বাংলাদেশের আকাশ এখনো কালোমেঘ মুক্ত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলার আকাশে এখনো শকুন ঘোরাঘুরি করছে। তাই এটাকে চূড়ান্ত বিজয় ভাবা বা আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যেন এদেশে সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সুবিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে স্বাধীনতা বার বার অর্জন করতে পারলেও তার স্বাদ পাওয়া যাবে না। সমাজে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যবসায়িদের প্রতি আহ্বান জানান।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সুধী সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ঢাকা মহানগরী উত্তরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মু. সেলিম উদ্দিন, উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, সাইফ পাওয়ার টেকের পরিচালক এবিএম খায়রুজ্জামান, ইউনিটির চেয়ারম্যান আবুল বাশার, ডা. কর্ণেল (অব.) নিয়াজ খান, রিহ্যাবের পরিচালক ওবায়দুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ (অব.) অ্যাডভোকেট মো. মাহাবুল্লাহ প্রমুখ।
শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম আঘাত এনেছিল বিডিআর (বিজিবি) ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্যে দিয়ে। তাদের পরিবার সদস্যদেরও বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘটনার অপরাধীদের আজো চিহ্নিত করা হয়নি। বিদ্রোহের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও বিডিআর দুই বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ সরকার আঘাত দিয়েছিল জামায়াতের ওপর। ইসলাম ধর্মের জন্য যারা নির্যাতন সহ্য করে কাজ করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের আটকের পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। জামায়াতের এক এক করে শীর্ষ ১১ নেতাকে তারা হত্যা করেছে। এরপর সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সরকার রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে বিকল করে দিয়ে সাংবিধানিক ধ্বংস করে দিয়েছিল। একটা দল ছাড়া অন্য দলগুলোর অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। নেতকার্মীদের গুম-খুন ও নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেশে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন আ.লীগ।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেও সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি জামায়াত বলে মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, আওয়ামী লীগ চেয়েছিল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়বে। সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের সবোর্চ্চ শক্তি নিয়োগ করে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ব্যর্থতায় পরিণত হবে। আমরা তাদের সেই পরিকল্পনা বুঝতে পেরে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার সরকার। জনগণ তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে। বিগত সরকারের ধ্বংস করা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সময়ে মেরামত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। আমরা তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে প্রস্তুত।
ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। তারা এ জাতিকে উদ্ধার করেছেন। এবার নিজেদের গড়তে হবে। তোমাদের প্রতি অনুরোধ, নিজেদের গড়তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাও। আগামী দিনের কারিগর হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এটা তোমাদের শেষ আত্মত্যাগ নয়, এটা সবে শুরু। জীবনের শেষ পর্যন্ত কিছু দিয়ে যেতে পারো। অন্যদের সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে।
মহানগর উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন বলেন, দাবিদাওয়ার নামে যারা বিপ্লবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে, তারা পতিত স্বৈরাচারের দোসর। এই সরকার দাবি বাস্তবায়ন করার সরকার নয়। এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ভোটধিকার নিশ্চিত করবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসবে, আমরা সেই সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করবো। আপনারা তালিকা করে রাখুন আগামী দিনে নির্বাচিত সরকার সরকার জনগণের প্রতিটি দাবি বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, জামায়াত বিগত সময়ে বেশি হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু কোথায় দেখাতে পারবেন না আমরা কোনো প্রতিশোধ নিয়েছি। আগামী দিনেও গণতান্ত্রিক ধারায় আমার রাজনীতি করবো।
শফিকুল ইসলাম/এমএ/