বাংলাদেশ থেকে কোনো অপশক্তি ইসলামী মূল্যবোধ উপড়ে ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কবি, লেখক, শিল্পী, সংবাদিকদের বলা হয় জাতির জাগ্রত বিবেক। আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের নিজস্ব বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম চেতনা লালন করে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ফলে এদেশের মানুষের কাছ থেকে ইসলামী বিশ্বাসের চিন্তা ভুলিয়ে দেওয়া সহজ নয়।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক ঐক্য ফ্রন্ট আয়োজিত কবি, লেখক ও শিল্পী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কবি মোশাররফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য ফ্রন্টের সেক্রেটারি মাহবুব মুকুলের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও মুহা. কামাল হোসাইন প্রমুখ।
শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বাসের প্রকাশ হচ্ছে সংস্কৃতি। অতএব সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে বিশ্বাস নয় আবার আমার বিশ্বাসকে দূরে রেখে সংস্কৃতি নয়। যারা নিজস্ব বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ভুলে অন্যেরটা অনুসরণ করে তারা কোন সময় অগ্রসর হতে পারে না। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন জাতি হতে পারে না এবং তারা দেশ জাতিকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়। তাই আমাদের নিজস্ব বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও শিকড়কে আঁকড়ে ধরে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে আমাদের বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই আমাদের সংস্কৃতি আবর্তিত। বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের উম্মুক্ত আবাসভূমি। এখানে আমরা সবাই মিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরেও আমরা দেখেছি, কোন দুষ্টুচক্র যেন এ সম্প্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করেতে না পারে সেজন্য দেশের সব মন্দির, চার্চ, গির্জা গুলো মাদরাসার ছাত্ররা ও ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা দিন রাত পাহারা দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, কিছু দুস্কৃতিকারী অপরাধ সংঘটিত করে বৃহৎ গোষ্ঠীর ওপরে দোষ চাপিয়ে দিতে চায়, সেই সব সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় সংস্কৃতিকভাবে আমাদেরকে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে সবার অন্তরে স্থান করে নিতে হবে। সম্প্রতি আমরা সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সবাই মিলে সুখে শান্তিতে আমরা বাংলাদেশে বসবাস করতে চাই।
জামায়াতের আমির বলেন, ইসলামের শিকড় এদেশের মানুষের অনেক গভীরে মিশে আছে। বাংলাদেশের সবুজ জমিনে ইসলাম হাজার বছরের বটবৃক্ষ হয়ে অবস্থান করছে। ইচ্ছে করলেই কোনো অপশক্তি এটাকে উপড়ে ফেলতে পারবে না।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জনগণের বিশ্বাস ও বোধের আলোকে আমাদের সংস্কৃতিকে মেলে ধরতে হবে। নতুন বিজয় পরবর্তী এ সময়ে আমাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এদেশের কালচারাল অঙ্গনকে এমনভাবে সুসজ্জিত করতে হবে, যেন ছাত্র-জনতার এ বিজয়কে দীর্ঘস্থায়ী করে মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখা যায়। সামগ্রীকভাবে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয় বরং মানুষে চিন্তা চেতনাকে পরিশুদ্ধ করতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কবি মোশাররফ হোসেন খান বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়ে আমাদের দায়িত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধের আলোকে সাংস্কৃতিকভাবেও পূর্ণ বিজয় আমাদেরকে অর্জন করতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির সভাপতি আবেদুর রহমান, কিডস ক্রিয়েশনের সিইও বাচিক শিল্পী শরীফ বায়েজিদ মাহমুদ, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি জাকিউল হক জাকী, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের বেলাল, কবি ও সম্পাদক জাকির আবু জাফর, বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতজ্ঞ সালাউদ্দীন আহমেদ, চারু শিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহিম মন্ডল, কবি নাসির হেলাল, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহকারী সেক্রেটারি আল্লামা ইকবাল, এম এ তাওহিদ, আব্দুর রহমান, নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আফসার নিজাম, মহানগর শিল্পী গোষ্ঠীর পরিচালক আবু রায়হান সহ বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
শফিকুল ইসলাম/এমএ/