রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল দুর্বৃত্তদের নৃশংস হামলায় পা হারিয়েছিলেন। এবার তিনি গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে ওষুধ কিনতে গেলে তাকে গণপিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। বর্তমানে তিনি রাবির মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।
তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নগরীর মতিহার থানার বুধপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সদ্য জন্ম নেওয়া কন্যাসন্তানের জন্য দুধ ও স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন।
জানা যায়, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে যান। এ সময় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া একদল শিক্ষার্থী। পরে আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার ও পরে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাত ১২টার দিকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত ১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান ফিরোজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাতে মাসুদকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তার শরীরের কয়েক জায়গায় জখম ছিল। তার অবস্থাও ভালো ছিল না। তাকে দ্রুত ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’
এক দশক আগে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাবি জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এতে তার ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তার বাম পা মারাত্মক জখম হয়। তার হাতের রগও কেটে দেওয়া হয়েছিল। একটি ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা ওই হামলা চালিয়েছিল বলে ওই সময় তার পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর হামলায় প্রাণ গেল তার।
রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শনিবার মধ্যরাতে নগরীর বিনোদপুর বাজার এলাকায় আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনির শিকার হন। এরপর তাকে মতিহার থানায় সোপর্দ করা হয়। তবে ৫ আগস্টের ঘটনায় ওই থানায় কোনো মামলা না থাকায় তাকে বোয়ালিয়া থানায় নেওয়া হয়। কিন্তু গণপিটুনির ঘটনায় গুরুতর আহত ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। যেহেতু মতিহার থানা এলাকায় তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু ওই থানাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
এনায়েত করিম/ইসরাত চৈতী/অমিয়/