বরিশাল মহানগর বিএনপির ৪২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গত সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই কমিটিতে বিএনপির দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও জ্যেষ্ঠ নেতারা স্থান পাননি। এর আগে আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সেই বিতর্ক আরও বেড়েছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ পথ চলা নেতাদের অভিযোগ, নতুন কমিটিতে অনেক নিষ্ক্রিয় নেতা ঠাঁই পেয়েছেন। আন্দোলনের কঠিন সময়ে মাঠে না থাকা নেতাদের নাম থাকায় ক্ষুব্ধ অনেকে। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও পদবঞ্চিত অনেক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিএনপির মধ্যে অনৈক্যের বিষয়টি আবারও সামনে এল। তবে বিএনপির নতুন নেতৃত্ব বলেছে, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকে যারা হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছেন তাদের নিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছে। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কোনো কথা নেই। কমিটি গঠন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে লাভ হবে না।
সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারকে বাদ দিয়ে ২০২২ সালের ১১ মার্চ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে সেই সময়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মহানগরের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ারের অনুসারীরা থাকায় ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করে। ফলে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সরোয়ার ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এ ছাড়া নানা অভিযোগের কারণে মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে চলতি বছরে জুলাই মাসে তিন সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এবং জিয়াউদ্দিন সিকদারকে সদস্যসচিব করা হয়।
তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে থেকেই ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক নাসরিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন দলের কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নাসরিনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তারা। এদিকে ৫ আগস্টের পর কমিটি গঠন নিয়ে জোর দাবি উঠে বিএনপির মধ্য থেকে।
অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্র থেকেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দাখিলের চাপ আসে তিন সদস্যের কমিটির ওপর। তাই তারা তড়িঘড়ি করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৪২ সদস্যের কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়। জমা দেওয়া কমিটিতে বাদ পড়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক (স্থগিত) বিলিকিস জাহান শিরিনের অনুসারীরা। সেই সঙ্গে দলের হেভিওয়েট নেতাদের নামও বাদ পড়ে।
মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ‘কমিটি হওয়া উচিত সবার সমন্বয়ে। এখানে আন্দোলনে সক্রিয়রা যেমন থাকবে তেমনি অভিজ্ঞদের বাদ দেওয়ারও সুযোগ নেই। বরিশালে যা দেখছি সব ওলটপালট। সবাই পকেটের লোক দিয়ে দল চালানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে। এভাবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা যাবে না।’
মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে এম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি নিয়েই তো অভিযোগ রয়েছে আমাদের। এমন একজনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে যিনি রাজনীতিতে অনেক জুনিয়র। তার নিচে গিয়ে রাজনীতি করা আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।’
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি হয়েছে। কে হেভিওয়েট, কে সিনিয়র-জুনিয়র সেটাতো জরুরি নয়। আন্দোলন-সংগ্রামে কার কী ভূমিকা সেটাই আমরা বিবেচনায় রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা সিনিয়র-জুনিয়র বলে ঢেকুর তুলছেন তারা কোনো আন্দোলনে ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয়নি। এমনকি নির্যাতনও সহ্য করতে হয়নি। এখন পদ-পদবি না পেয়ে দলের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।’
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘হাজার সদস্যের কমিটি হলেও কিন্তু অভিযোগ থাকবে। বিএনপির মতো একটি বড় দলে অনেকেরই নেতা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। তাছাড়া এটা তো আহ্বায়ক কমিটি, পূর্ণাঙ্গ নয়। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুসরণ করছি। আন্দোলন সংগ্রামে কার কী ভূমিকা তা গুরুত্ব পেয়েছে।’
মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি আকারে ছোট হয়। এখানে সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে আর সমস্যা থাকবে না। তবে কমিটিতে অযোগ্য কিংবা নিষ্ক্রিয় কাউকে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।’