মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)।
আগামী ১৭ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।
রবিবার (৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যাবে, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতার স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন মনের গহনে। ভাসানী আর স্বাধীন বাংলাদেশ বাঙালি চেতনার এক অভিন্ন নাম। রাষ্ট্রের সব অর্জনের কৃতিত্ব কোনো এক ব্যক্তি বা দলের নয়। বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাসীনদের সব কৃতিত্ব দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় সব সময়েই। ফলে বার বার ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা ভাসানীকে বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস নির্মিত হবে না।’
তারা বলেন, ‘ভাসানী জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশ, মাটি আর মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। একটি শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, সাম্য আর পালনবাদী সমাজব্যবস্থার জন্য নিজের জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। মানব মুক্তির আদর্শ থেকে তিনি একদিনের জন্যও বিচ্যুত হননি বা অবসর খোঁজেননি। জীবনের প্রায় প্রতিটি বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন তিনি আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মসূচির মধ্যেই থেকেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এত দীর্ঘকাল ও ধারাবাহিকভাবে কেউ সক্রিয় আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মসূচির ভেতর থেকেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা নেই বললেই চলে।’
ন্যাপ নেতারা বলেন, ‘বিগত দিনের সকল ক্ষমতাসীনরাই নিজেদের প্রয়োজনে মওলানা ভাসানীকে ব্যাবহার করলেও তাকে তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করেছেন বার বার। ভাসানীকে তার প্রাপ্ত মর্যাদা দিতে ব্যর্থ কাউকেই ইতিহাস ক্ষমা করবে না। বর্তমান সরকারও ভাসানীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
তারা বলেন, ‘আজীবন সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সমগ্র জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন চিরবিপ্লবী ও বিদ্রোহী মওলানা ভাসানী। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, পাকিস্তানের শোষন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতাপরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ভারতীয় আধিপত্যবাদী-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম, প্রবীণ বয়সে ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা লংমার্চসহ ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে তিনি আছেন।’
নেতৃদ্বয় আরও বলেন. ‘মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীসহ দেশের জাতীয় নেতাদের স্মরণ করা, নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয় কি? সেই দায়িত্ব কি রাষ্ট্র বা সরকার যথাযথভাবে পালন করছে? কেন মওলানার জন্ম ও মৃত্যুদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলো না গত ৪৮ বছরেও? মওলানা ভাসানীর প্রতি রাষ্ট্রের এত দৈন্যতা, কৃপণতা, বিদ্বেষ কেন? রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে স্মরণ করার বাঁধা কোথায়? আজ সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমরা আশা করতেই পারি গণআন্দোলন আর গণঅভুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সব বাঁধা অতিক্রম করে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করে জাতিকে দায়মুক্ত করবেন।’
তারা বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস, সাক্ষী আমরা ভুলে যাই সব কিছু। আমাদের এই বিস্মরণই আমাদের বড় শত্রু। আমরা স্বার্থপর। তাই কি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের পতাকাটির চেহারা বিস্মৃত? কে আমাদের রাজনীতিকে গণমানুষের বলে চিহ্নিত করেছিলেন? গণমানুষের অধিকার কায়েমের সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন কে? সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া যে দেশের স্বাধীনতা আনা সম্ভব নয়- এই সত্যকে আমাদের শিখিয়েছিলেন? ১৯৭১ সালে বৃদ্ধ বয়সেও তিনি মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতার জন্য, আজকে তিনি জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে প্রায় অচেনা, অজানা মানুষ।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘সময়ের দাবি আজ জাতির নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে। তার রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে তা জানাতে হবে নবাগত মানুষদের, যারা আমাদের জাতি বিনির্মাণের শক্তি। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে স্মরণ করার আয়োজন হোক ১৭ নভেম্বর থেকেই, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বেই। তার মৃত্যু দিনটিকে জাতির রাজনীতিকদের স্মরণ দিন হিসেবে ঘোষণা করা হোক।’
অমিয়/