বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসকের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি না করার আহ্বান জানিয়েছে দলগুলো।
সোমবার (৫ জুলাই) পৃথক বিবৃতিতে শীর্ষ নেতারা এই আহ্বান জানান।
তারা বলেন, এই আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তারা শহিদ। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছি: কর্নেল অলি
বাংলাদেশ লিবারেল পার্টি (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল অলি আহমদ (অব.) বীর বিক্রম বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ জনতার। এখন আপনাদের সকলকে ধৈর্যের সঙ্গে থাকতে হবে। দেশের সম্পদের কোনো রকম ক্ষতিসাধন করা যাবে না।’
তিনি বলেন, সময়ের দাবি এখন একটি সুন্দর জাতীয় সরকার গঠন করা। এই সরকারে কোনো অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ, নীতি-নৈতিকতাহীন, দেশদ্রোহী, অবৈধ সরকারের সুবিধাভোগী কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
বিশ্ব ইতিহাসে এক স্বর্ণালি ঐতিহ্য: চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর বলেছেন, জালিমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার সুফল আবারও প্রমাণ করেছে দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতা। ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী ও সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন বিশ্ব ইতিহাসে এক স্বর্ণালি ঐতিহ্য হয়ে থাকবে। এখন সময় নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের। ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণের সংগ্রামে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই রাষ্ট্র আমাদের। দেশের প্রতিটি সম্পদ আমার আপনার টাকায় গড়া। দেশের ১৮ কোটি মানুষ মিলেই আমরা একটি জাতি। সেজন্য দেশের কোনো সম্পদ যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। সংখ্যালঘু ভাইবোনদের নিরাপত্তা যেন ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
হেজাফতে ইসলাম:
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান বলেছেন, এখন ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রনেতৃত্ব, আলেম-ওলামা ও জনগণের আস্থাভাজন রাজনীতিবিদদের দূরদর্শী কৌশল ও কর্মপরিকল্পনাসহ এই গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বিজয় সবার। ছাত্রনেতৃত্বকে সতর্ক থাকতে হবে, কোনো আত্মঘাতী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এমন একটি ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান ও সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে আর কখনো কোনো ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের দালালদেরও বিচার করা হবে। সংখ্যালঘুদের সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
গণহত্যার হুকুমদাতাদের বিচার করতে হবে: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
ছাত্র গণহত্যার হুকুমদাতা ও জড়িত আওয়ামী মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বৃত্ত কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সভাপতি বদরুদ্দীন উমর ও সম্পাদক ফয়জুল হাকিম। তারা বলেন, অবিলম্বে আটক সকল ছাত্র-জনতা ও রাজবন্দির মুক্তি প্রদান এবং সকল মিথ্যা মামলা বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে জালিয়াতির নির্বাচনে গঠিত জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
এই বিজয় ছাত্র-জনতার: খেলাফত মজলিস
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, আজকে (গতকাল সোমবার) চূড়ান্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র-জনতার গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। এই আন্দোলনসহ বিগত সময়ে যত মানুষ অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
তারা বলেন, এই বিজয় ছাত্র-জনতার। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণের শপথ নিতে হবে। ছাত্র-জনতাকে তা পাহারা দিতে হবে। এই বিপ্লব বেহাত হতে দেওয়া যাবে না।