সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারে ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং আগামী নির্বাচনের পর ‘জাতীয় সরকার’ গঠনে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘৩১ দফা রূপরেখা প্রস্তুতি ও আন্দোলনে যেমন একসঙ্গে কাজ করেছি, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তা বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করব এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সবাই সহযোগিতা করব।’
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে তিনটি সমমনা দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আমীর খসরু এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনের বাংলাদেশের স্বপ্ন ও নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা পালানোর পর বাংলাদেশের জনগণের মনোজগতে ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের আগামীর করণীয় কি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি এবং আগামীতেও করব।’
আমীর খসরু বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে ধ্বংস প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক জায়গায় কীভাবে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মৌলিক সংস্কার শেষ করে নতুন নির্বাচনের প্রত্যাশা করি। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে তাদের নির্বাচিত সরকার ও সংসদের মাধ্যমে। তাই দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য লাখ লাখ মানুষের নামে মামলা হয়েছে। অনেকে গুম-খুন হয়েছে, বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই যারা নির্যাতনের শিকার হয়নি।’
বৈঠক শেষে গণ অধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজাম্মান বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করব। আগামী নির্বাচনের পর কী সংস্কার করতে চাই তা ৩১ দফায় আছে। জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’
বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়া। জাতীয় ঐক্যকে ধরে রেখে জাতীয় সরকার হতে হবে।’
এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আগে স্বৈরাচার সরকার পতনের বৈঠক ছিল, এবার আন্দোলনের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানোর বৈঠক হয়েছে। নতুন গণতন্ত্র মানুষের হাতে তুলে দিতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই মিলে ৩১ দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। নতুন সংস্কারের দরকার হলেও সেখানে লিপিবদ্ধ করে একসঙ্গে কাজ করব। আগামী নির্বাচনের আগে ও পরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটির এসব বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিটি সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সমন্নয়ক হারুন আল রশিদ খানের নেতৃত্বে ৪ সদস্য প্রতিনিধিদল প্রথম বৈঠকে অংশ নেয়। এরপর বিকেল সোয়া ৫টায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। সবশেষ সন্ধ্যা ৬টার দিকে গণ অধিকার পরিষদ একাংশ আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সদস্য সচিব ফারুক হাসানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়।