দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিতর্কের দায়ে নয়, দুর্নীতি-দুঃশাসন ও শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্যই আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, এই কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পতনে কোনো রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নেই। অনেক দল তো নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল, পেরেছিল কি? অনেক দল নির্বাচনে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকারই তাদের নামে বিভিন্ন মামলা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছিল। তবে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়নি, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য। শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে।’
দশম থেকে দ্বাদশ- প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে নানা মহলে। জাতীয় পার্টি প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হওয়ায় দলটিকে নিয়েও সমালোচনার অন্ত নেই। এ প্রসঙ্গে সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচনে নিয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি কি মন্ত্রী হতে নির্বাচনে গিয়েছি? আমি তো ২০০৮ সালে মন্ত্রী ছিলাম। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছিলাম। আমি কখনো মন্ত্রিত্বের জন্য রাজনীতি করি না।’
২০১৪ সালে জাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার ভাই জি এম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির ২৭০ জন নেতা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জি এম কাদের বলেন, ‘তখন আওয়ামী লীগ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির আরও একটি গ্রুপ বানিয়ে লাঙল মার্কা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এই ধারাবাহিকতায় বজায় থাকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও।’
জি এম কাদের বলেন, ‘জোর করে নির্বাচনে নেওয়ার কারণে আমাদের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের পতন না হলে আমাদের দল বিলীন হয়ে যেত। আওয়ামী লীগের পতন না হলে কোনো দলই বাংলাদেশে থাকত না। শুধু আওয়ামী লীগ থাকত।’
সমালোচকদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টি চেয়াম্যান বলেন, ‘আমরা কখনো আওয়ামী লীগের দোসর ছিলাম না। আমরা সব সময় জনগণের দোসর ছিলাম। তবে জাতীয় পার্টিকে সব সময় ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টি নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।’
জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল না বলেও দাবি করেন দলটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে দানব বানিয়েছি। কোনো দল যদি দানব হয়ে থাকে তাহলে তারা নিজেদের দোষেই দানব হয়েছে। আবার কোনো দল সুযোগ পেলে যে দানব হবে না তা কি বলা যায়। তা ছাড়া এখন যারা বড় বড় কথা বলছেন, তারা আওয়ামী লীগের আমলে কতজন কথা বলতে পেরেছেন? আওয়ামী লীগকে নিয়ে থা বলার পরে যদি আওয়ামী লীগ পরের দিন আপনাকে আবার সেই কথার উল্টা কথা বলতে বলত, না বলে পারতেন? আমরা আমাদের কথা বলে গেছি, আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলেছি। আমাদের বিরোধীদল করা হয়েছিল, আমরা ইচ্ছেমতো সরকারের সমালোচনা করতে পেরেছি।’
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মেহেরুন্নেসা খান হেনা পন্নী, মহিলা পার্টির নেতা ডা. সেলিনা খান, জেসমিন নূর প্রিয়াঙ্কা, তাসলিমা আক্তার রুনা, সীমানা আমির, ফরিদা সিকদার, মিথিলা রওয়াজাসহ আরও অনেকে।
জয়ন্ত সাহা/সালমান/