১৯৯৩ সালের ১৯ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে বরিশাল জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ওই সম্মেলনে জাকির হোসেন সভাপতি ও ফজলুল করিম শাহীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে ২০০৪ সালে নিজামুল ইসলাম নিজামকে আহ্বায়ক, মেজবাহ উদ্দিন জুয়েল, মাহমুদুল হক খান মামুন ও সাহিন সিকদারকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছরের জন্য করা জেলা কমিটির বয়স হয়েছে এখন ৩১ বছর! আর তিন মাসের মহানগর আহ্বায়ক কমিটি চলছে ২০ বছর ধরে! এরই মধ্যে যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদের অনেক নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন যুবলীগের পদ! নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি না হওয়ায় আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনটি এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য জেলা ও মহানগর যুবলীগ নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটির উদাসীনতাকে দায়ী করছেন।
স্থানীয় যুবলীগ সূত্র জানায়, ৩১ বছর আগে জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া জাকির হোসেন বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
এ ছাড়া ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম শাহিন রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে। ওই কমিটির চার নেতা এরই মধ্যে মারা গেছেন। কয়েকজন থাকছেন প্রবাসে। দেশে যারা আছেন তাদের বেশির ভাগই নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম এখন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
মহানগর কমিটির তিন যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন জুয়েল ও সাহিন সিকদার রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। মাহমুদুল হক খান মামুন ২০১৩ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় বহিষ্কার হয়েছেন। জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটিতে যারা আছেন তাদের বেশির ভাগই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। ২০১৯ সালে যুবলীগের বয়স সীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। অধিকাংশ নেতা-কর্মী সেই নির্ধারিত বয়স সীমা আরও ১০ বছর আগেই অতিক্রম করেছেন।
যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশী একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেছেন, তিন দশক ধরে জেলা ও দুই দশক ধরে মহানগরের নেতারা পদপদবি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। তাদের কারণে ছাত্রলীগের অনেক নেতাও যুবলীগ করার বয়স হারিয়েছেন। এতে যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবলীগ নেতা জানান, বরিশালের আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন অনেকটা নির্ভর করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ মতামতের ওপর। তবে সম্প্রতি তার বিরোধী শিবির হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম ও হাসানাত আবদুল্লাহ্র ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ্ যুবলীগের কমিটি গঠনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আবুল হাসানাতের মতামত ছাড়াই সেই চেষ্টায় সফলতা আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের বরিশালের কমিটি গঠনের বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে তিনটিতে আহ্বায়ক কমিটি এবং সাতটিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘কমিটি তিন দশকের পুরোনো হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের বিশাল কর্মী বাহিনী দিয়ে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করা হয়। কমিটি গঠন কিংবা সম্মেলনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। কমিটি হলে যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম বলেন, ‘যুবলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় আওয়ামী লীগেও নতুন নেতৃত্ব আসছে না। জেলা ও মহানগরে কমিটি দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যোগ নিতে হয়। কিন্তু তেমন কিছু আমরা দেখতে পারছি না। যুবলীগকে আরও শক্তিশালী করতে সম্মেলন জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দিলে সংগঠন শক্তিশালী হয়। নতুন নেতৃত্ব আসে। রাজনীতিতে গতি আসে।’
একই ব্যক্তি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার বিষয়টি তালুকদার মো. ইউনুসের নজরে আনা হলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে দুই সংগঠনে একসঙ্গে থাকার বিষয়টি নিয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। তবে, যুবলীগের পরবর্তী কাউন্সিলে তারা আর থাকতে পারবেন না।’
যুবলীগের বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভাগের বরিশাল মহানগর, জেলা ও ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়নি। অচিরেই এই তিন সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।’