দেশের মূল ইতিহাস একাত্তর থেকে জাতিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার আরেকটা ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একাত্তরে শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহিদ জিয়াউর রহমানসহ বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, একাত্তর আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এখন একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একাত্তর একটু পেছনে রাখা। যেমন ‘৪৭ সালে দেশভাগকে অনেকে বলেন যে, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা মনে করি, এটা ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র। এ বিষয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। শনিবার বুদ্দিজীবী দিবসের সকাল ১১টায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই স্বাধীন বাংলাদেশ, আজকে ইতিহাস নিয়ে এসে আমরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেই ইতিহাস যেন বিকৃত না করি। গত ১৫ বছর ধরে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। ঠিক তেমনি করে এখন যাতে ইতিহাস বিকৃত না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপিকে কাজ করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেকে মনে করছেন যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে, কাজ শেষ হয়ে গেছে? না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা একটা গণতান্ত্রিক কালচারে পরিণত না করতে পারব ততদিন কাজ করে যেতে হবে। একটি উপযোগী রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে, গণতন্ত্রের একজন কর্মী হিসেবে, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য নেতা-কর্মীদের শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আওয়ামী লীগ করলে তাকে গলা কেটে ফেলো আর বিএনপি করলে তার মুণ্ড ছেদ করো। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার- এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সময়টা সবচেয়ে কঠিন সময়। আপনার একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয়, আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিক পা দিতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে-এই দিবসগুলো আপনারা অবহেলা করবেন না, জানার চেষ্টা করবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করছে- তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আপনাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আমরা হাজার বার বলেছি, এই সরকার হওয়া ব্যর্থ হওয়া মানে জনগন ব্যর্থ হয়ে যাবে, আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো। এসময় ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের মানুষ চায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের জন্য খারাপ, জনগণের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে নির্বাচনকে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘পাকিস্তান যখন আর আমাদের কন্ট্রোল করতে পারছিল না, তখন তারা ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়। ২৪-এ বিজয়ের আগে ইন্টেলেকচুয়াল উদীয়মান তরুণদের হত্যা করে পালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা। এদের দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে।’
প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম/মাহফুজ/এমএ/