্রিক, সমষ্টিবাদী এবং কিবুতজিম উপাদানগুলোকে আন্ডারকাট করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটের কারণেই সহজ হয়েছে।
অধিকাংশ ইহুদিবাদী নেতা স্বেচ্ছায় এই জোটের মূল্য পরিশোধ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইসরায়েলের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক নির্ভরতা রয়েছে। অবশেষে, ইসরায়েলি নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অভ্যন্তরে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অংশীদারদের সঙ্গে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সংযোগ গড়ে তোলেন। ইসরায়েলি নেতারা আশা করেছিলেন যে, বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতা টিকে থাকতে পারে।
কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এবং বাইরের অনেকের কাছে এটি মনে হয়েছিল যে, নেতাদের কৌশল এবং সংযোগগুলো এর বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতাকে সুরক্ষিত করতে পারে। তার পর কেনিয়ায় যা ঘটেছিল তা ইসরায়েলে পুনরাবৃত্তি হতে শুরু করে। ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করেছিল, গণ-আন্দোলন অনুসরণ করেছিল এবং অবশেষে, শক্তিশালী ও সংগঠিত বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। ইসরায়েলের বিজয়ের ওপর পরবর্তীকালে আরও বৈশ্বিক সমর্থন বাড়লে তা বিরোধিতার রূপ নেয়। ইসরায়েলি বিজয়গুলো কেনিয়ায় তাদের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার সমকক্ষদের মতো অর্জিত বিজয়।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনে এখন সমানভাবে পরিষ্কার হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেশি হতে পারে। এতে বহু প্রাণ যেতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে। গাজায় ইসরায়েলের চরম সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যেই যুদ্ধে অংশ নিতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত, উন্নত প্রশিক্ষিত এবং কার্যকর অস্ত্র নিয়ে আসছে। একইভাবে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটাতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এতে অনেক ভুক্তভোগী সন্তান অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
ইতিহাস এবং বর্তমান সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। এমনকি সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মতো একজন কট্টর ইসরায়েলি সমর্থককেও কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করতে হয়েছে (যদিও তিনি এর ঐতিহাসিক অর্থ বা এর রাজনৈতিক প্রভাব স্বীকার করেননি)। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমরা মূল্যায়ন করেছি যে, হামাস প্রায় তত বেশি নতুন জঙ্গি নিয়োগ করেছে যতটা তারা হারিয়েছে। এটি একটি স্থায়ী বিদ্রোহ এবং চিরস্থায়ী যুদ্ধের একটি রেসিপি।’
ব্রিটেনের মৃতপ্রায় সাম্রাজ্য ১৯৬৩ সালে কেনিয়ার স্বাধীনতাকে মেনে নিতে বাধ্য করে এবং এর সেটলার ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যের বর্তমান পতন ইসরায়েলেও অনুরূপ কিছু করতে বাধ্য করছে। সর্বশেষ এবং সবচেয়ে খারাপ গাজা যুদ্ধের পরে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মাউ মাউ বিদ্রোহের পরে কেনিয়ায় ব্রিটেন যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
মার্কিন নেতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইসরায়েলের সঙ্গে জোটের ঝুঁকি এবং খরচ সুবিধার চেয়ে বেশি বাড়ছে। মার্কিন নাগরিকসহ অনেককে রাজি করানো হয়েছে যে, ইসরায়েলকে তহবিল ও অস্ত্র সরবরাহ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত’ এবং তাই বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া যুদ্ধবিরতি অনুসরণ করা হয়েছে।
ইসরায়েল চলমান সমালোচনাকে কীভাবে প্রতিরোধ করে এবং কীভাবে এড়িয়ে যায় তা এখন চলমান মৌলিক গতিপথের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস বলে যে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বা তার উত্তরসূরিরা শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। তাদের হারানো জোট ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসান ত্বরান্বিত করবে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, আমহার্স্ট, যুক্তরাষ্ট্র
এশিয়া টাইমস থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল