মহানগরের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে ও ইউনিটে আজ রবিবার জমায়েতের মাধ্যমে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
তাছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগের স্থগিত হওয়া শোক মিছিলটি সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা ৩টায় শুরু হবে।
শনিবার (৪ আগস্ট) ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রদের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা অফিশিয়ালি সেটা বলিনি। আমাদের যোগাযোগের একটা মাধ্যম তো আছে। যখন যোগাযোগ হবে, তখন আপনারা দেখতে পাবেন, জানতে পাবেন। এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন তার দরজা খোলা, তিনি আলোচনা করবেন। তাহলে নিচের দিকে আর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার কোনো ব্যাপার না। আমাদের যোগাযোগের দরজা খোলা।’ আন্দোলনকারীরা আলোচনায় না বসলে আওয়ামী লীগ কী করবে? এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আমার পজিটিভ বিষয়টা বললাম। নেগেটিভে যাব কেন? দরজা খোলা রাখছি।’
বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে কি না, ঘটলে আওয়ামী লীগ কী করবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
চলমান ইস্যুতে ৩২ শিশু হত্যা- ইউনিসেফের এমন তথ্যের প্রমাণ চান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অবুঝ শিশুরা কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় পড়ে না। অবুঝ শিশুর তাজা প্রাণ ঝরিয়ে আমাদের সরকারি দলের কোনো লাভ নেই। লাভ তাদের, যারা এ শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তার পরও আমরা ইউনিসেফকে অনুরোধ করব যে ৩২ জন শিশু হত্যার কথা তারা বলছেন, আমরা সেই শিশুদের নাম-ঠিকানাসহ জানতে চাই। এটা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সত্য খুঁজে বের করুন।’
গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটা মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব-অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেহাত হয়ে তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে গেছে। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে অশুভ শক্তির এই অপতৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না।’
বিএনপি-জামায়াত লাশের রাজনীতি করছে- এমন দাবি করে কাদের বলেন, তাদের ষড়যন্ত্র ও উসকানির মাধ্যমে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার বাহিনী সহিংসতা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছে। ফলে দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই আহত। এ ছাড়া অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ সদস্য হত্যার দায় কার? বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে এ প্রশ্ন রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবি করেছে। সরকার তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এখানে জাতিসংঘ যদি যুক্ত হয়, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
সরকার গঠিত তদন্তে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের কাছে সরকার আবেদন করেছে কি না?- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এটা তার বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করেছেন। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলার পর জাতিসংঘ একটা প্রস্তাব দিয়েছে। এটা তো চিঠি দিয়ে বলেনি। আমরাও সেটাতে সায় দিয়েছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।