ঢাকা ২৭ ভাদ্র ১৪৩১, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বলতে চাই: জি এম কাদের

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বলতে চাই: জি এম কাদের
জি এম কাদের

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পতন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ সরকারকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন সদ্য বিদায়ী সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপচারিতায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক জয়ন্ত সাহা

খবরের কাগজ: গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতির এই সন্ধিক্ষণকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 
জি এম কাদের: দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বলতে চাই। এই বিপ্লব আমাকে অভিভূত করেছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রবীণ ও নবীনদের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানাই। একে ছাত্র-জনতার সমর্থনপুষ্ট বিপ্লবী সরকারও বলা যায়। আমাদের ইতিহাসে এরকম গৌরবময় অধ্যায় এর আগে দেখিনি। তরুণদের দেশাত্মবোধ ও জনগণের প্রতি অঙ্গীকার আমাকে মুগ্ধ করেছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা এতদূর অগ্রসর হতে পারে- এটা আমার কাছে মনে হয়েছে বিশাল পাওয়া। 

খবরের কাগজ: উপদেষ্টার দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এই ক্রান্তিকালে সংকট মোচনে তাদের ওপর কতটুকু ভরসা করা যায়? 
জি এম কাদের: আগে আমরা সেনাশাসিত বা সেনাবাহিনী পরিচালিত সরকার দেখেছি। স্বাভাবিক সরকারও দেখেছি। এখন আরেকটা নতুন সরকার আমাদের সামনে। মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন, আমরাও (জাপা) দীর্ঘদিন ধরে সেসব সমস্যা নিয়ে কথা বলছি। আমি মনে করি তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এখন এগুলো সমাধান করা দরকার। নবীনদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা, কৌশলগত ধারণা অনেক সময় না-ও থাকতে পারে। সেখানে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। তারা চাইলে আমরা সেটুকু দেশের স্বার্থে কাজে লাগাব ইনশাআল্লাহ।

খবরের কাগজ: বৈষম্যের মূলে কুঠারাঘাত করে নতুন এক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চান। তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?
জি এম কাদের: তাদের প্রথম কাজটিই তো গেটওয়ে টু ডেমোক্র্যাসি। সেখান থেকেই প্রতিটি স্তরে সরকারের জবাবদিহি শুরু হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। সংসদীয় গণতন্ত্র সত্যিই যদি তারা রাখতে চান, তাহলে ইউনাইটেড কিংডমের মতো ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট করতে হবে। আমাদের এখানে না হয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্র, না হয়েছে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার। ইন বিটউইন সামথিং, ইট গোজ অ্যাগেইনস্ট দ্য পিপল, যাতে শাসককে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটা থেকে উত্তরণ করা দরকার। 

খবরের কাগজ: রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচনি কাঠামো সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কোনো পরামর্শ দেবেন কী? গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের কাছে কোনো দাবি রয়েছে আপনার?
জি এম কাদের: সবসময় বলে আসছি, দেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকুক। এর প্রথম ধাপ হলো দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ধরনের নির্বাচন আয়োজন। আমরা সবসময় দেখেছি, যে-ই সরকারে এসেছে, সে-ই সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছে পরবর্তী নির্বাচনে কীভাবে কারচুপি করে জেতা যায়, কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের করে নেওয়া যায়- তার ওপর। আমরা আশা করব, এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা নির্বাচন ম্যানিপুলেশন করতে দেবেন না কাউকে। তারাও যেন কোনোভাবে এমন পরিস্থিতিতে জড়িয়ে না পড়েন। টাকা-পয়সা আর অনিয়ম, দুর্নীতিতে নির্বাচন সয়লাব হয়ে যেত এত দিন। এ থেকে বের হতেই কিন্তু মানুষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সাপোর্ট করেছে। দেশের মালিক জনগণ। প্রথম কথা হলো, জনগণকে তার মনের মতো প্রতিনিধি নির্বাচন করতে দিতে হবে; যাদের দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে। 

খবরের কাগজ: সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী এনে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কথাও আপনি বারবার বলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেটি আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলছেন তরুণরা। 
জি এম কাদের: রাষ্ট্রের পিলারগুলো যেন কোনোভাবেই আর এক ব্যক্তি, বা এককেন্দ্রিক পিলারে পরিণত হতে না পারে। এক ব্যক্তিকে বারবার ক্ষমতায় আনলে- যতই তিনি গণতান্ত্রিক হোন না কেন, সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার একটা প্রবণতা ঐতিহাসিকভাবে আমরা সেই ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্য করেছি। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডায় সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি এক ব্যক্তিকে চিফ এক্সিকিউটিভ করা হয় না। এ ধরনের সিস্টেম আমাদের এখানে চিন্তা করা যেতে পারে। পার্লামেন্টে জনগণের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মতো লোক থাকতে হবে। 
একই সঙ্গে অ্যান্টি করাপশন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনকেও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। তারা সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবেন, কোনো দল বা ব্যক্তির জন্য নয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের শক্তিশালী করতে হবে। 

খবরের কাগজ: সম্প্রতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে করণীয় কী?
জি এম কাদের: সরকারের সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গেলে দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োজন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। আমাদের কনস্টিটিউশনে কিছু কনট্রাডিকশন আছে। বিচার বিভাগ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করছেন এক্সিকিউটিভ, চিফ এক্সিকিউটিভ বা নির্বাহী বিভাগ। এটা থেকে উত্তরণ দরকার। বিচার বিভাগ হলো মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। লোক বিপদে পড়লে সেখানে গিয়ে যেন আশ্রয় নিতে পারে। তার জন্য বিচার বিভাগের সেই ভাবমূর্তি তৈরি করতে হবে। সেটা করতে গেলে সংবিধানের যে ধরনের সংশোধনী প্রয়োজন; এগুলো আনতে হবে। 

খবরের কাগজ: সংবিধানে সংশোধনী আনতে গেলে প্রয়োজন জাতীয় সংসদ অধিবেশন। অন্তর্বর্তী সরকার কি সেটি পারবে? 
জি এম কাদের: সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটা কিভাবে করা হবে তা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারব না। এটা তো বিপ্লবী সরকার; এখন যা হচ্ছে তার সবটা হচ্ছে দেশ ও জনগণের স্বার্থে। জনগণ যদি চায় তবে যেকোনোভাবে নিয়ম তৈরি করা যেতে পারে। তবে জনগণের মতামত নিয়ে সব কিছু করতে হবে।
খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ- দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার। এ মুহূর্তে অর্থনীতির ঠিক কোথায় গুরুত্বারোপ করা উচিত?

জি এম কাদের: অর্থনীতি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। রিজার্ভ দুর্বল অবস্থায়। প্রচুর দেনা আছে। সামনের দিকে যে আয় করার কথা আমাদের- সেটি অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পোশাক খাত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে; সেটা যত তাড়াতাড়ি চলে যায় তত ভালো। এখন অন্যান্য কল-কারখানা যেন উৎপাদনে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে- সেখান থেকে আয় করতে হবে। বাস্তবে আমাদের নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস একটাই, সেটি প্রবাসী আয়। এর বাইরে আয় করতে না পারলে ঋণের কিস্তি এবং সুদ পরিশোধ কঠিনতর হবে। তখন দেশ চালানো কঠিন হয়ে যাবে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে না পারলে মানবিক সমস্যার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। মানুষ চাকরি হারাবে, পণ্যমূল্যের দাম বাড়বে। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এগুলো সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হবে। আরেকটা মন্ত্রণালয় নিয়ে আমি খুব চিন্তিত, সেটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রচুর অর্থ দেনা হয়েছে, প্রচুর অর্থ অপচয় হয়েছে। এগুলো কঠিন হাতে দমন করতে হবে। বিদ্যুৎ-গ্যাস যদি ঠিকমতো সরবরাহ করতে না পারি তবে দৈনন্দিন সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। 
খবরের কাগজ: দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনমনে অসন্তোষ রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। আপনার মতামত কী?
জি এম কাদের: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসা, তা নিয়মিত সরবরাহ করার কাজটি তাদের করতে হবে। ইকোনমিকসে একটা টার্ম আছে ‘প্রি মার্কেট’। এর মানে হলো- বায়ার্স থাকবে অনেক; ক্রেতা থাকবে অনেক, বিক্রেতাও থাকবে অনেক। ইকোনমিক থিওরিতে বায়ার্স আর সেলার্স যদি সাফিশিয়েন্ট থাকে, তাহলে অপটিমাম প্রাইস সবার জন্য কাজ করবে। ক্রেতা পর্যায়ে গিয়ে সেটা স্ট্যাবল হবে। ওই ধরনের পরিস্থিতি বাজারে সৃষ্টি করতে হবে যেন মার্কেটে যথেষ্ট সরবরাহ থাকে। তাহলে মার্কেটে ক্রেতা থাকবে, বিক্রেতাও থাকবে। বিক্রেতার সংখ্যা কমে গেলে মনোপলির দিকে চলে যায়। তখন সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় একটি দল। বিগত সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বাজারে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারকে এ দিকে নজর দিতেই হবে। 

খবরের কাগজ: নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই সরকারকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে চান কি?
জি এম কাদের: না, আমরা কোনো সময়সীমা বেঁধে দিতে চাই না এখনই- ওয়েট অ্যান্ড সি। তারা কী করতে চাচ্ছেন, কতটুকু করতে চাচ্ছেন, তা দেখতে চাই। তারা সঠিক পথে থাকলে আমরা তাদের সবসময় সমর্থন দেব। আমি মনে করি, তারা তাদের কাজটি সঠিকভাবে করবেন। তারা দেশ ও জনগণের স্বার্থ দেখবেন। যখন নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হবে, তখন তারাই নির্বাচনের কথা বলবেন। নতুবা আমরা (রাজনৈতিক দলগুলো) সেটা বলব। 

দুই দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক সরকারকে স্থিতিশীল রাখতে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
সরকারকে স্থিতিশীল রাখতে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত
গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি

অন্তর্বর্তী সরকারকে স্থিতিশীল রাখতে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা সবাই মিলে দেখেছি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনে ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করব। এখানে যদি দুই-একটা সংযোজন করার প্রয়োজন হয়, সেগুলোও আলোচনার মাধ্যমে আগামী দিনে সংযোজন করবো। ৩১ দফা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরব।’

আমীর খসরু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি, কারণ জাতি রক্তপাতের মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে। এই সরকার যাতে দ্রুত তাদের কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে এবং নির্বাচনি কার্যক্রমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে একটি স্বৈরাচারী প্রথা থেকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশে নির্বাচন হয়- এখানে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য ঐকমত্য হয়েছি।’

বিএপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচনের পর আন্দোলনরত সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবেন। যার মাধ্যমে এই ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ।’ 

বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো সহযোগিতা করবে। আর এই সরকার কতদিন থাকবে, সেটা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন হয়। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, এতদিন আমরা ৪২টি দল মৌলিক দাবিতে একমত হয়ে আন্দোলন করেছি। যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো সরকারের যৌক্তিক সময় দেওয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে।’

বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ও লিয়াঁজো কমিটি প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিটির সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংগঠনের আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাটের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়। এদের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চারজন সমন্বয়কও ছিলেন। পরে বিকাল সোয়া ৫টায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। 

শফিকুল ইসলাম/সালমান/

 

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিশেষ নিরাপত্তা আইন বাতিলে ইউরোপিয়ান আ.লীগের নিন্দা

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম
বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিশেষ নিরাপত্তা আইন বাতিলে ইউরোপিয়ান আ.লীগের নিন্দা
আওয়ামী লীগ

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তা আইন বাতিলের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান এই প্রতিবাদ জানান। 

পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে বিশেষ নিরাপত্তা আইন পুনর্বহাল করার জোর দাবিও জানিয়েছেন।

‘রাজনৈতিক সরকার ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে না’

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম
‘রাজনৈতিক সরকার ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে না’
দাবি দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট

রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখাসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাম জোটের ‘দাবি দিবস’ উপলক্ষে বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তারা এসব দাবি জানান। 

জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রেশনিং চালু, খেলাপি ঋণ ও পাচারের টাকা উদ্ধার, দুর্নীতিবাজ-ঋণখেলাপি-অর্থ পাচারকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও বিচার এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর দাবিও জানান। 

বাম নেতারা বলেন, ‘প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সবখানেই সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকলে এবং জবাবদিহির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হলে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে না। এক দখলবাজের পরিবর্তে আর এক দখলবাজ নয়; সাম্প্রদায়িক হামলা ও নিপীড়নও আমরা চাই না।’

তারা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট, দেশের টাকা পাচার, দিনের ভোট রাতে নয়- এটাই দেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের রূপরেখা হাজির করতে হবে। ফ্যাসিবাদী শাসক উচ্ছেদের পর এখন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ প্রয়োজন। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়, দুর্নীতি এবং পাচারকৃত টাকা উদ্ধার করতে হবে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক ও বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।

মাজারের নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জাকের পার্টির

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
মাজারের নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জাকের পার্টির
জাতীয় প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে জাকের পার্টি

সারা দেশে মাজারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াসহ প্রতিটি মাজারে নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে জাকের পার্টি। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাকের পার্টির এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে দলটি।

লিখিত বক্তব্যে দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার অভিযোগ করেন, ‘ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বিজয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং সামগ্রিক অর্জনকে নস্যাৎ করার অনভিপ্রেত দুরভিসন্ধিমূলক ঘটনার অবতারণা চলছে। মাজারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’ 

আওয়ামী লীগ বা বিএনপি জোটে জাকের পার্টি নেই বলে উল্লেখ করে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘মাজারবিরোধীরা আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকের পার্টির মাজারে হামলা করার গোপন পরিকল্পনা করেছে।’ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

শফিকুল ইসলাম/সালমান/

শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্য আ.লীগের পতন হয়েছে : জি এম কাদের

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম
শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্য আ.লীগের পতন হয়েছে : জি এম কাদের
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিতর্কের দায়ে নয়, দুর্নীতি-দুঃশাসন ও শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্যই আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, এই কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জি এম কাদের। 

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পতনে কোনো রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নেই। অনেক দল তো নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল, পেরেছিল কি? অনেক দল নির্বাচনে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকারই তাদের নামে বিভিন্ন মামলা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছিল। তবে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়নি, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য। শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে।’

দশম থেকে দ্বাদশ- প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে নানা মহলে। জাতীয় পার্টি প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হওয়ায় দলটিকে নিয়েও সমালোচনার অন্ত নেই। এ প্রসঙ্গে সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচনে নিয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি কি মন্ত্রী হতে নির্বাচনে গিয়েছি? আমি তো ২০০৮ সালে মন্ত্রী ছিলাম। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছিলাম। আমি কখনো মন্ত্রিত্বের জন্য রাজনীতি করি না।’

২০১৪ সালে জাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার ভাই জি এম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির ২৭০ জন নেতা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জি এম কাদের বলেন, ‘তখন আওয়ামী লীগ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির আরও একটি গ্রুপ বানিয়ে লাঙল মার্কা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এই ধারাবাহিকতায় বজায় থাকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও।’  

জি এম কাদের বলেন, ‘জোর করে নির্বাচনে নেওয়ার কারণে আমাদের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের পতন না হলে আমাদের দল বিলীন হয়ে যেত। আওয়ামী লীগের পতন না হলে কোনো দলই বাংলাদেশে থাকত না। শুধু আওয়ামী লীগ থাকত।’ 

সমালোচকদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টি চেয়াম্যান বলেন, ‘আমরা কখনো আওয়ামী লীগের দোসর ছিলাম না। আমরা সব সময় জনগণের দোসর ছিলাম। তবে জাতীয় পার্টিকে সব সময় ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টি নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।’

জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল না বলেও দাবি করেন দলটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে দানব বানিয়েছি। কোনো দল যদি দানব হয়ে থাকে তাহলে তারা নিজেদের দোষেই দানব হয়েছে। আবার কোনো দল সুযোগ পেলে যে দানব হবে না তা কি বলা যায়। তা ছাড়া এখন যারা বড় বড় কথা বলছেন, তারা আওয়ামী লীগের আমলে কতজন কথা বলতে পেরেছেন? আওয়ামী লীগকে নিয়ে থা বলার পরে যদি আওয়ামী লীগ পরের দিন আপনাকে আবার সেই কথার উল্টা কথা বলতে বলত, না বলে পারতেন? আমরা আমাদের কথা বলে গেছি, আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলেছি। আমাদের বিরোধীদল করা হয়েছিল, আমরা ইচ্ছেমতো সরকারের সমালোচনা করতে পেরেছি।’

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। 

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মেহেরুন্নেসা খান হেনা পন্নী, মহিলা পার্টির নেতা ডা. সেলিনা খান, জেসমিন নূর প্রিয়াঙ্কা, তাসলিমা আক্তার রুনা, সীমানা আমির, ফরিদা সিকদার, মিথিলা রওয়াজাসহ আরও অনেকে।

জয়ন্ত সাহা/সালমান/