আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা চায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একইসঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের দাবিও জানায় সংগঠনটি। এজন্য দেশের সাতটি বিভাগে কর্মসূচি করবে তারা।
শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সুজনের নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাছে জনআকাঙ্ক্ষাভিত্তিক বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরতে ও ভোটার সচেতনতা এবং নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী।
এ সময় কমিটির আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান ও সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক দিলীপ সরকারও উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনকে কিছু সুপারিশ অগ্রাধিকার হিসেবে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সুজন।
এগুলো হলো, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন, উচ্চকক্ষের জন্য নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণ, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা ও উচ্চকক্ষকে পেশাভিত্তিক পার্লামেন্টে রূপ দেওয়া, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদের সংস্কার করা এবং সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের সংবিধানে পরিণত করা।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে এমনভাবে যেন যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং অন্যান্য দল তাতে সমর্থন দেবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন বাতিল করে নতুন করে আইন প্রণয়ন, সার্চ কমিটিতে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা, না-ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনসহ আরও বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কাছে সুজন আরও উল্লেখযোগ্য সুপারিশও করেছে। এগুলো হচ্ছে, পুলিশ ও জনপ্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণমুক্ত করে রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ করা, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সরকারি কর্মসূচিতে পরিণত না করা, দলীয় কর্মসূচিতে পুলিশ ও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা, বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বলয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে মুক্ত করা।
গণমাধ্যমের ওয়াচডগের ভূমিকা পালনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থী সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিলের সুপারিশও করা হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কাছে সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অবসান ঘটানো এবং শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কাছে শ্রমিকের সংজ্ঞায় কৃষিশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ আরও কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
মেহেদী/অমিয়/