হিন্দু সম্প্রদায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের সাহায্যে আওয়ামী লীগ আবারও দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আবার একটা নতুন খেলা শুরু হয়েছে সংখ্যালঘু, কিন্তু এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই বাংলাদেশি। হিন্দু সম্প্রদায়কে ঢাল বানিয়ে আরেকটা কৌশল আবিষ্কার করে অরাজকতা তৈরির চক্রান্ত করছে আওয়ামী লীগ। দেশকে অস্থিতিশীল বা কিছু একটা করে ভারতের সহায়তায় ফিরে আসতে চায় তারা। এদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার ও নৈরাজ্য ঠেকাতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এ ছাড়াও বেলা ১১টা থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে, মালিবাগ, মৌচাক, শাহজাহানপুর, কাপ্তান বাজার এবং কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর বিএনপি যে মূল্য দিয়েছে, তা পৃথিবীতে বিরল। ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। শত শত নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, নির্যাতন-গুলিতে অনেককে পঙ্গু করে দিয়েছে। অনেক মা তার ছেলে হারিয়েছে, বোন তার ভাই হারিয়েছে, সন্তান তার পিতাকে হারিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহতাআলার বিচার বড় নির্মম। আল্লাহতাআলা চোখের সামনে দেখিয়ে দিলেন যে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। অহংকার, কী অহংকার! আল্লাহর কি হুকুম, তাকে পালিয়ে যেতে হলো সেই জায়গায়, যেখানে তার গোড়া পোঁতানো আছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, এটা তাদের চোখের সামনে দেখিয়ে দিয়েছে।
ছাত্রদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মাত্র দেড় মাসে ছাত্র ও জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে অভূতপূর্ব বিপ্লবে সরকার পতন হয়েছে। এক হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে গুলি করে মারা হয়েছে। ইতিহাসে এটি রক্তাক্ত জুলাইয়ের বিপ্লব। রংপুরের আবু সাইদ টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়েছেন। অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচন দেবে, তাতে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেবে বিএনপি। এই সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সহযোগিতা করার কথাও জানান তিনি।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের কথা তুলে ধরে ফখরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিরোধী ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার করতে হবে। যারা গণহত্যা চালিয়েছেন, লুণ্ঠন-নির্যাতন করেছেন, হত্যা করেছেন, টাকা পাচার করেছেন তাদেরকেও বিচার করতে হবে। যেসব সরকারি কর্মকর্তা স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হয়ে কাজ করেছেন, তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শেখ হাসিনা সালমান এফ রহমানকে প্লেনে নেয়নি। আমাদের নেত্রীকে আটক করা হয়েছিল, আমাদের কেউ পালিয়ে যায়নি। এটাই হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-নেত্রীদের মধ্যে পার্থক্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারা জীবন দেশের জন্য কাজ করেছেন। আন্দোলন কিন্তু শেষ হয়নি, নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, এক বুক রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করার দুঃসাহস দেখাবেন না। এ দেশের ছাত্র-জনতা খেলা দেখিয়ে দিয়েছে। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আর এই দেশে তাদের আসতে দেবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
শহিদ মিনারে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহিদ মিনারের এই কর্মসূচিতে, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাংলা কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতা-কর্মীরাও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলা আন্দোলন কর্মসূচিতে যেসব ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছেন, তাদের সঠিক বিচারের দাবিতে ও বিগত ১৫ বছরে ছাত্রদলের যেসব নেতা-কর্মী গুম ও খুন হয়েছেন, এসব গুম ও খুনের বিচারের দাবিতে আমরা শহিদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।’
শফিক/এমএ/