আগামী ১৫ আগস্ট ঘিরে মাঠে নামতে চায় আওয়ামী লীগ। ওই দিন বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে কর্মসূচি পালন করবেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। সেই লক্ষ্যে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতা-কর্মীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দলীয় একাধিক সূত্রে এমন খবর জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্ট মাঠে নামলেই এটাই হবে আওয়ামী লীগের প্রথম রাজনৈতিক মাঠে জানান দেওয়া। শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার এক সপ্তাহের বেশি সময় রাজনৈতিক মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ ও দলের সব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দলটির প্রায় অর্ধেকের বেশি নেতা এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত দলের শীর্ষ কোনো নেতা প্রকাশ্যে আসেননি। কিন্তু আগামী ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক’ দিবসে দলের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক মাঠে আসতে চাইছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায় থেকে নেতারা কর্মীদের ১৫ আগস্টে শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে নামার বার্তা দিয়েছেন।
এদিকে ‘জাতীয় শোক’ দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে উপদেষ্টা পরিষদ। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সরকারিভাবে পালন করা হতে পারে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় দলের অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা ও আশপাশের নেতা-কর্মীদের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রাঙ্গণে সমাগত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সারা দেশে নেতা-কর্মীরা স্ব স্ব এলাকায় কর্মসূচি পালন করবেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা, মৌন মিছিল, মোমবাতি প্রজ্বালন, মিলাদ-দোয়া মাহফিল, শোক মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির এক নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছি। নেতা-কর্মীরা শ্রদ্ধা জানানো শেষে দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন। কোনো ধরনের ঝামেলায় জড়াবেন না তারা।’ একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক নেতাও। সাবেক ছাত্রনেতারাও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। তাদের একাধিক নেতা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে ১৫ আগস্টের বিষয়ে গত রবিবার রাতে নিজের ফেসবুকে এসে কথা বলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘যে বঙ্গবন্ধু আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, এই ১৫ আগস্ট আপনাদের প্রতি আহ্বান- শান্তিপূর্ণভাবে ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিয়ে আসুন। দোয়া করবেন বঙ্গবন্ধুর জন্য, স্বাধীনতার চেতনার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য।’ বঙ্গবন্ধু একটি দলীয় বিষয় না উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হচ্ছে জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু না থাকলে আজকে আমরা বাংলাদেশ হতাম না। পাকিস্তান হয়ে থাকতাম।’
তবে ১৫ আগস্ট দলীয় কর্মসূচি পালনের বিষয়ে অনুমতি চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ- এমন একটি খবর একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে হানিফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টিকে ‘ফেক নিউজ’ বলে জানান।
১৫ আগস্ট শোক দিবসে একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৭টায় শোক র্যালি (ধানমন্ডি ৩২ থেকে কলাবাগান মাঠ), ৮টায় বনানী কবরস্থানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। ঢাকা মহানগর যুবলীগের দুই নেতা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের ‘বার্তা’ পাঠিয়ে দিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হাজির হয়ে কর্মসূচি পালন করবেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ধানমন্ডির কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। শ্রদ্ধা জানানো হবে ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি।
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। ধানমন্ডি ও গোপালগঞ্জের কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে দলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এর মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করা হবে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জমায়েত বড় করতে নেতারা ইতোমধ্যে কাজ করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি পালন করবেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল এমন সাধারণ নাগরিকদের এ কর্মসূচিতে যোগদানের আহ্বান জানানো হবে।
এদিকে মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রোকেয়া প্রাচী ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন- ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে উপস্থিত হওয়ার। গতকাল সোমবার ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা জেগে উঠব এই ধ্বংস থেকে। জেগে উঠব আগুনে পোড়া ৩২-এর এই ঘর থেকে। জেগে উঠব নিভে যাওয়া ছাই থেকে। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভেবেছ সব সাহস পুড়েছে? পুড়েছ তোমরা! আমরা বাঙালি এই ছাইভস্ম থেকেই উঠব আবার আগুন হয়ে জেগে! জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’
এদিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ জি এম সাহাবুদ্দীন আজম।
তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া বিকল্প নেই। নেত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন। উনি শুধু রক্তপাত বন্ধে মানুষের কথা চিন্তা করে দেশ ছাড়তে রাজি হয়েছেন। তিনি দেশ ছাড়তে চাননি, তিনি টুঙ্গিপাড়ায় আসতে চেয়েছেন। তাকে জোর করে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন।’
১৫ আগস্ট কর্মসূচির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে সাহাবুদ্দীন আজম বলেন, ‘নেত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। নেত্রী জাতীয় শোক দিবসে কর্মসূচি পালনের জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। গোপালগঞ্জ থেকে কাউকে ঢাকা যেতে বলা হয়নি। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার নেতা-কর্মীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাবেন। আমরা গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাব, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। এসব কর্মসূচিতে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন।’