বিএনপিকে বাদ দিয়ে আবারও চক্রান্ত করে কিছু করার চেষ্টা করতে যাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্রর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। একবার বিরাজনীতিকরণ মাইনাস টু করার খুব চেষ্টা করা হয়েছিল। আবারও ওই রাস্তায় (বিরাজনীতিকরণ) যাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করবেন না।
রবিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনীতিবিদরা নাকি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করছেন। আপনারা এই ধরণের কথা বলবেন, এটা আমরা আশা করি না। বাংলাদেশকে হাসিনামুক্ত করতে বিএনপি যুদ্ধ করেছে, নেতা-কর্মীরা প্রাণ দিয়েছে। এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য যুদ্ধ করছি। আমরা তো ক্ষমতা যেতেই চাই। নির্বাচন করব, ক্ষমতায় যাব। এটার জন্যই তো রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করে থাকেন।
তিনি বলেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন, শত প্রতিকুলতার মাঝেও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। গত ১৫ বছর বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ কিন্তু পারেনি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হামলা-মামলার কারণে নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেনি। জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছেন, কারাগারে গেছেন- এই ত্যাগ উপেক্ষা করা যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যত দেরি হবে ততই স্বৈরাচার হাসিনা ফিরে আসবে। দেশে সংকট সৃষ্টি হবে। অতিদ্রুত জঞ্জাল পরিষ্কার করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। আমরা সহযোহিতা করেছি, আপনারাও সহযোগিতা করুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো ভয়াবহ দানবের হাত থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। বুকের ওপর থেকে পাথর চলে গেছে। দানবীয় পাথর গেলেও কোথায় যেন আটকে আছি। এখনো জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাতা করতে পারেনি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫-১৬ বছরের আওয়ামী লীগ দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, প্রতিবছর ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি মানুষের নৈতিক ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যেখানেই যান সেখানেই চোর, আওয়ামী লীগের চোর।
সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জীবনের স্মতিচারণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খোকা ভাই ছিলেন একজন লিজেন্ড। শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সব দলের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ঢাকা শহরের সব সড়কের নামগুলো বিশিষ্ট মানুষের নামে করে দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। শেখ হাসিনাও খোকা ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। আমি তাকে কখনো উত্তেজিত হতে দেখেনি, অত্যন্ত ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। যখন কোনো সংকটে পড়তাম, তখন খোকা ভাইয়ের অভাববোধ করেছি। তার মৃত্যু আমাদের পাহাড়ের মতো ভারি হয়েছিল।
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের যুগ। যখন আব্বাস ও খোকা ভাই ছিলেন তখন ঢাকা শহর কাঁপতো। তোমাদেরও কাঁপাতে হবে। আমরা এমন কিছু করে যাবে না যাতে কেউ যেন দলের বিরুদ্ধে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজুন সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম/এমএ/