অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে রাজনৈতিক দলসমুহের যৌথ সভায় ভারতে বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম ও জাতীয় পরিষদ সদস্য মুঈনুদ্দীন আহমেদ ।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমুহের যৌথ সভায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন তারা।
সভায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম নিম্নলিখিত বক্তব্য থেকে মূল অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির হামলার ঘটনা ও তার পূর্বে কলকাতায় বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট আমরা নিম্নলিখিত বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
ক। ভারত সরকারকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। এখনো পর্যন্ত ভারত সরকার মুখে এক কথা বলছে বাস্তবে অন্য কাজ করছে।
খ। ছাত্র, শ্রমিক, জনতার গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট বেঈমান শেখ হাসিনা জুলাই অভ্যুত্থানে উচ্ছেদ হয়ে গিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের কোন দেশ এই পতিত ফ্যাসিস্ট বেঈমান শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দিলেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। ভারতে বসে বেঈমান শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টে তৎপরতা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারকে দাবী করতে হবে যে, ভারত সরকারকে অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বের করে দিতে হবে। আমরা মনে করি এই একটা ইস্যুই বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
গ। বাংলাদেশের হিন্দুরা বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ যেমন মুসলমানদের হেফাজত করছে তেমনি হিন্দুসহ অপরাপর ধর্মাবলম্বীদের হেফাজত করছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতের নাগরিক নন। সুতরাং এ নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।
ঘ। বিশ্ববাসী জানে ভারতে সাম্প্রদায়িকতা কোন পর্যায়ে বিরাজ করছে। সেখানে প্রতিবছর মুসলিম, খৃষ্টান, আদিবাসী, দলিত জনগণের উপর কি বর্বরোচিত হত্যা, হামলা, নির্যাতন করা হয়। গুজরাটের গণহত্যা তার এক উদাহরণ। ভারতের মুসলমানরা ভারতকে নিজেদের দেশ মনে করে।
ঙ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে আমরা বলতে চাই, ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির জন্য ভারতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো দরকার।
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী বেঈমান শেখ হাসিনা উচ্ছেদের পর ভারত ও পতিত ফ্যাসিস্ট বেঈমান হাসিনার দোসর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একশ্রেণীর মতলববাজ হিন্দু নেতাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ভারতের গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করা।
কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে পরিকল্পিতভাবে সহিংস হামলা ও জাতীয় পতাকার অবমাননা বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বর উপর হামলা।
আমরা তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানাই :
১। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত হাসিনা-মনমোহন চুক্তি ২০১০, হাসিনা-মোদী চুক্তি ২০১৫, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সামরিক চুক্তি ২০১৭ সহ সকল অসম ও অধীনতামূলক চুক্তি প্রকাশ করতে হবে ও বাতিল করতে হবে।
২। ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধ সহ অভিন্ন আন্তর্জাতিক ৫৪ টি নদীতে ভারত কর্তৃক একতরফা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়ে চলেছে, যে মরুকরণ প্রক্রিয়া চলছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে ভারতকে বাধ্য করতে হবে পানি আগ্রাসান নীতি থেকে সরে আসতে।
৩। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করতে হবে।
৪। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত রাষ্ট্রের আগ্রাসন নীতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে।
৫। সরকারকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক অধিকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা গেলে কোনো বৈদেশিক শক্তিই আমাদের জনগণের বৃহত্তর ঐক্যকে বিনষ্ট করতে সফল হবে না।
মেহেদী/এমএ/